×

শিক্ষা

সাংবাদিক সারওয়ার বাবরের থ্রিলার উপন্যাস এবারের বই মেলায়

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৯:১২ পিএম

সাংবাদিক সারওয়ার বাবরের থ্রিলার উপন্যাস এবারের বই মেলায়

ছবি: সংগৃহীত

   

মনের মানুষকে যে কথা বলতে চেয়েও বলা হয় না, সেটি তো একপ্রকার আর্তিই। যেখানে নিজের গোপন ইচ্ছের সাজানো বাগানটিই বর্ণিত হতে পারতো। সেটি যখন মনের বালুচরে হারিয়ে যায় তখন তার চাইতে বেদনা আর কীইবা হতে পারে ! সারওয়ার বাবর চৌধুরীর লেখা ‘যেকারণে খুনটা হয়েছিল’ উপন্যাসে যেন সেই রকমই একটি সাজানো বাগানের গোপন আর্তিকে অন্যবদ্য লিখন শৈলীতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। 

মূলত: বইটি একটি থ্রিলার উপন্যাস। এমন একটি উপন্যাসে একটি নির্মম খুনের ঘটনা এবং এর রহস্য উদঘাটন নিয়েই পুরো কাহিনী আবর্তিত হবে, এটিই স্বাভাবিক। কিন্তু গতানুগতিক থ্রিলারগুলোতে যা সচরাচর দেখতে পাওয়া যায় না, এই বইটিতে সেই রকম কিছু বিষয় খুব সুনিপুণ ভঙ্গিমায় সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন লেখক। এখানে খুন হন শহরের একজন ডাকসাইটে শিল্পপতি। অঢেল সয়-সম্পত্তির মালিক এই শিল্পপতির ব্যক্তিচরিত্রের মন্দ আখ্যান দেখা যায় উপন্যাসে।

নিজের জীবিত তিন স্ত্রী সত্ত্বেও বাড়িতে সুন্দরী পরিচারিকা বা কাজের মেয়ে রাখা এবং যথারীতি এদের ভোগ করা তার চরিত্রের একটি বৈশিষ্ট্য। শুধু তিনিই নন,অজ্ঞাতে এই কাজে অংশীজন হতেন তারই বড় স্ত্রীর বড় ছেলে-প্রিতম। বাবার দুশ্চরিত্রের কাছে নিজের দুশ্চরিত্রটি আরও এক কাঠি সরেস হতে দেখা যায়, যখন দেখা যায়, সে বাবার সর্বশেষ বিয়ে করা অনিন্দ্য সুন্দরী স্ত্রী তনুজার দেহসৌষ্ঠবে লালায়িত হয়ে পড়ছে।

তনুজার সেই দেহসৌষ্ঠব তাকে এমনই কাবু করে যে, এর জন্যে তাকে বাবার সঙ্গে চরম এক বোঝাপড়ার সিদ্ধান্তে যেতেও কুন্ঠিত হতে দেখা যায় না। গল্পটির এখানে পাঠককূল তথা সমাজের উদ্দেশ্যে লেখককে একটি চমকপ্রদ অমোঘ বাণী দিতে দেখা যায়। কাম বা যৌন লিপ্সা মানুষকে হীতাহিতজ্ঞানশূণ্য করে তোলে। আবার একজন অপরাধীর মধ্যেও কখনো কখনো অপ্রস্তত হওয়ার মতো লজ্জাবোধ কাজ করতে পারে।

অন্যদিকে নিজের দ্বিগুণেরও বেশি বয়সের স্বামী-শিল্পপতি আমিনুল ইসলামের সঙ্গে বিবাহিত জীবন এবং এই স্বামীরই খুনের ঘটনা কিশোরী তনুজার জীবনে ‘সাপে বর’ হওয়ার চমৎকার এক মুন্সিয়ানা দেখা যায় উপন্যাসটিতে। দারিদ্রতার কাছে সমাজের কোনো কোনো বাবা-মা কীভাবে নিজের সুস্থ বিবেচনাকে বিকিয়ে দিতে বাধ্য হন, সেটি নিরুপিত হয়েছে শিল্পপতি আমিনুল ইসলামের সঙ্গে তনুজার বিয়ের নেপথ্য কারণ বর্ণনায়।

খুনের ঘটনা তদন্তে দেশজোড়া খ্যাতির শীর্ষে থাকা তরুণ, সুদর্শন এক গোয়েন্দার দেখা মেলে সুন্দরী তনুজার। ঘটনা এখানে মোড় নেয়,অন্য আরেক মোহনার বাঁকে। যৌন স্বাদ পূরণে অক্ষম বয়স্ক স্বামীর খপ্পরে থাকা কিশোরী তনুজার চোখে ঝিলিক মারে, ধু ধু নদীর বুকে নতুন চরের আনন্দ! নিজ দেহের প্রতিটি খাঁজে জমে থাকা যৌন ক্ষুধার তীব্রতার সঙ্গে যোগ হয়, কিশোরী প্রেমের আকুল আর্তি ! অন্যদিকে তরুণ সুদর্শন গোয়েন্দা অবিবাহিত এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের। তার চোখে তনুজা হয়ে দাঁড়ায় একদিকে সাক্ষাৎ দেবী পাওয়ার সুবর্ণ সুযোগ অন্যদিকে কঠিন দায়বদ্ধতার ঘেরাটোপ।

উপন্যসের এই জায়গাটিতে এসে লেখক শুধু উপন্যাসের হিন্দু নায়ক এবং মুসলিম নায়িকাই নির্ধারণ করে ক্ষান্ত হননি, একইসঙ্গে এদের মধ্যকার পারস্পরিক আকর্ষণ এবং প্রেমবন্ধনকে খুব কৌশলে অশান্ত সাম্প্রদায়িক সমাজের জন্য সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য প্রস্তাবনা হিসেবেও প্রতিষ্ঠিত করেছেন। সারওয়ার বাবর চৌধুরীর এটি ৬ষ্ঠতম উপন্যাস। এর আগেও তার আরও ৫টি উপন্যাস প্রকাশ পায়। নিজের কিশোর বয়স থেকে পরিণত বয়স লাভ করার ঠিক আগ মুহুর্তে তিনি লিখে ফেলেন সেসব বই। তার লেখা ‘দূরের ধ্রুবতারা’ উপন্যাসটি পাঠক সমাজে তাকে লেখক হিসেবে ঢের বেশি জনপ্রিয়তা পাইয়ে দেয়।

কিন্তু বিস্ময়কর বিষয়টি হচ্ছে, সেই লেখাটি তার ক্লাস নাইনে থাকা বয়সের লেখা একটি উপন্যাস। এরপর তিনি পড়াশোনা লাইফেই লিখেন আরও চারটি উপন্যাস। সেগুলো হচ্ছে, ‘রংবাজ’, ‘মিছে ক্যানো জড়ালে’, ‘নিথর জলে বুকে’ এবং ‘হৃদয় মরুভূমি’। লেখক হিসেবে সারওয়ার বাবর চৌধুরী ততটা পরিচিতি লাভ করেননি। যতটা পরিচিতি তার জন্য প্রাপ্য ছিল। নব্বই দশকে উপন্যাস লেখা ও ছাপানোর পর থেকে তিনি গল্প উপন্যাস জগতের বাইরের মানুষ হয়ে থাকেন। জীবন জীবিকার নানা বাস্তবতা তাকে এরকম লেখার প্রতি মনোযোগী হওয়ার সুযোগ দেয়নি।

সাংবাদিকতা পেশায় থেকে উপন্যাস লেখার সুযোগও সেভাবে থাকে না। লিখছিলেন নিজের ফেসবুকে, টাইমলাইনে। ছোট গল্প, উপন্যাস, কবিতা এমনকি নানান মন্তব্য পোস্ট। সবকিছুতেই নিজের অনন্য লেখনি শৈলীর প্রমাণ রাখছিলেন। পাঠক হৃদয়ে বাড়িয়ে তুলছিলেন নিজের লেখক হিসেবে ফিরে আসার গ্রহণযোগ্যতার দাবি। তার লেখায় অনুষঙ্গ বেশিরভাগই ‘প্রেম ’ থাকলেও রাজনীতি, সমাজ এবং অর্থনীতির পর্যালোচনা, বিশ্লেষণও একটি বড় আকার ধারণ করে থাকে। লেখার মধ্যে রম্যরচনার গন্ধই বেশি প্রস্ফুটিত হয়। সূক্ষ্ম রসবোধ বা হিউমারের মিশেলে সমাজের বাঁকা দিকগুলোর চমৎকার ছবি আঁকতে ভালোবাসেন যেন নিজের শক্তিশালী লেখনীর ক্যানভাসে।

‘যেকারণে খুনটা হয়েছিল’ উপন্যাসটিতে খুনের রহস্য উদঘাটনের দারুণ উত্তেজনা, আনন্দ রয়েছে। রয়েছে, এক দুর্নিবার প্রেমের কান্না। আরো রয়েছে সমাজের নানান অসঙ্গতির সূক্ষ্ম বিশ্লেষণ-এ যেন লেখকের লেখনীর চিরাচরিত দায়। সবচেয়ে বড় কথা, দীর্ঘ ৩৫ বছরের বিরতির পর, লেখক সারওয়ার বাবর চৌধুরীর লেখা আগের যেকোনো সময়ের চাইতে আরো পরিণত, ক্ষুরধার এবং সুপাঠ্য হবে। এটি নিরপেক্ষতার বিচারে অস্বীকার করবার কোনো উপায় নেই।

ছোট, বড় যেকোনো বয়সী পাঠক এক নিঃশ্বাসে পড়ে শেষ করতে পছন্দ করবেন তার যেকোনো লেখাই। তবে এ বইটির সঙ্গে পাঠক তার আরো একটি থ্রিলার উপন্যাস বাড়তি পাওনা হিসেবে বুঝে পাবেন। ‘আপন আততায়ী’ নামের এই উপন্যাসেও রয়েছে পাঠকদের জন্য নানান চমক। সেখানেও মূল প্রতিপাদ্য হিসেবে থাকছে, একটি গভীর প্রেমের দুঃখজনক পরিণতি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আমলাতান্ত্রিক প্রক্রিয়া সহজ ও গতিশীল করার সুপারিশ

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি ছানোয়ারসহ ৩ নেতা রিমান্ডে

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

অপারেশন ডেভিল হান্ট : সারাদেশে আরো ৫২৯ জন গ্রেপ্তার

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

হত্যা মামলায় মেনন, ইনু,ফারজানা ও শাকিল রিমান্ডে

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App