×

মুক্তচিন্তা

রক্তের ঋণ শোধ হবে ক্ষমতার আসনে—এবার গরিবই রাষ্ট্র চালাবে

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

রহমান মৃধা, সুইডেন থেকে

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৮:০৬ এএম

রক্তের ঋণ শোধ হবে ক্ষমতার আসনে—এবার গরিবই রাষ্ট্র চালাবে

রক্তের ঋণ শোধ হবে ক্ষমতার আসনে—এবার গরিবই রাষ্ট্র চালাবে

২১শে ফেব্রুয়ারি—রক্তে ভিজে ছিল মায়ের ভাষা। ১৯৭১—রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল স্বাধীনতার স্বপ্ন। ২৪শে মার্চ—রাস্তায় গড়িয়েছিল শহীদের দেহ। কারা জীবন দিয়েছিল? কোনো সচিব, কোনো মন্ত্রী, কোনো উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা? ইতিহাসে তাদের নাম নেই। নাম আছে অচেনা ছাত্র, টঙের দোকানদার, রিকশাচালক, গার্মেন্টসকর্মী, কৃষক, শ্রমিক—যারা নিজের রক্ত দিয়ে দেশকে বাঁচিয়েছে। অথচ স্বাধীনতার পর এই দেশ চুপিচুপি কব্জা করে নিয়েছে পরিবারতন্ত্র, বংশানুক্রমিক রাজনীতি আর এলিট আমলাতন্ত্র—যারা জনগণের ঘাড়ে বসে দেশকে শ্বাসরোধ করেছে, দুর্নীতির বিষে ভরিয়ে দিয়েছে। এই প্রথা আর নয়—খুব হয়েছে। এবার দরকারে দেশ চালাবে টোকাইরা, কারণ এই দেশের ১৮ কোটি মানুষের প্রায় ৯০% তো টোকাই—অর্থাৎ গরিব, প্রান্তিক, বঞ্চিত। দেশের মালিক তারাই, দেশের রক্ত তারাই দিয়েছে। আর গরিব বোঝে গরিবের জ্বালা—এই বোঝাপড়াই পারে দেশকে বাঁচাতে, যা ধনিকের প্রাসাদে জন্ম নেওয়া কখনোই বুঝবে না।

কোনো রকম রাজনৈতিক অর্জন ছাড়াই সুবিধাভোগীরা ওয়েস্টিনে যেতে পারবেন; কিন্তু গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়ে বাংলাদেশকে স্বৈরশাসনের হাত থেকে মুক্ত করে নতুন সরকার গঠন করে সেই সরকারের দুইটি মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থেকেও একজন মানুষ ওয়েস্টিনে যেতে পারবেন না—যেতে হলে তাঁদের ‘উচ্চবংশীয় অনুমতি’ লাগবে।

আগে যারা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যান্টিনে পাতলা ডালের জন্য লাইন দিত, আজ তারা ওয়েস্টিনে হাঁসের মাংস খোঁজে—যেন এর মাঝখানে ইতিহাস থেমে গেছে, যেন কোনো রক্তপাত হয়নি, যেন কোনো ছাত্রনেতা বুক চিতিয়ে ট্যাংক, গুলি আর গ্রেনেডের সামনে দাঁড়ায়নি।

সমস্যা বিলাসবহুল নাশতার টাকার অভাব নয়। সমস্যাটা হলো—এই শ্রেণি মানতে পারে না যে কোনো সাধারণ ছাত্র, কোনো পারিবারিক লিগ্যাসি ছাড়া, দেশের মন্ত্রী হতে পারে। তাদের চোখে রাষ্ট্রের মালিকানার জন্মগত অধিকার শুধু রাজনীতিবিদ পরিবারের সন্তানদের। সাধারণ মানুষ শুধু ভোট দেবে, কর দেবে, আর তাদের সন্তানরা চিরকাল শাসন করবে—এই তাদের মানসিকতা।

তাদের কল্পনায় ইতিহাস এভাবেই চলতে হবে: বারবার নব্বই ঘটুক, ছাত্ররা বুকের ওপর ট্রাক নিয়ে মরুক, হেলিকপ্টার থেকে গুলি খাক, ফ্যাসিবাদী শাসন পতন ঘটুক—কিন্তু বিজয়ের পর ছাত্ররা সব ক্ষমতা রাজনৈতিক দলের হাতে তুলে দিক, যেন তারা সানাই বাজাতে বাজাতে নিজেরাই অন্ধকারে মিলিয়ে যায়। ছাত্ররা সারাজীবন ক্যান্টিনের পাতলা ডাল খাবে, গণরুমের নির্যাতন সহ্য করবে, আর ক্ষমতার সিংহাসনে বসবেন রাজনীতিবিদ ও তাদের সন্তানরা।

এই মানসিকতা শুধু লজ্জাজনক নয়, দেশের জন্য মারাত্মক বিপজ্জনক। যদি ছাত্রদের রক্তে গড়া স্বাধীন বাংলাদেশ আবার সেই একই দুর্নীতিবাজ পরিবারতন্ত্র, বেতনভোগী আমলাতন্ত্র আর অভিজাত এলিটের হাতে ফেরত যায়—তাহলে মুক্তি হবে না, শুধু শাসকের নাম বদলাবে।

প্রয়োজনে দেশের চৌকাঠরাই দেশ চালাক—তবু যেন এই স্বার্থপর শ্রেণির হাতে দেশ আর না ফেরে। গণঅভ্যুত্থান যদি কোনো শিক্ষা দেয়, তবে তা হলো: যারা লড়াই করে, যারা জীবন দেয়, তারাই রাষ্ট্র পরিচালনায় ভাগীদার হবে—না হলে আরেকটি স্বৈরাচারের জন্ম হবে।

তাদের বক্তব্যে যে দগদগে শ্রেণিঘৃণা, তা ঢেকে রাখা সম্ভব নয়। আর সত্যিই যদি ইতিহাস খুঁড়ে দেখা হয়, অনেকের ‘উচ্চবংশীয়’ গল্পের ভেতর থেকে বের হয়ে আসবে অপ্রিয়, কুৎসিত এবং লজ্জার ইতিহাস।

এ কারণে কোনো এক জ্ঞানী বলেছেন: Those who live in glass houses should not throw stones at others.

ইতিহাস প্রমাণ করেছে—যারা রক্ত দেয়, যারা লড়াই করে, তারাই প্রকৃত মালিক। স্বাধীনতা, গণতন্ত্র বা ন্যায়বিচার—এসব কারও পারিবারিক সম্পত্তি নয়, জনগণের অর্জন। তাই যে দেশে গরিবের রক্তে মুক্তি কেনা হয়, সেখানে গরিবকেই ক্ষমতার আসনে বসতে হবে। নইলে বিপ্লব শুধু শাসকের নাম পাল্টাবে, শোষণের রূপ পাল্টাবে না। এবার সময় এসেছে—রাষ্ট্রের চাবি ফিরিয়ে দিতে সেই হাতে, যে হাত কলম ধরতে জানে, কিন্তু প্রয়োজনে অস্ত্রও ধরতে পারে; যে হাত ক্ষমতার জন্য নয়, মানুষের জন্য লড়ে। মনে রাখবেন, যে জাতি নিজের রক্তের মর্যাদা দিতে শেখে না, সে জাতি আবার শৃঙ্খলে বন্দি হয়—এবং সেখান থেকে মুক্তি পেতে হলে আবার রক্ত দিতে হয়।

রহমান মৃধা, গবেষক ও লেখক, (সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন), [email protected]

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধসে ৩৪৪ জনের মৃত্যু

পাকিস্তানে ভয়াবহ বন্যা-ভূমিধসে ৩৪৪ জনের মৃত্যু

জুলাই সনদেই আগামী নির্বাচন চায় জামায়াত-এনসিপি, বাস্তবায়ন প্রশ্নে ভিন্ন অবস্থানে বিএনপি

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদন জুলাই সনদেই আগামী নির্বাচন চায় জামায়াত-এনসিপি, বাস্তবায়ন প্রশ্নে ভিন্ন অবস্থানে বিএনপি

জাতীয় নির্বাচন নয়, আগে গণপরিষদ নির্বাচন দাবি এনসিপির

জাতীয় নির্বাচন নয়, আগে গণপরিষদ নির্বাচন দাবি এনসিপির

ইনজুরি কাটিয়ে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন মেসির

ইনজুরি কাটিয়ে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন মেসির

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App