ঢাবিতে প্রকাশ্যে ছাত্রশিবির, 'অস্বস্তিতে' বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:৪২ পিএম

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছিল একটি অরাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে। ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ সময় পর প্রকাশ্যে এসেছে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্র সংগঠন ‘বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রশিবির’। বিশেষ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন নেতা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করায় এনিয়ে আলোচনা আরো তীব্র হয়েছে। গত শনিবার নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতি হিসেবে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন আবু সাদিক কায়েম।
এমন একটি সময়ে আবু সাদিক কায়েম নিজের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করলেন যখন বিশ্ববিদ্যালয়টিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ছাত্র ও শিক্ষক রাজনীতি বন্ধ করার আলোচনা চলছে। এমনকী স্থায়ীভাবে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যাপারেও প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যেই ছাত্রশিবির নেতার পরিচয় সামনে এনে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন। এটা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মহলে নানান আলোচনা-সমালোচনা হচ্ছে।
ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্যে আসা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যেই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় অন্য রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনগুলো। অন্যদিকে, শনিবার নিজেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি ঘোষণা দেয়ার আগ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা কায়েমকে চিনতেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে। ফলে তার নেতৃত্ব মেনে যারা মাঠে আন্দোলন করেছেন, তাদের অনেকেই এখন প্রতারিত বোধ করছেন।
আবু সাদিক কায়েমে সংবাদমাধ্যম বিবিসিকে জানিয়েছেন, আমরা আগে থেকেই ছিলাম, পরিস্থিতির কারণেই এতদিন নিজের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছেন তিনি। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এতদিন ছাত্রশিবির কেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রকাশ্যে কার্যক্রম চালাতে পারেনি? আর এখনই-বা হঠাৎ কেন তারা প্রকাশ্যে কর্মকাণ্ড পরিচালনা করতে চাচ্ছে?
আবু সাদিক কায়েমের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ পাওয়ার পর বেশ অস্বস্তিতে পড়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য নেতারা।
প্ল্যাটফর্মটির অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল জানান, ওনি যে শিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত সেটা সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না। অন্য সমন্বয়করাও বিষয়টি জানতেন না বলে জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, খবরটি পাওয়ার পর কেন্দ্রীয় সমন্বয়কদের সঙ্গেও আমি যোগাযোগ করেছি। তারাও কিছু জানতো না বলে জানিয়েছে।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছিল একটি অরাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে। গত জুলাইয়ে আত্মপ্রকাশের সময় প্ল্যাটফর্মটি নিজেও একই দাবি করেছিল।
আরো পড়ুন : রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশ করে পদ ছাড়লেন উমামা ফাতেমা
সমন্বয়ক সোহেল বলেন, কাজেই এখানে রাজনৈতিক পরিচয় গোপন করাটা ঠিক হয়নি বলে আমি মনে করি। বিষয়টা নিয়ে আমরা সবাই বেশ অস্বস্তিতে পড়েছি, কিছুটা বিব্রতকর অবস্থায় বলতে পারেন, বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের এই নেতা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকার বিষয়ে কায়েমের ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা নিয়ে খুব শিগগিরই আমরা বাকি সমন্বয়করা বসব। এরপর যে সিদ্ধান্তই নেয়া হয়, সবাইকে জানিয়ে দেয়া হবে।
অন্যদিকে, কোটা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে যারা সাদিক কায়েমের নেতৃত্ব মাঠে নেমেছেন, তাদের অনেকে এখন প্রতারিত বোধ করছেন।
মোস্তফা সানি নামের এক শিক্ষার্থী সামাজিক মাধ্যম ফেসবুকে লিখেছেন, ‘সাদিক কায়েম ভাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি, এটা জানার পর চিটেড ফিল করতেছি।’ প্রায় একই ধরনের অনুভূতি জানিয়ে রেখা ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী লিখেছেন, ‘যত দিন যাচ্ছে, ততই অবাক হচ্ছি। জানি না সামনে আরো কত কী দেখতে হবে!’
এ বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি সাদিক কায়েমের কাছে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, পরিচয় জানানোর কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ঐক্য যেন হুমকির মধ্যে না পড়ে, সেজন্যই গোপন রেখেছিলাম।