মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকের প্রস্তুতি নিচ্ছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় প্রস্তাবিত ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনা এবং ইউক্রেনের জন্য মার্কিন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা—এই দুই বিষয় বৈঠকের মূল আলোচ্যসূচি হতে পারে।

শুক্রবার (২৭ ডিসেম্বর) বিবিসির এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, স্থানীয় সময় রোববার (২৮ ডিসেম্বর) যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডায় দুই প্রেসিডেন্টের মধ্যে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।

মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এবং প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের জামাতা জ্যারেড কুশনারের সঙ্গে আলোচনা শেষে জেলেনস্কি জানান, এই সংলাপে এমন কিছু ‘নতুন ধারণা’ উঠে এসেছে, যা প্রকৃত শান্তির পথে এগিয়ে যেতে সহায়ক হতে পারে।

আরো পড়ুন : শীতকালীন ঝড় ডেভিনে যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাপক ফ্লাইট বিপর্যয়

বৃহস্পতিবার মার্কিন প্রতিনিধিদের সঙ্গে প্রায় এক ঘণ্টা টেলিফোনে কথা বলার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জেলেনস্কি বলেন, ‘আমরা কাজের নির্দিষ্ট কিছু দিক নিয়ে আলোচনা করেছি। সত্যিকারের শান্তিকে কীভাবে কাছাকাছি আনা যায়—সে বিষয়ে আলোচনার কাঠামো, বৈঠক এবং সময়সূচি নিয়ে নতুন কিছু ধারণা এসেছে।’

জেলেনস্কির ভাষ্য অনুযায়ী, প্রস্তাবিত শান্তি পরিকল্পনার কাজ প্রায় ৯০ শতাংশ সম্পন্ন হয়েছে এবং শতভাগ প্রস্তুত করাই কিয়েভের লক্ষ্য। তিনি আশা প্রকাশ করেন, নতুন বছরের আগেই এই উচ্চপর্যায়ের বৈঠক থেকে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত আসতে পারে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, একদিন আগে ফ্লোরিডায় মার্কিন ও ইউক্রেনীয় প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে হালনাগাদ করা ২০ দফা শান্তি পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন জেলেনস্কি। বর্তমানে এই পরিকল্পনা নিয়ে নিবিড় দর-কষাকষি চলছে।

প্রস্তাবিত পরিকল্পনায় ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহার এবং সেখানে একটি অসামরিক অঞ্চল গঠনের কথা বলা হয়েছে। তবে জেলেনস্কি স্পষ্ট করেছেন, যে অঞ্চলগুলো থেকে ইউক্রেনীয় সেনারা সরে আসবে, সেখানে নিরাপত্তার দায়িত্ব ইউক্রেনীয় পুলিশই পালন করবে।

এই পরিকল্পনার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো—ভবিষ্যতে রাশিয়া আবারও আক্রমণ করলে যুক্তরাষ্ট্র, ন্যাটো এবং ইউরোপীয় দেশগুলো যৌথভাবে সামরিক প্রতিক্রিয়া জানাবে—এমন নিরাপত্তা নিশ্চয়তা।

তবে মস্কো ও কিয়েভের অবস্থানের মধ্যে এখনও বড় ধরনের ব্যবধান রয়ে গেছে। রাশিয়ার জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যে পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, তা ইউক্রেনের প্রস্তাবের সঙ্গে মৌলিকভাবে ভিন্ন। আলোচনায় ‘ধীর কিন্তু স্থির অগ্রগতি’র কথা বলা হলেও দনবাস অঞ্চল থেকে সেনা প্রত্যাহারের বিষয়ে জেলেনস্কির প্রস্তাবে কোনো মন্তব্য করেনি রাশিয়া।

জেলেনস্কি আরো ইঙ্গিত দিয়েছেন, দনবাস অঞ্চলের যে অংশগুলো রাশিয়া দখল করতে পারেনি, সেখানে একটি নিরস্ত্রীকৃত ‘ফ্রি ইকোনমিক জোন’ গঠনের বিষয়টিও আলোচনায় আসতে পারে।

এদিকে মার্কিন কর্মকর্তাদের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টারাও। ফ্লোরিডার বৈঠক শেষে ফেরার পর রাশিয়ার বিশেষ দূত কিরিল দিমিত্রিয়েভের উদ্যোগে এই যোগাযোগ আরো জোরদার হয়েছে। রুশ উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ সাম্প্রতিক আলোচনাকে ইতিবাচক বলে উল্লেখ করলেও, ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আলোচনায় বাধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন।