জাতীয় নির্বাচন: মতবিরোধে বাড়ছে শঙ্কা

ঝর্ণা মনি
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৪:৩০ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
নির্বাচন নিয়ে ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারেনি রাজনৈতিক দলগুলো। জুলাই সনদ, সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি এবং গণপরিষদ নির্বাচনের দাবিতে ভিন্ন অবস্থানে বিএনপি-জামায়াত ও এনসিপি। পরস্পর বিপরীত মেরুর এই অবস্থানকে নির্বাচন বানচালের ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছে বিএনপি। অন্যদিকে দেশ আবারো নীলনকশার নির্বাচনের দিকে যাচ্ছে কিনা, এমন প্রশ্ন তুলেছে বিএনপির সাবেক মিত্র জামায়াত। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে প্রধান উপদেষ্টার বারবার এমন আশ্বাসের পরও নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা কাটছে না রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে। নির্বাচন হবে কিনা, এমন প্রশ্ন রয়েছে জনমনেও। অবশ্য নির্বাচনের আগেই মতভিন্নতা দূর হয়ে যাবে বলে মনে করছে সরকারপক্ষ।
এদিকে আগামী ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে যাবতীয় প্রস্তুতি পর্যায়ক্রমে চালিয়ে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশনও (ইসি)। ইতোমধ্যে নির্বাচনের একটি রোডম্যাপও ঘোষণা করেছে ইসি। ফেব্রুয়ারির প্রথমার্ধে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের ঘোষণায়ও কোনো অস্পষ্টতা নেই। গত রোববার বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী ও জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সঙ্গে বৈঠকে এ কথা আবারো স্পষ্ট করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। তবে বিএনপির অভিযোগ, ফেব্রুয়ারির নির্বাচন বানচাল করার জন্য ষড়যন্ত্র চলছে। নির্বাচন বানচাল করার জন্যই নিত্যনতুন দাবি তোলা হচ্ছে। বিএনপি বলছে, তারা সংবিধানসংক্রান্ত প্রস্তাবগুলো সংসদের মাধ্যমে বাস্তবায়নের পক্ষে। আর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠকে দলটি বলেছে, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের বৈধ বা সাংবিধানিক কোনো উপায় থাকলে সেটা তারা মেনে নেবে।
তবে জুলাই গণঅভ্যুত্থানের স্ট্রাইকিং ফোর্স জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী সম্প্রতি দলীয় এক সমাবেশে বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলেও ওই সময় নির্বাচন হবে না। এ ছাড়া আগামী নির্বাচন ‘গণপরিষদ’ নির্বাচন চায় তারা। রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এই যে অবস্থানগত বিরোধ বা দূরত্ব, তা সৃষ্টি হয়েছে মূলত তিনটি বিষয় নিয়ে-সংবিধান সংস্কার, জুলাই সনদ বাস্তবায়নের পদ্ধতি এবং সংখ্যানুপাতিক বা পিআর পদ্ধতির নির্বাচন। এই বিষয়গুলোতে এনসিপি এবং জামায়াতের অবস্থান কাছাকাছি। সংসদ নির্বাচনের আগে জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন, সনদ বাস্তবায়নে গণভোট এবং সংসদের উভয় কক্ষে সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতিতে নির্বাচন নিয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার দাবিতে অনড় অবস্থানে রয়েছে জামায়াত।
সোমবার (১ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বসুন্ধরায় দলের আমির ডা. শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের এক জরুরি বৈঠক করে দলটি। বৈঠকে নেতারা জুলাই জাতীয় সনদ ২০২৫-কে আইনি ভিত্তি দেয়া এবং তার আলোকে আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য করার প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। নির্বাচনের আগে সব রাজনৈতিক দলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা এবং পিআর পদ্ধতিতে নির্বাচন আয়োজনের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর দৃঢ় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করা হয় বৈঠকে।
অন্যদিকে ফেব্রুয়ারির জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠানই বিএনপির সামনে ‘এখন চ্যালেঞ্জ’ বলে মন্তব্য করেছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, এখন যে চ্যালেঞ্জ আমাদের সামনে রয়েছে সেটা হলো, আগামী ফেব্রুয়ারিতে যে নির্বাচনের কথা আছে তা সুষ্ঠুভাবে করতে সর্বতোভাবে সহযোগিতা করা, সাহায্য করা। সংস্কার কমিশনগুলোকে বিএনপি সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছে বলে মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
এদিকে গুজব-গুঞ্জন নিয়ে বিচলিত হওয়ার মতো কিছু নেই বলে মন্তব্য করে আগামী ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় নির্বাচন করার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকার দৃঢ়প্রতিজ্ঞ বলে জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা অধ্যাপক আসিফ নজরুল। তিনি বলেন, জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তি রাজনৈতিক দলগুলোর বিচার-বিবেচনা বোধের প্রতি আস্থা রয়েছে। এর আগেও বিভিন্ন বিষয়ে তাদের মধ্যে মতবিরোধ হয়েছে, মতবিরোধ শেষও হয়েছে। বিভিন্ন বিষয়ে মতভিন্নতা থাকলেও প্রয়োজনীয় মুহূর্তে তাদের মধ্যে ঐক্য দেখতে পাবেন।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) আরো সাত দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা
দেশের বতর্মান রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও আগামী জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়ে আলোচনা করতে আরো সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এদিন বিকাল ৫টায় প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। আগের দিন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রেস উইং জানিয়েছে, ২ সেপ্টেম্বর আরো সাতটি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করবেন প্রধান উপদেষ্টা। বিকাল ৫টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। তবে কোন কোন দলের সঙ্গে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে তা জানানো হয়নি।