×

টেলিকম

বিটিসিএল এসটিএন প্রকল্প: কারচুপির পরও পিডির কল্যাণে কাজ পাচ্ছে জিনিউ

মিজানুর রহমান সোহেল

মিজানুর রহমান সোহেল

প্রকাশ: ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৮:৪৩ পিএম

বিটিসিএল এসটিএন প্রকল্প: কারচুপির পরও পিডির কল্যাণে কাজ পাচ্ছে জিনিউ

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। গ্রাফিক্স ভোরের কাগজ

গ্রাহকের সেবার মানবৃদ্ধি রাজস্ব আয়সহ কলড্রপ হ্রাসের লক্ষ্যে ডিজিটাল কানেক্টিভিটি শক্তিশালীকরণে সুইচিং ও ট্রান্সমিশন নেটওয়ার্ক (এসটিএন) প্রকল্প হাতে নিয়েছে বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনস কোম্পানি লিমিটেড (বিটিসিএল)। তবে প্রকল্প পরিচালকের স্বেচ্ছাচারিতায় অযাচিত হস্তক্ষেপে মুখ থুবড়ে পড়তে পারে প্রকল্পটি। অখ্যাত ও জাল অভিজ্ঞতা সনদ প্রদান করা প্রতিষ্ঠান জিনিউকে কাজ পাইয়ে দেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছেন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) তৌফিকুল ইসলাম। 

নানা অনিয়মের কারণে দ্বিতীয় দফায় পুনরায় দরপত্র আহবান করলে স্বয়ং প্রকল্প পরিচালক নিজ উদ্যোগে গত ১৩ আগস্ট কারিগরি বিনির্দেশ কমিটির আহবায়কের কাছে চিঠি দিয়ে আইসিএক্সের নূন্যতম ক্যাপাসিটি ৫০ হাজার এসআইপি ট্রাঙ্ক কমিয়ে ৩২ হাজার ৫০০ এসআইপি ট্রাঙ্ক করার সুপারিশ করেন, যা দরপত্র চলাকালীন সুনির্দিষ্ট অনৈতিক হস্তক্ষেপ। পাশাপাশি অখ্যাত কোম্পানি জিনিউ টেকনলোজিস লিমিটেডের স্বার্থের কথাও সেখানে উল্লেখ করেন। তার এই স্বেচ্ছাচারী আচরণ প্রশ্নবিদ্ধ করেছে খোদ বিটিসিএলকে। এ সংক্রান্ত সকল প্রমাণপত্র ভোরের কাগজের হাতে এসেছে।

গত ২১ এপ্রিল এই দরপত্রে অংশ নেয় হুয়াওয়ে ও জিনিউ। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সদস্য সচিব হিসেবে প্রকল্প পরিচালক নিজেই সব কারিগরি প্রস্তাব ও তথ্য যাচাই-বাছাই করেন করে মূল্যায়ন প্রতিবেদন জমা দেন। সেই প্রতিবেদন চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য বিটিসিএলের পরিচালনা পরিষদ সভায় উপস্থিত করা হলে উক্ত পরিষদ সন্দেহ করে। তখন ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তৎকালীন যুগ্ম-সচিব (পরিচালনা পরিষদের সদস্য) শেখ সালেহ আহমেদকে আহবায়ক করে তিন সদস্য বিশিষ্ট একটি অধিকতর যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে। 

জানা গেছে, মূল্যায়ন প্রতিবেদন ও প্রস্তাবিত দরপত্র যাচাই করে গুরুতর অসঙ্গতির প্রমাণ পায় কমিটি। জিনিউ থেকে প্রদান করা প্রতিষ্ঠানের অভিজ্ঞতা সনদটিও জাল হিসেবে প্রমাণ হয়। এই ধরণের অপরাধের শাস্তি স্বরূপ পিপিএ-এর ৬৪ ও পিপিআর-এর ১২৭ অনুচ্ছেদের ৪ অনুযায়ী, এরকম দরদাতার প্রস্তাব সরাসরি বাতিল ও দরদাতার বিরুদ্ধে আইনগত শাস্তির বিধান রয়েছে। 

শুধু তাই নয়, প্রকল্পের দরপত্র অনুযায়ী ৫০ হাজার এসআইপি ট্রাঙ্ক-এর সক্ষমতাসম্পন্ন যন্ত্রপাতি সরবরাহের দাবী করে জিনিউ দরপত্র জমা দিলেও সেগুলোর সক্ষমতা প্রমাণে ব্যর্থ হয় তারা। যা সরাসরি ম্যাটেরিয়াল ডিভিশন ও দরপত্র বাতিলের জন্য যথেষ্ট। 

এসটিএন প্রকল্পের অযাচিত হস্তক্ষেপ এবং একটি অযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেয়ার বিষয়ে জানতে প্রকল্প পরিচালক তৌফিকুল ইসলামের সঙ্গে বারবার যোগাযোগ করেও পাওয়া যায়নি। তার হোয়াটসঅ্যাপ নাম্বারে ম্যাসেজ করেও রিপ্লাই পাওয়া যায়নি। 

তবে এ দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি সদস্য ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের তৎকালীন যুগ্ম-সচিব (পরিচালনা পরিষদের সদস্য) শেখ সালেহ আহমেদ ভোরের কাগজকে বলেন, আমরা যাচাই-বাছাই কমিটি ডকুমেন্টগুলো চেক করে দেখেছি। আমাদের অনুসন্ধানে জিনিউ টেকনলোজিস লিমিটেডের ডকুমেন্টগুলো জাল মনে হয়েছে। নিজস্ব ডোমেইন থেকে মেইল করার কথা থাকলেও তারা জিমেইল থেকে মেইল করেছিল। আমরা অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে আপোষহীন ছিলাম। ফলে সব কিছু বিবেচনা করে আমরা পুনরায় টেন্ডার করার জন্য পরামর্শ দিয়েছিলাম। 

তিন সদস্য বিশিষ্ট যাচাই-বাছাই কমিটি ক্রয় সংক্রান্ত কাজের দরপ্রস্তাব বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহবান করার এবং অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠান জিনিউয়ের বিরুদ্ধে পিপিএ এবং পিপিআর অনুযায়ী আইনগত ব্যবস্থা নেয়ার সুপারিশ করে। প্রতিবেদনের সুপারিশের ভিত্তিতে দরপত্রটি বাতিল করে পুনরায় দরপত্র আহবানের নির্দেশ করা হয়। যার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৯ জুলাই প্রকল্প পরিচালক দরপত্রটি পুনরায় আহবান করে।

এদিকে জিনিউ-এর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া তো দূরে থাক, বরং কারিগরি বিনির্দেশ কমিটির আহবায়ক বরাবর প্রকল্প পরিচালক নিজ উদ্যোগে আইসিএক্সের নূন্যতম ক্যাপাসিটি ৫০ হাজার এসআইপি ট্রাঙ্ককে কমিয়ে ৩২ হাজার ৫০০ করার সুপারিশ করেন যাতে জিনিউ এবার কোন ঝামেলা ছাড়া কাজ পেয়ে যায়। তার প্রেক্ষিতে, প্রকল্প পরিচালক ১৪ আগস্টে এই সংক্রান্ত সংশোধনী প্রকাশ করে।

নতুন দরপত্রটি ২৮ আগস্টে জমা নেয়া হয়। তারপর প্রকল্প পরিচালক তড়িঘড়ি করে মূল্যায়ন কমিটিকে প্রভাবিত করে তথ্য গোপনের আশ্রয় নিয়ে জিনিউয়ের অনুকূলে আবারো প্রতিবেদন দাখিল করে।  

গত ১১ সেপ্টেম্বর পরিচালনা পরিষদের সভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য প্রস্তাব করা হয়। পরিচালনা পরিষদ আবারও সন্দেহ প্রকাশ করায় দ্বিতীয় দফায় তিন সদস্য বিশিষ্ট যাচাই-বাছাই কমিটি গঠন করে যার আহবায়ক করা হয় মিজানুর রহমানকে। 

কমিটির এ পর্যন্ত অনুসন্ধান সম্পর্কে মিজানুর রহমানকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি কোন মন্তব্য করেননি। 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্প পরিচালক গতবারের যাচাই-বাছাই কমিটির প্রতিবেদনটি নথিপত্র থেকে গায়েব করে ফেলছে। বিশেষজ্ঞদের মতে আইসিএক্সের ক্যাপাসিটি এই এক তৃতীয়াংশ কমিয়ে ফেললে তা বর্তমান চাহিদা মেটাতে পারবে না।

এখানে আরও একটি বিষয় লক্ষ্য করা যায়। প্রথম দরপত্রে চাওয়া হয়েছিল ৫০ হাজার সিপিই ট্রাঙ্ক। আর দ্বিতীয়টায় চাওয়া হয় ৩২ হাজার ৫০০ সিপিই ট্রাঙ্ক। দ্বিতীয়বার কম সক্ষমতার প্রযুক্তির কারণে এর দাম কম হবার কথা। অথচ প্রথমবারের চেয়ে দ্বিতীয়বার প্রায় সোয়া দুই কোটি টাকা বেশি প্রস্তাব করে জিনিউ। 

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

জেলে পরিবারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও কার্ড থাকতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

জেলে পরিবারে পুরুষের পাশাপাশি নারীরও কার্ড থাকতে হবে: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা

শাহরুখ নাকি শাকিব, কাকে পছন্দ হানিয়া আমিরের?

শাহরুখ নাকি শাকিব, কাকে পছন্দ হানিয়া আমিরের?

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া

ফিলিস্তিনকে স্বাধীন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি দিলো যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া

বিটিসিএল এসটিএন প্রকল্প: কারচুপির পরও পিডির কল্যাণে কাজ পাচ্ছে জিনিউ

বিটিসিএল এসটিএন প্রকল্প: কারচুপির পরও পিডির কল্যাণে কাজ পাচ্ছে জিনিউ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App