৩৫ বছর পর চাকসু নির্বাচন আজ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০৮:১৪ এএম

ছবি : সংগৃহীত
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (চাকসু) ও হল সংসদ নির্বাচনে আজ ৩৫ বছর পর ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়টিতে সর্বশেষ চাকসু নির্বাচন হয়েছিল ১৯৯০ সালে। দীর্ঘ বিরতির পর শিক্ষার্থীরা আজ আবার গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় নিজেদের প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার সুযোগ পাচ্ছেন।
বিগত তিন দশক ধরে নির্বাচন না হওয়ায় ক্যাম্পাস কার্যত প্রভাবশালী ছাত্রসংগঠন ও ক্ষমতাসীনদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানের পরিবর্তে সংগঠনগুলোর মধ্যে আধিপত্য বিস্তার ও সংঘর্ষ ছিল নিয়মিত ঘটনা। হলে আসন বণ্টন, মিছিল-সমাবেশে বাধ্যতামূলক অংশগ্রহণ, এমনকি সহিংসতার শিকারও হয়েছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
গত বছর জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র সংসদ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগ শুরু হয়। ইতোমধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে। যেখানে বেশির ভাগ পদে জয়ী হয় ছাত্রশিবির-সমর্থিত প্যানেল।
চট্টগ্রাম শহর থেকে প্রায় ২২ কিলোমিটার দূরে হাটহাজারী উপজেলার গা ঘেঁষে অবস্থিত চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৬৬ সালে কার্যক্রম শুরু করে। সেই সময়ই প্রতিষ্ঠিত হয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ—চাকসু। শিক্ষার্থীদের নেতৃত্ব বিকাশ, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম পরিচালনা ও অধিকার রক্ষার লক্ষ্যেই চালু হয়েছিল এই সংসদ। তবে দীর্ঘ সময় নির্বাচন না হওয়ায় এসব কার্যক্রম কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ৫৯ বছরে মোট ছয়বার চাকসু নির্বাচন হয়েছে, ১৯৭০, ১৯৭২, ১৯৭৪, ১৯৭৯, ১৯৮১ এবং ১৯৯০ সালে। প্রথম নির্বাচনে ভিপি হন মো. ইব্রাহিম ও জিএস হন মো. আবদুর রব। দুজনই ছাত্রলীগের নেতা। ১৯৭২ সালের নির্বাচনে ভিপি হন ছাত্র ইউনিয়নের শামসুজ্জামান হীরা এবং জিএস হন ছাত্রলীগের মাহমুদুর রহমান মান্না।
পরবর্তীতে ১৯৭৪ সালের নির্বাচনে ভিপি ও জিএস হন যথাক্রমে জাসদ ছাত্রলীগের এস এম ফজলুল হক ও গোলাম জিলানী চৌধুরী। ১৯৭৯ সালে জাসদ ছাত্রলীগের মাজহারুল হক শাহ চৌধুরী ভিপি ও ছাত্রলীগের জমির চৌধুরী জিএস নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে ইসলামী ছাত্রশিবিরের জসিম উদ্দিন সরকার ও আবদুল গাফফার যথাক্রমে ভিপি ও জিএস হন।
সর্বশেষ ১৯৯০ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি হওয়া নির্বাচনে ‘সর্বদলীয় ছাত্র ঐক্য’-এর মো. নাজিম উদ্দিন ভিপি ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের আজিম উদ্দিন আহমদ জিএস নির্বাচিত হন।
চাকসু নির্বাচনে এবার ভোটার ২৭ হাজার ৫১৬ জন, যার মধ্যে ছাত্রী ১১ হাজার ১৫৬ জন। নির্বাচনে মোট প্রার্থী ৯০৮ জন। এর মধ্যে কেন্দ্রীয় সংসদে ২৬ পদে লড়ছেন ৪১৫ জন এবং ১৪টি হল ও ১টি হোস্টেলে ৪৯৩ জন।
ভিপি পদে প্রতিদ্বন্দ্বী ২৪ জন, জিএস পদে ২২ জন এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে ২২ জন প্রার্থী রয়েছেন। প্রতিটি হলে ১৪টি করে পদ থাকায় মোট ২১০টি পদে নির্বাচন হচ্ছে। ছাত্রীদের ৫টি হলে ৭০টি পদে ১২৩ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
চাকসু নির্বাচনে মোট ১৩টি প্যানেল অংশ নিচ্ছে। এর মধ্যে রয়েছে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির-সমর্থিত ‘সম্প্রীতির শিক্ষার্থী জোট’, বামপন্থী ছাত্রসংগঠন ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর সমন্বয়ে গঠিত ‘বৈচিত্র্যের ঐক্য’, ছাত্র ইউনিয়ন ও সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের যৌথ প্যানেল ‘দ্রোহ পর্ষদ’, এবং জুলাই আন্দোলনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের জোট ‘বিনির্মাণ শিক্ষার্থী ঐক্য’।