×

স্বাস্থ্য

করোনার নতুন ধরনে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, প্রয়োজন সতর্কতার

Icon

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৫ জুন ২০২৫, ০৬:৪৭ পিএম

করোনার নতুন ধরনে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, প্রয়োজন সতর্কতার

ছবি: সংগৃহীত

দেড় বছর পর আবার করোনায় সম্প্রতি তিনজনের মৃত্যুতে বাংলাদেশের মানুষের মাঝে বেড়েছে কিছুটা উদ্বেগ। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সংক্রমণ বৃদ্ধি পেলেও এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সবাইকে শুধু একটু সচেতন থাকতে হবে।

২০২৫ সালের ৫ জুন রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে প্রবীণ এক ব্যক্তি, ১৩ জুন রাজধানী ঢাকায় একজন এবং চট্টগ্রামে একজন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এই তিনজনের মৃত্যুর পর নড়েচড়ে বসেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। জারি করা হয়েছে ১১টি নির্দেশনা।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, করোনার নতুন দুটো সাব-ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে দুশ্চিন্তার কিছু নেই। সতর্ক থাকতে হবে। স্বাস্থ্যবিধি না মানলে তা দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এক্ষেত্রে যারা বয়স্ক, শারীরিকভাবে দুর্বল কিংবা আগে থেকে জটিল রোগে আক্রান্ত তাদের স্বাস্থ্যবিধি মানাটা জরুরি। কেননা তাদের জন্য এই ভ্যারিয়েন্ট মারাত্মক হতে পারে।

আন্তর্জাতিক উদরাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআরবি)’র তথ্যমতে, চলতি বছর সংক্রমণ বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো করোনার নতুন দুটো সাব-ভ্যারিয়েন্ট এক্সএফজি এবং এক্সএফসি। যেগুলো ওমিক্রন জেএন. ১-এর একটি উপ-শাখা। সম্প্রতি যেসব নমুনা পাওয়া গেছে, তার প্রায় সবগুলোতে এক্সএফজি ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। এই ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, এখন পর্যন্ত দুটি সাব-ভ্যারিয়েন্ট দ্বারা করোনা সংক্রমণের যে হার, তাতে উদ্বেগের কিছু নেই। অনেকদিন ধরে কোভিডের কোনো রোগী ছিল না। ফলে আমাদের হাসপাতালগুলোতে তেমন কোনো প্রস্তুতি রাখা হয়নি। এখন যেহেতু অল্প পরিমাণে সংক্রমিত রোগী পাওয়া যাচ্ছে। ফলে আমরা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ও কুর্মিটোলা হাসপাতালকে প্রস্তুত করেছি। আপাতত ৫০ শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। বেশি শয্যা প্রস্তুত করে কি করবো হাসপাতালে তেমন রোগীর চাপ নেই।

তিনি বলেন, করোনার সংক্রমণ বাড়ায় নতুন করে পরীক্ষা শুরু করা হয়েছে। প্রাথমিকভাবে সব রোগীদের করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন নেই। শুধুমাত্র যাদের জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট বা অন্যান্য উপসর্গ রয়েছে এবং যারা জটিল অবস্থায় রয়েছে, তারাই করোনা পরীক্ষা করাবেন।

ভ্যাকসিন প্রদান কার্যক্রম চলমান রয়েছে জানিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বলেন, যাদের কখনোই ভ্যাকসিন দেয়া হয়নি তাদের অবশ্যই ভ্যাকসিন নিতে হবে। বিশেষ করে ১৮ বছরের উপরে যারা, বিভিন্ন ব্যক্তিদের সঙ্গে কাজ করেন, অন্তঃসত্ত্বা নারী তাদের ভ্যাকসিন দিতে হবে। আর পুরাতনদের মধ্যে ৬০ বছরের বেশি বয়সীদের ভ্যাকসিন দেয়া জরুরি।

তিনি বলেন, আশপাশের অন্যান্য দেশের তুলনায় বাংলাদেশে সংক্রমণের হার কম। যেহেতু পাশের দেশগুলোয় কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, তাই সরকারের দায়িত্ব হিসেবে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জনসচেতনতা বৃদ্ধিতে কাজ করছে। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।

জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও আইসিডিডিআরবির উপদেষ্টা ডা. মুশতাক আহমেদ বলেন, শুধু বাংলাদেশই নয়, থাইল্যান্ড, চীন ও ভারতেও করোনার কিছু নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে। যেগুলো দ্রুত সংক্রমিত করতে পারে। তবে বর্তমানে দেখা দেওয়া উপধরনগুলো আগের মতো প্রাণঘাতী নয়। সাধারণ জ্বর, সর্দি বা মৌসুমি ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাসের মতো। রোগীদের হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে না। তাই ভাইরাস বহনকারী ব্যক্তিরা এখন আর পরীক্ষা করছেন না। কিন্তু এখন থেকেই স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালনে গুরুত্ব না দিলে এটি আরও বাড়তে পারে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশীদ জানান, প্রাথমিকভাবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট ও ময়মনসিংহসহ বিভাগীয় শহরের হাসপাতালগুলোতে করোনা পরীক্ষা চালু হয়েছে। যেসব হাসপাতালে আরটি-পিসিআর ল্যাব রয়েছে, শুধু সেখানেই শুরুতে এই সুবিধা মিলবে।

তিনি জানান, স্থানীয় কোম্পানিগুলো থেকে পরীক্ষার কিট সংগ্রহ করা হচ্ছে। পাশাপাশি বিদেশ থেকেও কিট আমদানির জন্য সেন্ট্রাল মেডিকেল স্টোরস ডিপোকে (সিএমএসডি) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যাদের উপসর্গ থাকবে, তারাই পরীক্ষার সুযোগ পাবেন। সংক্রমণের হার যদি আরও বাড়ে, তাহলে পরীক্ষার পরিধিও বাড়ানো হবে।

জনগণকে মাস্ক পরা, হাত ধোয়া এবং উপসর্গ দেখা দিলে ঘরে থাকার আহ্বান জানিয়ে অধ্যাপক ডা. হালিমুর রশীদ বলেন, আমরা চাই না পরিস্থিতি আবার হাতের বাইরে চলে যাক। তাই সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।

হাসপাতালগুলোতে আলাদা করে কোভিড শয্যা প্রস্তুত করা হয়েছে জানিয়ে অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার পরিচালক ডা. মো. মঈনুল আহসান বলেন, দেশের সব হাসপাতালে সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। রাজধানীর মহাখালীর উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) ডেডিকেটেড কোভিড-১৯ হাসপাতালে সাধারণ ৫০ শয্যা এবং আইসিইউর ১৫ শয্যা শুধু করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারণ করা হয়েছে। এছাড়া রাজধানীর মুগদা ও কুর্মিটোলা হাসপাতালে পৃথক শয্যার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনা রোগীর জন্য খুলনা, ময়মনসিংহ, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পৃথক ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে প্রস্তুতি আরও জোরদার করা হবে।

তিনি বলেন, প্রতিবেশী দেশ ভারতে করোনাভাইরাসের নতুন ধরনের সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তের স্থল ও নৌবন্দরগুলোর পাশাপাশি সবকটি বিমানবন্দরে স্ক্রিনিং বা স্বাস্থ্য পরীক্ষা জোরদার করা হয়েছে। ভারতসহ যেসব দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বেড়েছে, ওই সব দেশে ভ্রমণের ব্যাপারে সতর্কবার্তা দিয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। প্রয়োজন ছাড়া ওইসব দেশে ভ্রমণ না করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

এছাড়া সংক্রমণ প্রতিরোধে জনসাধারণের করনীয়তে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তরফ থেকে দেয়া হয়েছে ১১ নির্দেশনাও। তাছাড়া প্রয়োজন হলে নিকটস্থ হাসপাতালে অথবা আইইডিসিআর (০১৪০১-১৯৬২৯৩) অথবা স্বাস্থ্য বাতায়ন (১৬২৬৩) নাম্বারে যোগাযোগ করতে বলা হয়েছে।

স্বাস্থ্য বাতায়নের ১৬২৬৩ নম্বরে করোনা বিষয়ক কলের সংখ্যা হঠাৎ করেই বেড়েছে। এ নম্বরে ফোন করে স্বাস্থ্যসংক্রান্ত যেকোনো পরামর্শ পাওয়া যায়। স্বাস্থ্য বাতায়নের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. নিজাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, করোনায় মৃত্যুর ঘটনার পর থেকেই আমরা এ-সংক্রান্ত কল বেশি করে পাচ্ছি। যেটা আগে ছিল না। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরও করোনা বৃদ্ধির কথা বলছে। বিশেষ করে ভারতে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় অনেকের মধ্যে এ সংক্রান্ত পরামর্শ নিতে দেখা যাচ্ছে।

সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির (ইপিআই) প্রোগ্রাম ম্যানেজার এ এফ এম শাহাবুদ্দিন খান বলেন, আমাদের হাতে এখন ৩২ লাখ ফাইজারের তৈরি করোনার টিকা আছে। এর মধ্যে গত দুই মাসে ১৭ লাখ ১৬ হাজার ৯০০ ডোজ ফাইজারের টিকা সব জেলায় পাঠানো হয়েছে, যার মেয়াদ শেষ হবে ৬ আগস্ট। এর বাইরে আছে আরও ১৫ লাখ টিকা।

২০২০ সালের ৮ মার্চ বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় এবং ১৮ মার্চ প্রথম মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। এরপর ২০২৫ সালের ১৪ জুন পর্যন্ত দেশে মোট ২০ লাখ ৫১ হাজার ৮০৭ জন আক্রান্ত হয়েছেন, মৃত্যু হয়েছে ২৯ হাজার ৫০২ জনের। চলতি বছরে ১৪ জুন পর্যন্ত  তিনজন করোনায় মারা গেছেন। ২০২৪ সালে কেউ মারা না গেলেও ২০২৩ সালে ৩৭ জন এবং ২০২২ সালে ১ হাজার ৩৬৮ জনের মৃত্যু হয়েছিল।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

তোপের মুখে ‘বিরিয়ানি হাউস’ উদ্বোধন না করেই ফিরলেন প্রিন্স মামুন

তোপের মুখে ‘বিরিয়ানি হাউস’ উদ্বোধন না করেই ফিরলেন প্রিন্স মামুন

‘কৃষ ৪’ এ তিন চরিত্রে হৃতিক, উন্মাদনা তুঙ্গে

‘কৃষ ৪’ এ তিন চরিত্রে হৃতিক, উন্মাদনা তুঙ্গে

মেসি-রোনালদো নন, ট্রাম্পের চোখে সর্বকালের সেরা কে?

মেসি-রোনালদো নন, ট্রাম্পের চোখে সর্বকালের সেরা কে?

ইনফ্লুয়েঞ্জা: কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

ইনফ্লুয়েঞ্জা: কারণ, লক্ষণ, রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App