লাশ দাফনে তাপসের বিরুদ্ধে কর নেয়ার অভিযোগ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ আগস্ট ২০২৪, ১২:২২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
ঢাকার ২ সিটি কর্পোরেশন মিলিয়ে কবরস্থান রয়েছে মোট ৯টি। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ৩টি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আছে ৬টি। এসব কবরস্থানে নতুন করে আর জায়গা বাড়ানোর সুযোগ না থাকায় কবরের সংকট রয়েছে ঢাকা সিটিতে। তবুও দাফনের ক্ষেত্রে কর বসিয়েছিল ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন। মূলত মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপসের নির্দেশেই এই করের বোঝা চাপিয়ে দেয়া হয়েছিল দক্ষিণ সিটি এলাকায় বসবাসকারীদের ওপর।
একসময় ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএসসিসি) আওতাধীন কবরস্থানগুলোতে বিনামূল্যে কবর দেয়া যেত। পরে মেয়র তাপস প্রতি কবরের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করে দেন। তারপর থেকে প্রতি কবরের জন্য আলাদা ফি পরিশোধ করতে হয় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের। ডিএসসিসির নীতিমালার আলোকে কবর সংরক্ষণ করার অনুমতি নিতেও ফি প্রযোজ্য হবে। এ ছাড়া প্রতি কবরের বাঁশ, চাটাই ও কবর খননের ফি নিজ খরচে বহন করতে হবে।
ডিএসসিসির নীতিমালা অনুযায়ী, প্রতি কবরের সাধারণ রেজিস্ট্রেশন ফি ১০০০ টাকা এবং সংরক্ষিত কবরে পুনঃকবর ফি ৫০ হাজার টাকা পরিশোধ করতে হয়।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের রাজস্ব আয় ব্যয়ের হিসাব পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে কবরস্থান, শ্মশানঘাট থেকে তারা ১১ কোটি টাকা রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে। এর আগের অর্থবছরে এটি ছিল ৯ কোটি টাকা।
আরো পড়ুন: যেভাবে বিদ্যুৎ উৎপাদনে রেকর্ড করলো কাপ্তাই পানি বিদ্যুৎ কেন্দ্র
জানা গেছে, ঢাকার কবরস্থানগুলোতে প্রতিটি কবরের জন্য বাঁশ, চাটাই ও খননের ফি স্বজনদের বহন করতে হয়। এ ছাড়া প্রতি কবরের সাধারণ রেজিস্ট্রেশন ফি ১ হাজার টাকা এবং সংরক্ষিত কবরে পুনঃকবর ফি ৫০ হাজার টাকা দিতে হয়। ইজারাদারকে পরিশোধের জন্য ফি চার্ট করে দেয়া থাকলেও নতুন কবর দিতে নির্ধারিত খরচের চেয়ে ছয় থেকে ১০ হাজার টাকা বেশি খরচ করতে হয় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের।
বিষয়টির সমালোচনা করে পুরান ঢাকার এক বাসিন্দা মকিদুর রহমান বলেন, কিছুদিন আগে আমার এক ছোট ভাইয়ের কবর দিলাম আজিমপুর কবরস্থানে। সেখানে সিটি কর্পোরেশনের রেজিস্ট্রেশন ফি দিতে হলো ১ হাজার টাকা। আরো নানা খরচসহ প্রায় ৭ হাজার টাকা খরচ হলো কবর দিতে। আগে আজিমপুর কবরস্থানে কবর দেওয়া ফ্রি ছিল। সাঈদ খোকন যখন দক্ষিণ সিটির মেয়র ছিল তখন কবরে দাফন ফ্রি করে দিয়েছিল। তারপর মেয়র তাপস কবর দেয়াতেও কর বসিয়ে দেন।
কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের এক সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা বলেন, একসময় ফ্রি ছিল কবরে দাফন করানো। কিন্তু কয়েক বছর আগে মেয়র তাপস কবরে দাফনের জন্য রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। এরপর থেকে প্রতি কবরের জন্য ১ হাজার টাকা রেজিস্ট্রেশন ফি প্রদান করতে হয় মৃত ব্যক্তির স্বজনদের।
তিনি আরো বলেন, একটি সাধারণ কবর ১৮ থেকে ২০ মাস পর্যন্ত থাকে। এরপর সেখানে পুনরায় কবর দেয়া হয়। আসলে কবরের জায়গার সংকট থাকায় এমনটি করা হয়। এসময়ের জন্য কবরের রেজিস্ট্রেশন ফি নির্ধারণ করা আছে এক হাজার টাকা।
বিষয়টি নিয়ে সবসময় সমালোচনা করে আসছিলেন দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের সাবেক মেয়র সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, আমি এই শহরে লাশ দাফন ফ্রি করে দিয়েছিলাম। কিন্তু মেয়র তাপসের সময় ঢাকা শহরে দাফন-কাফন করতে ১২/১৪ হাজার টাকা লাগে। আজ আজিমপুর গোরস্থানে গিয়ে দেখেন লাশ নামানোর আগে টিকিট লাগে। এই শহরের মোড়ে মোড়ে মানুষ এখন স্লিপ দিয়ে চাঁদা তোলে। ঢাকার মরা লাশের ওপর পর্যন্ত ট্যাক্স বসিয়ে দিয়েছেন তিনি।