জুলাই হত্যাকাণ্ড: দায় স্বীকার করে ক্ষমা চাইলেন সাবেক আইজিপি মামুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৯ পিএম

দুই পুলিশের মাঝে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ফাইল ছবি
চব্বিশের জুলাই আগস্টে ছাত্র জনতার গণ-অভ্যুত্থানে সংঘটিত অপরাধের দায় স্বীকার করে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে জবানবন্দি দিয়েছেন পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) রাজসাক্ষী হওয়া চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করে গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের পরিবার, আহত ব্যক্তি, দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (২ সেপ্টেম্বর) মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে শেখ হাসিনাসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলায় দেয়া সাক্ষীর জবানবন্দিতে সাবেক আইজিপি এসব কথা বলেন।
বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে-১ এ দেয়া জবানবন্দিতে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, আমার এই সত্য ও পূর্ণ বর্ণনার মাধ্যমে সত্য উদ্ঘাটিত হলে আল্লাহ যদি আমাকে আরও হায়াত দান করেন, বাকিটা জীবন কিছুটা হলেও অপরাধবোধ থেকে মুক্তি পাব।
তিনি বলেন, সাড়ে ৩৬ বছর পুলিশে চাকরি করেছি আমি। পুলিশের চাকরি খুবই ট্রিকি। সবসময় পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসে। চাকরি জীবনে আমার বিরুদ্ধে কখনো কোনো অভিযোগ আসেনি। সবসময় যথেষ্ট মানবিকতা ও সচেতনতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেছি। চাকরিজীবনের শেষ পর্যায়ে এসে এত বড় গণহত্যা আমার দায়িত্বকালে সংঘটিত হয়েছে, এর দায় স্বীকার করি আমি।
তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নির্দেশে এসব হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে উল্লেখ করেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। তিনি বলেন, আমি গণহত্যার শিকার প্রত্যেকের পরিবার, আহত ব্যক্তিবর্গ, দেশবাসী এবং ট্রাইব্যুনালের কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। আমাকে দয়া করে ক্ষমা করবেন।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এই মামলায় প্রসিকিউশন পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম ও গাজী এসএইচ তামিম শুনানি করেন। এসময় অপর প্রসিকিউটররা উপস্থিত ছিলেন। এই মামলায় পলাতক শেখ হাসিনা ও আসাদুজ্জামান খান কামালের পক্ষে ছিলেন রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেন। আর এই মামলায় গ্রেফতার হয়ে পরে রাজসাক্ষী হওয়া সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ।
মানবতাবিরোধী অপরাধের এই মামলায় শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একপর্যায়ে এই মামলায় দোষ স্বীকার করে ঘটনার সত্যতা উদঘাটনে (অ্যাপ্রোভার) রাজসাক্ষী হতে সাবেক আইজিপি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের আবেদন মঞ্জুর করেন ট্রাইব্যুনাল।
এদিন এ মামলায় ১১তম দিনে সাবেক আইজিপি ৩৬ তম সাক্ষ্য দেন। এর আগে আরও ৩৫ জনের সাক্ষ্য জেরা অনুষ্ঠিত হয়েছে। মামলাটি ছাড়াও শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে আরও দুটি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি মামলায় আওয়ামী লীগের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে গুম-খুনের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়েছে। অন্য মামলাটি হয়েছে রাজধানীর মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায়।
গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, দলীয় ক্যাডার এবং সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।