গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়ম, অংশ না নিয়েও পাস

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১০:৩৯ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের (জাগৃক) একটি পদে নিয়োগ পরীক্ষায় অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। তাই স্বচ্ছতার জন্য নিয়োগ পরীক্ষাটি পুনরায় নেয়ার দাবি জানিয়েছেন বঞ্চিত পরীক্ষার্থীরা। তবে তাদের সেই অভিযোগ আমলে না নিয়ে পরীক্ষায় জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া পরীক্ষার্থীকে উত্তীর্ণ দেখিয়ে ফলাফল দিয়েছে জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষ।
সেই নিয়োগ বাতিল করে পুনরায় নিয়োগ পরীক্ষা দাবি করে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার কাছে আবেদন করেছেন বঞ্চিতরা।
জানা গেছে, জাতীয় গৃহায়ণ কর্তৃপক্ষের অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর পদে গত ৩ জানুয়ারি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। এই পদে ২০১১, ২০১৭ সাল ও ২০২১ সালে আবেদন নেয়া হয়। কিন্তু নানা কারণে সেই পরীক্ষা আর হয়নি।
তিন দফায় প্রায় ২৫ হাজার আবেদন জমা পড়ে। কিন্তু গত ৩ জানুয়ারি তড়িঘড়ি করে পরীক্ষা নেয়ায় অনেক পরীক্ষার্থী অংশ নিতে পারেননি। পরীক্ষার প্রবেশপত্র ছাড়ার অল্প দিনের মধ্যে পরীক্ষা হওয়ায় অনেক পরীক্ষার্থী ৩ জানুয়ারির মধ্যে প্রবেশপত্রও পাননি বলে অভিযোগ করেছেন। আবার অনেক আবেদনকারীর ঠিকানা না পাওয়া প্রবেশপত্র জাগৃকে ফেরত এসেছে। এখনো অনেক আবেদনপত্র ফেরতের তালিকায় রয়েছে বলে জানা গেছে।
অভিযোগ উঠেছে বর্তমান চেয়ারম্যান সৈয়দ মো. নুরুল বাসির ও নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিব (প্রশাসন ও অর্থ) কাজী আতিউর রহমানের বিরুদ্ধে। নিয়োগ কমিটির সদস্যরা নিজেদের পছন্দের প্রার্থীদের টিকিয়ে রাখতে অল্প সংখ্যক আবেদনকারীকে নিয়ে পরীক্ষার আয়োজন করেছেন। ২৫ হাজার আবেদনকারীর মধ্যে মাত্র ২ হাজার ৬০০ পরীক্ষার্থী নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয় বলে জানা গেছে।
বঞ্চিতরা জানান জাগৃক চেয়ারম্যান ও নিয়োগ কমিটির সভাপতি পরীক্ষার্থীদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা না করে পরীক্ষা খুবই অল্প সময়ে তাড়াহুড়া করে সম্পন্ন করেন, যেন অল্প সংখ্যক পরীক্ষার্থী উপস্থিত হতে পারে ও তাদের পছন্দের প্রার্থীদের চাকরি নিশ্চিত করতে পারেন।
সাধারণত চাকরির নিয়োগ পরীক্ষা তিন ধাপে হলেও জাগৃক এখানে ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে। তারা নিজেদের পছন্দমত প্রার্থী টেকাতে শুধু এমসিকিউ পরীক্ষার আয়োজন করে। চাকরি বিধিমালা অনুযায়ী এমসিকিউ দিয়ে মেধা যাচাই করা অসম্ভব বলেও জানিয়েছেন অনেকে।
জাগৃক সূত্র জানায়, গত ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ছাড়কৃত প্রবেশপত্র নির্দিষ্ট ঠিকানায় না গিয়ে ১৫টি প্রবেশপত্রসহ শতশত প্রবেশপত্র জাগৃক অফিসে ফেরত এসেছে। নিয়োগ পরীক্ষা হয় ৭টি কেন্দ্রে। তার মধ্যে টি এন্ড টি উচ্চ বিদ্যালয় ও সিদ্ধেশ্বরী কলেজসহ কোনো কেন্দ্রের প্রধান ফটকে পরীক্ষার্থীদের দেহ তল্লাশিও করা হয়নি।
এমনকি পূর্বের ছবির সঙ্গে প্রার্থীর চেহারা মিলিয়ে দেখা হয়নি। তাছাড়া পরীক্ষার্থীদের স্বাক্ষরের সঙ্গেও বর্তমান স্বাক্ষর মিলিয়ে দেখা হয়নি, যা ভুয়া পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণের সুযোগ হিসেবে দেখছেন বঞ্চিতরা। পাশাপাশি এই সুযোগে ব্যাপকহারে মোবাইল ও ডিভাইসের ব্যবহার হয়েছে। তাছাড়া একজনের বিপরীতে আরেকজন অংশ নিয়েছে বলে জানা গেছে।
বঞ্চিত কয়েকজন অভিযোগ করেছেন, সিদ্ধেশ্বরী কলেজের ১২০১২৩৮৩ নং রোল নম্বরধারী মোতালেব হোসেন আকাশ পরীক্ষায় অসৎ উপায় অবলম্বন করে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছেন। এই পরীক্ষার্থী ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র দ্বারা (প্রক্সি পরীক্ষার মাধ্যমে) পরীক্ষার উত্তরপত্র পূরণ করেন। এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে অনেক পরীক্ষার্থী যাদের রোল নম্বর ১২০১৪৩৫০, ১২০১৪২২৩, ১২০০১৩৭৭ ও ১২০০১২৪৮ মৌখিক অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগ কারীরা আরো জানান, ১২০১২৩৮৩ রোল নম্বর ধারী পরীক্ষার্থীকে যদি এই একই প্রশ্ন দিয়ে আবারও পরীক্ষা নেয়া হয় তাহলে সে ৭০ এর মধ্যে ৩০ নম্বরও পাবেন না। অথচ গত ২৯ জানুয়ারি যে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে অনিয়মের লিখিত অভিযোগ দেয়ার পরেও জালিয়াতির আশ্রয় নেয়া প্রার্থী মোতালেব হোসেন আকাশকে উত্তীর্ণ করা হয়েছে। শুধু মোতালেব হোসেন আকাশ না, এরকম আরো অনেক প্রার্থী যারা অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে উত্তীর্ণ হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে।
জাগৃক সূত্রে জানা গেছে, এই মোতালেব হোসেন আকাশের বাবা জাতীয় গৃহায়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান অফিসের এমএলএসএস মো. আকবর আলী শেখ। তার বাবা নিয়োগ কমিটির সদস্য সচিবের সহায়তায় প্রশ্ন ফাঁস করেছেন বলেও অভিযোগ রয়েছে।
এ বিষয়ে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমানের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী সচেতন সুশীল নাগরিকের প্যাডে অভিযোগ করা হয়েছে।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে, জাগৃকে নিয়োগ পরীক্ষায় বিরাট অনিয়ম ও দুর্নীতির আশ্রয় নেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, হিসাব সহকারী পদে নিয়োগের জন্য বিভিন্ন ধাপে প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির সব নিয়ম অনুযায়ী ২৫ হাজার আবেদনকারী আবেদন করেন। যার মধ্যে হতে ২৩ হাজার আবেদনকারী বৈধ ঘোষণা করে একটা তালিকা প্রকাশ করে জাগৃক। অথচ বৈধ আবেদনকারীর মধ্যে প্রায় ৩০০ জন আবেদনের বিপরীতে কোনো প্রবেশপত্র ইস্যু করা হয়নি। অর্থাৎ তাদের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ বঞ্চিত করেছে কর্তৃপক্ষ। যা নিয়োগ বিধিমালার পরিপন্থি। উত্তীর্ণদের অনেকে মৌখিক পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও চূড়ান্ত তালিকায় প্রকাশ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।
তাই তারা দুর্নীতিযুক্ত পরীক্ষা বাতিল করে পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। গত ৩ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত অফিস সহকারী কাম ডাটা এন্ট্রি অপারেটর' পরীক্ষার ফলাফল বাতিল করা না হলে তারা প্রধান উপদেষ্টার কাছে যাবেন।