নির্বাচন ঘিরে বাড়ছে সহিংসতা, জুলাই সনদ বাস্তবায়ন নিয়ে শঙ্কা
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ অক্টোবর ২০২৫, ১১:৪৬ এএম
ছবি : সংগৃহীত
জাতীয় সংসদ নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসছে, ততই বাড়ছে রাজনৈতিক সহিংসতা। দলীয় কোন্দল থেকে শুরু করে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর সংঘর্ষ, সব মিলিয়ে আবারও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন। বিশ্লেষকদের আশঙ্কা, এই অস্থিতিশীল পরিস্থিতি জুলাই সনদের বাস্তবায়নকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে।
গত জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থান দেশের রাজনীতিতে এনেছিল নতুন আশাবাদ। ফ্যাসিবাদের পতনের সেই আন্দোলন জন্ম দিয়েছিল ‘নতুন বাংলাদেশ’ গড়ার স্বপ্ন। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সেই রাজনৈতিক ঐক্য যেন আবারও প্রতিহিংসা ও অসহিষ্ণুতার পুরনো বৃত্তে ফিরে যাচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিস কেন্দ্র (আসক) জানিয়েছে, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে গত নয় মাসে বিএনপি-জামায়াত-এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দলের সংঘর্ষে তিনজন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৩৯২ জন। এতে সারাদেশে উদ্বেগ বাড়ছে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল মাহমুদ টুকু বলেন, জামায়াত আর বিএনপির মধ্যে সংঘর্ষ নতুন কিছু নয়। এটি শুধু নির্বাচনকেন্দ্রিকও নয়। যদি কেউ এসে ঝামেলা করে, আমরা আমাদের মতবাদ প্রচার করব। সংঘর্ষ হলে শুধু বিএনপিকে দায়ী করা ঠিক নয়।
তিনি বলেন, পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে যথাযথভাবে কার্যকর করা না গেলে অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন আয়োজন করা কঠিন হবে।
আরো পড়ুন : জুলাই সনদ বাস্তবায়নের খসড়া নিয়ে যা জানালো এনসিপি
জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল হামিদুর রহমান আজাদ বলেন, সুস্থ প্রতিযোগিতার পরিবর্তে কোথাও কোথাও উত্তেজনা দেখা দিচ্ছে। কিন্তু সবার উচিত সমতা বজায় রাখা। সভাপতি সমতার যে আচরণ করছেন, আমরা যদি সেই লেভেল বজায় রাখতে পারি, তাহলে এমন ঘটনার মাত্রা কমে আসবে।
জাতীয় নাগরিক কমিটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসুদ বলেন, শত বছরের রাজনৈতিক সংস্কৃতি একদিনে পরিবর্তন হওয়া সম্ভব না। তবে জুলাই পরবর্তীতে এটা পরিবর্তন হওয়া দরকার ছিল। রাজনীতিতে কথার লড়াই হবে, কিন্তু হাতের লড়াই নয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, পুরোনো রাজনৈতিক সংস্কৃতি একদিনে বদলানো কঠিন হলেও জুলাই-পরবর্তী বাস্তবতায় দলগুলোর দায়িত্ব ছিল জনগণের সামনে ভিন্ন বার্তা দেওয়ার।
তারা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো নিজেদের দায় এড়িয়ে যেতে পারে না। একই সঙ্গে সরকারেরও উচিত শক্ত হাতে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও “লেভেল প্লেইং ফিল্ড” নিশ্চিত করা।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানী আল মাসুদ হাসানুজ্জামান সতর্ক করে বলেন, দলীয় স্বার্থে অনৈক্য বাড়লে জুলাই সনদের ভবিষ্যৎ ঝুঁকিতে পড়বে। দলগুলোকে ছাড় দেওয়ার মানসিকতা নিয়ে এগোতে হবে, নইলে সাংবিধানিক সংস্কারসহ ঘোষিত প্রতিশ্রুতিগুলো কার্যকর হবে না।
