সিলেটের 'মিনিস্টার বাড়ি' রক্ষার দাবিতে মানববন্ধন
জাকারিয়া হোসেন জোসেফ , সিলেট থেকে
প্রকাশ: ২৫ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৫১ পিএম
ছবি : ভোরের কাগজ
সিলেটের ঐতিহাসিক ‘মিনিস্টার বাড়ি’ ভাঙার কাজ স্থগিত রাখার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্দেশনা কার্যকর করা হচ্ছে না, এই অভিযোগ তুলেছে পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টে। ঐতিহ্যবাহী বাড়িটি ভাঙার প্রতিবাদে শনিবার (২৫ অক্টোবর) দুপুরে নগরীর পাঠানটুলার বাড়িটির সামনে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের উদ্যোগে আয়োজিত এই কর্মসূচিতে আসাম স্মৃতি ও ঐতিহ্য রক্ষার দাবি জানানো হয় এবং সরকারের কাছে বাড়িটি সংরক্ষণের জন্য জোর দাবি জানানো হয়।
প্রায় শতবর্ষী এই বাড়িটির সঙ্গে আসাম ও পূর্ব পাকিস্তানের ইতিহাসের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। এটি নির্মাণ করেছিলেন আইনজীবী, শিক্ষাবিদ এবং প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আবদুল হামিদ, যিনি ব্রিটিশ ভারতের আসাম ব্যবস্থাপক সভার সদস্য ও শিক্ষামন্ত্রী ছিলেন। ১৯৪৭ থেকে ১৯৫৪ সাল পর্যন্ত তিনি পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এই পরিচয়ের কারণে স্থানীয়ভাবে বাড়িটি ‘মিনিস্টার বাড়ি’ নামে পরিচিত।
আরো পড়ুন : ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় আধিপত্য নিয়ে সংঘর্ষে নিহত ১
এই ঐতিহাসিক স্থাপনায় একসময় উপমহাদেশের খ্যাতনামা ব্যক্তিত্বদের পদধূলি পড়েছে, যেমন মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক, এবং জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।
জানা গেছে, ব্যক্তিমালিকানাধীন এই বাড়িটি প্রায় ১৮ লাখ টাকায় একজন ভাঙারি ব্যবসায়ীর কাছে বিক্রি হয়েছে। সম্প্রতি ভাঙার কাজ শুরু হলে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তীব্র সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
গত শুক্রবার প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের গবেষণা সহকারী মো. ওমর ফারুক বাড়িটি পরিদর্শন করেন এবং আগামী রোববার পর্যন্ত ভাঙার কাজ স্থগিত রাখার নির্দেশ দেন। তবে ট্রাস্টের অভিযোগ, সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে ভাঙার কাজ চালিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আজকের মানববন্ধনে পরিবেশ ও ঐতিহ্য সংরক্ষণ ট্রাস্টের সদস্য, সাংবাদিক, শিক্ষকসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। বক্তারা একমত পোষণ করেন, মিনিস্টার বাড়ি শুধুই একটি ভবন নয়, এটি সিলেট অঞ্চলের আসাম আমলের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের জীবন্ত দলিল।
ভূমিসন্তান বাংলাদেশের সমন্বয়ক আশরাফুল কবির বলেন, বাড়িটি সিলেটের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের অবিচ্ছেদ্য অংশ। পরিবারের সদস্যরা এটিকে ভেঙে না ফেলে জাদুঘর করার উদ্যোগ নিতে পারতেন।
বক্তারা সরকারের প্রতি অবিলম্বে এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি রক্ষা ও সংরক্ষণের জন্য দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান। ঐতিহ্যপ্রেমীরা আশা করছেন, এই মানববন্ধন এবং জনসচেতনতার প্রভাবেই সরকার দ্রুত হস্তক্ষেপ করবে এবং সিলেটে আসাম আমলের এই গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শনটি সংরক্ষিত থাকবে।
