×

আমদানি-রপ্তানি

টানা ৩ মাস রপ্তানি আয় নিম্নমুখী

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ০৪ নভেম্বর ২০২৫, ১২:৫৩ পিএম

টানা ৩ মাস রপ্তানি আয় নিম্নমুখী

ছবি : সংগৃহীত

দেশে সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে শ্লথগতির মধ্যেও কিছুটা স্বস্তি ছিল রপ্তানি আয় ও রেমিট্যান্সে। কিন্তু চলতি অর্থবছরের শেষ হওয়া চার মাসের মধ্যে তিন মাসই রপ্তানি আয় কমেছে। এর মধ্যে সর্বশেষ সমাপ্ত অক্টোবরে দেশের রপ্তানি আয় কমেছে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এতে স্বস্তি এখন উদ্বেগে পরিণত হচ্ছে।

রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) সর্বশেষ হালনাগাদ তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের অক্টোবরে দেশ থেকে ৩৮২ কোটি ৩৯ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। যেখানে ২০২৪-২৫ অর্থবছরের একই মাসে ৪১৩ কোটি ৮ লাখ ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। সে হিসেবে গত মাসে আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি কমেছে ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এর আগে সেপ্টেম্বর ও আগস্টেও রপ্তানি কমেছে।

সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমার হার ছিল ৪ দশমিক ৬১ শতাংশ। আর আগস্টে কমেছিল ২ দশমিক ৯৩ শতাংশ। তবে গত বছরের জুলাইয়ের তুলনায় চলতি বছরের জুলাইয়ে রপ্তানি খাতে ২৪ দশমিক ৯০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। এই এক মাসের বড় প্রবৃদ্ধির প্রভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাস শেষে (জুলাই-অক্টোবর) এ খাতে প্রবৃদ্ধির ধারা দেখাচ্ছে। তা সত্ত্বেও রপ্তানি খাতে অর্থবছরের শুরুতে প্রায় ২৫ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও চার মাস পর এসে তা মাত্র ২ দশমিক ২২ শতাংশে ঠেকেছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২৪ সালের জুলাইয়ের বেশির ভাগ সময় ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনে সারাদেশ উত্তাল ছিল। সড়ক অবরোধ, সংঘাত-সংঘর্ষ, কারফিউসহ শেখ হাসিনাবিরোধী আন্দোলনে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড পুরোপুরি স্থবির হয়ে গিয়েছিল। তারপরও সে মাসে ৩৮২ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। বিপরীতে গত তিন মাসে (আগস্ট, সেপ্টেম্বর ও অক্টোবর) দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ছিল অনেকটাই স্থিতিশীল। এরপরও গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় রপ্তানি আয় না বেড়ে উল্টো কমে যাওয়া উদ্বেগজনক।

আরো পড়ুন : এসএমই খাতকে জাতীয় অর্থনীতির চালিকাশক্তিতে রূপান্তরের উদ্যোগ

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন, ডোনাল্ড ট্রাম্প কর্তৃক অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ইস্যুতে জুলাই ও আগস্টে আমাদের রপ্তানি খাত কিছুটা চাপে ছিল। সেটির প্রভাব সেপ্টেম্বরেও কিছুটা মেনে নেওয়া যায়। কিন্তু অক্টোবরে এসে আমাদের রপ্তানি এতটা কমে যাওয়া অবশ্যই অ্যালার্মিং। এ বিষয়ে আমাদের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক হওয়া দরকার।

খাতভিত্তিক রপ্তানি চিত্র বিশ্লেষণে দেখা যায়, দেশের মোট রপ্তানির ৮০ শতাংশই তৈরি পোশাক থেকে আসে। টানা তিন মাস ধরে তৈরি পোশাকের রপ্তানি কমলেও অর্থবছরের শুরুটা হয়েছিল দুর্দান্ত। গত জুলাইয়ে ৩৯৬ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ২৪ শতাংশ। পরের মাসে রপ্তানি কমে পৌনে ৫ শতাংশ। আর সেপ্টেম্বরে কমেছিল প্রায় সাড়ে ৫ শতাংশ। গত মাসে, অর্থাৎ অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৩০২ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক। এই রপ্তানি গত বছরের অক্টোবরের তুলনায় ৮ শতাংশ কম।

ইপিবির তথ্যানুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ১ হাজার ২৯৯ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১ দশমিক ৪০ শতাংশ বেশি। গত অর্থবছরের প্রথম চার মাসে রপ্তানি হয়েছিল ১ হাজার ২৮১ কোটি ডলারের তৈরি পোশাক।

দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ পণ্য রপ্তানি খাত বর্তমানে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছর এখন পর্যন্ত ইতিবাচক ধারায় আছে এই খাতের রপ্তানি। গত জুলাই-অক্টোবর সময়ে রপ্তানি হয়েছে ৪১ কোটি ডলারের চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ১১ শতাংশ বেশি।

পণ্য রপ্তানিতে তৃতীয় শীর্ষ খাত কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ৩৮ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় পৌনে ২ শতাংশ কম। শুধু গত মাসে ১০ কোটি ডলারের কৃষি প্রক্রিয়াজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ৯ শতাংশ।

এদিকে চতুর্থ শীর্ষ রপ্তানি খাত হোম টেক্সটাইলের রপ্তানি গত মাসে ঘুরে দাঁড়িয়েছে। অক্টোবরে রপ্তানি হয়েছে ৭ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ১৪ শতাংশ। যদিও সেপ্টেম্বরে রপ্তানি কমেছিল দশমিক ৫৪ শতাংশ। সামগ্রিকভাবে চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ২৮ কোটি ডলারের হোম টেক্সটাইল পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় সাড়ে ৯ শতাংশ বেশি।

দেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি এখনো ইতিবাচক ধারায় আছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম চার মাসে ২৭ কোটি ৭৪ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এই রপ্তানি গত অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ দশমিক ৭৪ শতাংশ বেশি। শুধু গত মাসে ৮ কোটি ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৭ শতাংশ।

তবে অর্থনীতিবিদদের মতে, রপ্তানিতে এভাবে টানা তিন মাস পতন দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য একটি অ্যালার্মিং সংকেত। তারা বলছেন, তৈরি পোশাকের ওপর অতিনির্ভরশীলতা এবং বৈদেশিক শুল্কনীতির চাপের পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে চাহিদা হ্রাসও এর একটি বড় কারণ। এখনই নীতিনির্ধারকদের জরুরি উদ্যোগ না নিলে এই ধারা অব্যাহত থাকলে দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, কর্মসংস্থান ও শিল্প খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।

টাইমলাইন: অন্তর্বর্তীকালীন সরকার

আরো পড়ুন

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

মাদারীপুর-১: স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন অ্যাডভোকেট শেখ সালাহউদ্দিন

মাদারীপুর-১: স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেবেন অ্যাডভোকেট শেখ সালাহউদ্দিন

নতুন ৪১ ডেপুটি ও ৬৭ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ

নতুন ৪১ ডেপুটি ও ৬৭ সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল নিয়োগ

রুমিন ফারহানাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় হিরো আলমের নিন্দা

রুমিন ফারহানাকে মনোনয়ন না দেওয়ায় হিরো আলমের নিন্দা

৩৫ বছরেই যে কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক

৩৫ বছরেই যে কারণে হতে পারে হার্ট অ্যাটাক

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App