এডিপি বাস্তবায়নে ব্যর্থ স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, ২ মাসে বাস্তবায়ন মাত্র ০.৩০%

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১২:০৪ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে ব্যর্থতার শৃঙ্খলায় আটকে আছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। চলতি ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির (এডিপি) এক শতাংশও কার্যকর করতে পারেনি মন্ত্রণালয়।
পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইডি) জানিয়েছে, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ ১২,২৯৪ কোটি টাকা। জুলাই ও আগস্টে মোট ব্যয় হয়েছে মাত্র ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এ অনুযায়ী বাস্তবায়নের হার মোট বরাদ্দের মাত্র ০.৩০ শতাংশ।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বাস্তবায়নের হার শুধু হতাশাজনক নয়, বরং বড় ধরনের অদক্ষতা ও ব্যর্থতার প্রতিফলন। স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ অপ্রতুল এবং বাস্তবায়ন ব্যর্থ হওয়ায় উন্নয়ন কার্যক্রম প্রায় থেমে আছে।
আইএমইডির তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের এডিপিতে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের ১৫ প্রকল্পে বরাদ্দ রয়েছে ৭ হাজার ৪৮৪ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। গত জুলাই ও আগস্ট মাসে ব্যয় হয়েছে ৩৭ কোটি ২৫ লাখ টাকা। বাস্তবায়ন হয়েছে মোট বরাদ্দের মাত্র ০.৫০ শতাংশ। অপর বিভাগ স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণের ১৪ প্রকল্পে বরাদ্দ আছে ৪ হাজার ৮০৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। ব্যয় হয়েছে মাত্র ২৫ লাখ টাকা। বাস্তবায়নের হার ০.০১ শতাংশ।
আরো পড়ুন : ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক হয়ে উঠছে, সতর্ক করলো স্বাস্থ্য অধিদপ্তর
এর আগে গত ২০২৪-২৫ অর্থবছরে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়ন ছিল ২০ শতাংশেরও কম। গত অর্থবছরে সরকারের মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এডিপি বাস্তবায়নের হারই ছিল সবচেয়ে কম। চলতি অর্থবছরের প্রথম দুই মাসেও একই ধরনের প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।
বেশ কয়েক বছর ধরেই বিশেষজ্ঞরা দেশের স্বাস্থ্য খাতে অপ্রতুল বাজেট বরাদ্দের কথা বলে আসছেন। অন্তর্বর্তী সরকার গঠিত স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশন তাদের সুপারিশে বলেছে, জাতীয় বাজেটের কমপক্ষে ১৫ শতাংশ বরাদ্দ স্বাস্থ্য খাতে থাকা উচিত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, বাজেটের অন্তত ১০-১৫ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ দেওয়া প্রয়োজন।
কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ জাতীয় বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশের মত। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন সমন্বয়ের এক গবেষণা প্রতিবেদন অনুসারে, গত ১০ বছরে বাজেটে স্বাস্থ্য খাতের বরাদ্দে বিশ্বের ৫১টি নিম্নমধ্যম আয়ের দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৮তম।
চরম অদক্ষতার পাশাপাশি ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতিও স্বাস্থ্য খাতে সংকট তৈরি হওয়ার অন্যতম কারণ। স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও বিষয়টি ওঠে এসেছে। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) ও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) গবেষণার তথ্যের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের স্বাস্থ্য খাতে ব্যর্থতার অন্যতম কারণ অনিয়ম ও দুর্নীতি। এতে প্রতিবছর বাজেটের প্রায় ৩০ শতাংশ অপচয় হয়।
বিশ্লেষকরা বলছেন, স্বাস্থ্য সেবা সম্পর্কিত অনেক উন্নয়ন কাজে অনিয়মই যেন নিয়ম হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি সম্প্রতি দেশের একমাত্র সরকারি স্বায়ত্তশাসিত ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান এসেনসিয়াল ড্রাগস কোম্পানি লিমিটেডের (ইডিসিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালকের বিরুদ্ধেও ওঠেছে গুরুতর অভিযোগ। প্রতিষ্ঠানটিতে টেন্ডার বাণিজ্য, সরকারি অর্থের অপচয়, স্বজনপ্রীতি, ছাঁটাই বাণিজ্য, নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদন ও অর্থ লোপাটের অভিযোগ ওঠে এসেছে একটি জাতীয় দৈনিকের প্রতিবেদনে। স্বাস্থ্য খাতে কম বরাদ্দের মধ্যে দক্ষতার ঘাটতি ও অনিয়ম-দুর্নীতির সমস্যা থাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের দরিদ্র ও প্রান্তিক জনগোষ্ঠী।