কাটছাঁট পরীক্ষা, ভিন্নরকম ফলেও বাড়েনি পাসের হার

অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
প্রকাশ: ১৬ অক্টোবর ২০২৪, ১২:০০ এএম
প্রিন্ট সংস্করণ

ছবি : ভোরের কাগজ
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় করা হয়েছিল কাটছাঁট। বন্যার কারণে সিলেট বোর্ডে তিনটি ও বাকি দশটি শিক্ষা বোর্ডে পরীক্ষা হয়েছিল ৭টি। বাকি পরীক্ষাগুলো না নিয়ে এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ‘সাবজেক্ট ম্যাপিং’ করে দেয়া হয়েছে এবারের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল। কিন্তু এতেও বাড়ল না পাসের হার।
পাশাপাশি পরীক্ষার্থীদের একাংশের আন্দোলনের মুখে মাঝপথে বাতিল করা হয়েছিল এইচএসসিতে স্থগিত হয়ে পড়া কয়েকটি বিষয়ের পরীক্ষা। এ অবস্থায় আগেই যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়ে গিয়েছিল, সেগুলোর উত্তরপত্র মূল্যায়ন করা হয়েছে। আর যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল তৈরি হয়েছে পরীক্ষার্থীদের এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে।
এই প্রক্রিয়ায় প্রকাশিত ফলাফলে অনেকের ধারণা ও আশা ছিল পাসের হার অনেক বেড়ে যাবে। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। উল্টো নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় গড় পাসের হার গতবারের চেয়ে কমে গেছে। তবে ফলাফলের সর্বোচ্চ সূচক জিপিএ-৫ পাওয়ার সংখ্যা অনেক বেড়েছে। মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ড মিলিয়ে গড় ফলাফলেও একই ধরনের প্রবণতা দেখা গেছে। অর্থাৎ পাসের হার কমেছে। কিন্তু জিপিএ ৫ বেড়েছে। প্রসঙ্গত, এবার ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের অধীন এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন ১১ লাখ ৩১ হাজার ১১৮ জন পরীক্ষার্থী। এর মধ্যে পাস করেছেন ৮ লাখ ৫৪ হাজার ৬৪৪ জন। গড় পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬। গতবার গড় পাসের হার ছিল ৭৬ দশমিক ৯। এবার ৯টি শিক্ষা বোর্ডের এইচএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন, যা গতবার ছিল ৭৮ হাজার ৫২১ জন।
গতকাল মঙ্গলবার ভিন্ন ব্যবস্থায় এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে। আগে সরকারপ্রধান আনুষ্ঠানিকভাবে ফল প্রকাশের কার্যক্রম উদ্বোধন করতেন। এরপর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সংবাদ সম্মেলন করে ফলাফলের বিস্তারিত তথ্য জানানো হতো। কিন্তু এবার বেলা ১১টায় নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অনলাইনে একযোগে প্রকাশিত হয় ফলাফল। তবে সাংবাদিকরা ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে গেলে বোর্ডের চেয়ারম্যান তপন কুমার সরকার সাংবাদিকদের কাছে ফলাফলের তথ্য তুলে ধরেন। তপন কুমার সরকার সব কটি বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সংগঠন আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটিরও সভাপতি।
এবার পাসের হার কমে যাওয়া ও জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখা করে অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেন, যে বিষয়গুলোর পরীক্ষা বাতিল করা হয়েছিল, সেগুলোর ফলাফল উচ্চ মাধ্যমিকে গড় পাসের হারে বড় রকমের প্রভাব পড়ে না। উচ্চ মাধ্যমিক পাসের হারটি মূলত নির্ভর করে ইংরেজি এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) বিষয়ের ওপর। কিন্তু এবার এই দুটি বিষয়ের পরীক্ষা হয়েছিল। ফলে গড় পাসের হারটি স্বাভাবিক সময়ের মতো হয়েছে। জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার পেছনে অন্যতম প্রভাব হিসেবে বিষয় ম্যাপিং কাজ করেছে জানিয়ে তিনি বলেন, এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে যে শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন, তিনি হয়তো উচ্চ মাধ্যমিকে মানবিকে পড়েছেন। ফলে এসএসসির বিজ্ঞানের বিষয়গুলোর নম্বর এইচএসসিতে এসে মানবিকের বিষয়গুলোর বিপরীতে যোগ হয়েছে। এভাবে বিভাগ পরিবর্তনের কারণে জিপিএ ৫ বেড়ে যাওয়ার অন্যতম কারণ।
সার্বিক বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, সব কলেজেই ইংরেজি এবং হিসাব বিজ্ঞানের শিক্ষক রয়েছেন; তারপরও ফল কেন খারাপ হচ্ছে সেটা নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। আর আইসিটি বিষয়টি শিক্ষার্থীদের কাছে বোঝা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ সব কলেজে আইসিটির দক্ষ শিক্ষক নেই। তাই দক্ষ শিক্ষক বাড়াতে হবে।
এর আগে প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, এবার গড় পাসের হার ৭৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ। গত বছর এ হার ছিল ৭৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ। অর্থাৎ এবার পাসের হার কমেছে দশমিক ৮৬ শতাংশ। এর আগের বছর ২০২২ সালে এই পাসের হার ছিল ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ। তবে সংক্ষিপ্ত এই পরীক্ষায় জিপিএ ৫ উল্লম্ফন হয়েছে। গত বছরের থেকে এবার জিপিএ ৫ বেড়েছে ৫৩ হাজার ৩১৬টি। চলতি বছর জিপিএ ৫ পেয়েছে ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। যা আগের বছর ছিল জিপিএ ৫ পেয়েছিল ৯২ হাজার ৫৯৫ জন। তবে সব মিলিয়ে এই বছরের ফলাফলে অনেক শিক্ষার্থী সন্তুষ্ট থাকলেও অসন্তুষ্ট শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কম নয়। প্রসঙ্গত, করোনা মহামারির পর গত বছরই প্রথমবার পূর্ণ নম্বর ও পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়েছিল। আর এ বছর সাতটি বিষয়ে পরীক্ষা নেয়ার পর বাকিগুলো আর নেয়া সম্ভব হয়নি ছাত্র-জনতার আন্দোলন এবং সরকার পতনের পরের ঘটনাপ্রবাহের কারণে।
ফলাফলের সার্বিক চিত্র : এ বছর ৯ হাজার ১৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছেন ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। এবার নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৫ দশমিক ৫৬ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৩১ হাজার ৩৭৬ জন। আলিমে পাসের হার ৯৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৯ হাজার ৬১৩ জন। এইচএসসি (ভোকেশনাল/বিএস/ডিপ্লোমা ইন কমার্স) পাসের হার ৮৮ দশমিক ০৯ শতাংশ। জিপিএ ৫ পেয়েছেন ৪ হাজার ৯২২ জন।
জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ এম এম মুজিবুর রহমান বলেন, এবার দেশের অস্থিতিশীল পরিস্থিতির কারণে সব বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া যায়নি। যদি সব বিষয়ে পরীক্ষা নেয়া যেত তাহলে ভালো হতো। ম্যাপিং করার কারণে জিপিএ ৫ বাড়লেও পাসের হার কমেছে।
জিপিএ ৫ বেড়েছে ৬৩ শতাংশ : এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সারাদেশে মোট জিপিএ ৫ পেয়েছেন ১ লাখ ৪৫ হাজার ৯১১ জন। ২০২৩ সালে জিপিএ ৫ পেয়েছিলেন ৯২ হাজার ৩৬৫ জন শিক্ষার্থী। সে হিসেবে এবার জিপিএ ৫ পাওয়ার সংখ্যা বেড়েছে ৫৩ হাজার ৫৪৬ জন, যা শতকরা হিসাবে ৬৩ দশমিক ৩০ শতাংশ প্রায়। এবার ঢাকা বোর্ডে ৪৮ হাজার ৫৪৮, রাজশাহী বোর্ডে ২৪ হাজার ৯০২, কুমিল্লা বোর্ডে ৭ হাজার ৯২২, যশোর বোর্ডে ৯ হাজার ৭৪৯, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৫ হাজার ৭৫৯, বরিশাল বোর্ডে ৪ হাজার ১৬৭, সিলেট বোর্ডে ৬ হাজার ৬৯৮, দিনাজপুর বোর্ডে ১৪ হাজার ২৯৫, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৪ হাজার ৮২৬, মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৯ হাজার ৬১৩, কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে ৪ হাজার ৯২২ জন জিপিএ ৫ পেয়েছেন। এবার সব চেয়ে বেশি জিপিএ ৫ পেয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ৪৮ হাজার ৫৪৮, আর সব চেয়ে কম জিপিএ ৫ পেয়েছে বরিশাল ৪ হাজার ১৬৭ জন।
পাসের হার বেশি সিলেটে, কম ময়মনসিংহে : এবার পাসের হারে এগিয়ে আছে সিলেট বোর্ড এবং সবচেয়ে কম পাস করেছে ময়মনসিংহ বোর্ডে। সিলেট বোর্ডে পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ এবং ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। অপর দিকে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১, রাজশাহী ৮১ দশমিক ২৪, কুমিল্লা ৭১ দশমিক ১৫, যশোর ৬৪ দশমিক ২৯, চট্টগ্রাম ৭০ দশমিক ৩২, বরিশাল ৮১ দশমিক ৮৫, দিনাজপুর ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী ৯টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে সিলেট শিক্ষা বোর্ড পাসের হারে সর্বোচ্চ বেশি ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। আর সব চেয়ে কম ময়মনসিংহ ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ।
ফলাফলে ইংরেজি ও আইসিটির ধাক্কা : এবারের ফলফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ৯টি সাধারণ বোর্ডের পরীক্ষায় ইংরেজি ও আইসিটি এবং বাণিজ্য বিভাগের হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে পরীক্ষার ফল খুব একটা ভালো হয়নি। এর মধ্যে সিলেট বোর্ডে বন্যার কারণে ইংরেজি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। এই তিন বিষয়ে ফলাফল খারাপের ধাক্কা সার্বিক ফলাফলের ওপর পড়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এবার ঢাকা বোর্ডে ইংরেজিতে পাসের হার ৮৬ দশমিক ১৬ শতাংশ, আইসিটিতে ৮৯ দশমিক ৫৯ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞানে ৮৮ দশমিক ৮৭ শতাংশ, রাজশাহীতে ইংরেজিতে ৮৩ দশমিক ৯৮ শতাংশ, আইসিটিতে ৯৭ দশমিক ৫৭ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞানে ৮৫ দশমিক ৯৫ শতাংশ, কুমিল্লায় ইংরেজিতে ৭৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ, আইসিটিতে ৮৮ দশমিক ৬৪ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞানে ৮৭ দশমিক ৮১ শতাংশ, যশোরে ইংরেজিতে ৬৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ, আইসিটিতে ৮৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞানে ৮৬ দশমিক ৮৭ শতাংশ, চট্টগ্রামে ইংরেজিতে ৬৯ দশমিক শূন্য শতাংশ, আইসিটিতে ৮৪ দশমিক ৮৬ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞানে ৮২ দশমিক ৭২ শতাংশ, বরিশালে ইংরেজিতে ৮৩ দশমিক ৩৬ শতাংশ, আইসিটিতে ৯৮ দশমিক ৯৮ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞানে ৮৬ দশমিক ৫৪ শতাংশ, সিলেটে ইংরেজি পরীক্ষা না হওয়ার শতভাগ, পরীক্ষা হওয়া আইসিটিতে ৮৭ দশমিক ৭৮ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞানে ৭৪ দশমিক ৩৫ শতাংশ, দিনাজপুরে ইংরেজিতে ৮৩ দশমিক ৪৬ শতাংশ, আইসিটিতে ৭৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞানে ৯৪ দশমিক ১৭ শতাংশ, ময়মনসিংহে ইংরেজিতে ৭৭ দশমিক ১১ শতাংশ, আইসিটিতে ৭৩ দশমিক ৭১ শতাংশ, হিসাব বিজ্ঞানে ৭১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে সবমিলিয়ে ময়মনসিংহ বোর্ডে পাসের হার চার বছরের মধ্যে সর্বনি¤œ। ফলাফল নি¤œমুখী হওয়ার প্রসঙ্গে বোর্ডটির চেয়ারম্যান মো. আবু তাহের বলেন, চলতি বছরের ফলাফলে আমরা দেখেছি, ইংরেজি ও তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খারাপ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর মধ্যে আইসিটি পরীক্ষায় অকৃতকার্যের সংখ্যা বেশি। বিশেষ করে মানবিক শাখার শিক্ষার্থী ও প্রান্তিক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা আইসিটিতে দুর্বল থাকার কারণে বেশি অকৃতকার্য হয়েছেন। মানবিকে পাসের হার একেবারে কমে গেছে। আইসিটির কারণে বিপর্যয় ঘটেছে। বিজ্ঞানে পাসের হার সন্তোষজনক।
এবারো এগিয়ে মেয়েরা : গত কয়েক বছরে ধারাবাহিকতায় এবার পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে মেয়েরা। এবার সব শিক্ষা বোর্ডে অংশগ্রহণ করেছে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৪৫ জন ছাত্রী। এর মধ্যে পাস করেছে ৫ লাখ ৩১ হাজার ৭১৪ জন আর জিপিএ ৫ পেয়েছে ৮০ হাজার ৯৩৩ জন, পাসের হার ৭৯ দশমিক ৯৫ শতাংশ। আর সব বোর্ডে অংশ গ্রহণ করেছে ৬ লাখ ৬৬ হাজার ১৩ জন ছাত্র। এর মধ্যে পাশ করেছে ৫ লাখ ৩ হাজার ৫৯৫ জন আর জিপিএ ৫ পেয়েছে ৬৪ হাজার ৯৭৮ জন, পাসের হার ৭৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। অর্থাৎ ছেলেদের চেয়ে মেয়েদের পাসের হার ৪ দশকি ৩৪ শতাংশ আর জিপিএ ৫ ১৫ হাজার ৯৫৫টি বেশি।
পাসে এগিয়ে মাদ্রাসা বোর্ড, জিপিএ ৫ এ ঢাকা : পরীক্ষায় পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডের অধীনে আলিম পরীক্ষায় পাসের হার ৯৩ দশকি ৪০ শতাংশ। পাসের হারে পিছিয়ে ময়মনসিংহ বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৬৩ দশমিক ২২ শতাংশ। তবে নয়টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হারে এগিয়ে রয়েছে সিলেট বোর্ড। পাসের হার ৮৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তবে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির দিক থেকে প্রথমে রয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ডটির ৪৮ হাজার ৫৪৮ জন শিক্ষার্থী জিপিএ ৫ পেয়েছেন। ফলাফল পর্যালোচনা করে জানা যায়, ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে পাসের হার ৭৯ দশমিক ২১ শতাংশ, চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭০ দশমিক ৩২ শতাংশ, বরিশাল শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৮৫ শতাংশ, রাজশাহী শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ২৪ শতাংশ, কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭১ দশমিক ১৫ শতাংশ, যশোর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৬৪ দশমিক ২৯ শতাংশ, দিনাজপুর শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার ৭৭ দশমিক ৫৬ শতাংশ। পাসের হারে সিলেট বোর্ড এগিয়ে থাকা প্রসঙ্গে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির সভাপতি ও ঢাকা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক তপন কুমার সরকার বলেছেন, অন্যান্য বোর্ডে ৭টি পরীক্ষা হলেও সিলেট বোর্ডে পরীক্ষা হয়েছে মাত্র তিনটি। বন্যার কারণে সিলেটে পরীক্ষা দেরিতে শুরু হয়েছিল। তিনটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার পর শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে বাকি পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে সরকার।
পাস করেনি প্রায় ৩ লাখ : এবার ৯ হাজার ১৯৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ১০ লাখ ৩৫ হাজার ৩০৯ জন। অর্থাৎ উত্তীর্ণ হতে পারেনি ২ লাখ ৯৫ হাজার ৭৪৯ জন।
শূন্য পাস কলেজ এবার ৬৫টি : এবার দেশের ৬৫টি কলেজ থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া কেউ পাস করতে পারেনি। গত বছর শূন্য পাস করা কলেজের সংখ্যা ছিল ৪২টি। সেই হিসাবে এবার শূন্য পাস কলেজের সংখ্যা বেড়েছে। এ সংখ্যা ২৩টি। এছাড়া এবার শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১ হাজার ৩৮৭টি। যা গতবার ছিল ৯৫৩টি। সেই হিসেবে শতভাগ পাস প্রতিষ্ঠান বেড়েছে ৩৮৫টি।
প্রবাসে বসে পরীক্ষা দিয়ে পাস ২৬৯ জন : এবার ৮টি বিদেশ কেন্দ্রে বসে ২৮২ জন পরীক্ষা দিয়ে পাস করেছে ২৬৯ জন। সেই হিসাবে পাসের হার ৯৫ দশমিক ৩৯ শতাংশ। তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে অংশ নেয়া সব (শতভাগ) শিক্ষার্থী পাস করেছেন।
যেভাবে হয়েছে বিষয় ম্যাপিং : বিষয় ম্যাপিং নতুন নয়। এর আগে করোনাকালে পরীক্ষা নিতে না পারায় কিংবা কম বিষয়ে পরীক্ষা নিতে গিয়ে এই বিষয় ম্যাপিং করে ফলাফল প্রকাশ করা হতো। এ জন্য কোনো পরীক্ষার কোন বিষয়ের নম্বর যুক্ত হবে, সে বিষয়ে একটি নীতিমালাও আছে। এবার যেসব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি, সেগুলোর ফলাফল প্রকাশ করা হয় এসএসসি বা সমমানের পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বিষয় ম্যাপিং করে। এ প্রক্রিয়ায় একজন পরীক্ষার্থী এসএসসিতে একটি বিষয়ে যত নম্বর পেয়েছিলেন, এইচএসসিতে সেই বিষয় থাকলে তাতে এসএসসিতে প্রাপ্ত পুরো নম্বর বিবেচনায় নেয়া হবে। আর এসএসসি, এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় বিষয়ে ভিন্নতা থাকলে বিষয় ম্যাপিংয়ের নীতিমালা অনুযায়ী নম্বর বিবেচনা করে ফলাফল প্রকাশ করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, এবার এইচএসসি বা সমমানের পরীক্ষা শুরু হয়েছিল গত ৩০ জুন। মোট অংশগ্রহণকারী পরীক্ষার্থী ছিলেন ১৩ লাখ ৩১ হাজার ৫৮ জন। সাতটি পরীক্ষা হওয়ার পর সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। এ পরিস্থিতিতে কয়েক দফায় পরীক্ষা স্থগিত করা হয়। তখন পর্যন্ত ছয়টি বিষয়ের পরীক্ষা বাকি ছিল। এছাড়া ব্যবহারিক পরীক্ষাও বাকি। একপর্যায়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন সরকার পতনের এক দফায় রূপ নেয়। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার সরকারের পতন হয়। পরে সিদ্ধান্ত হয় যে ১১ আগস্ট থেকে নতুন সময়সূচিতে পরীক্ষা নেয়া হবে; যদিও তা হয়নি।