×

অর্থনীতি

সঞ্চয়পত্রের সুদহার আরো কমাবে সরকার

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৯ পিএম

সঞ্চয়পত্রের সুদহার আরো কমাবে সরকার

ছবি : সংগৃহীত

সরকার ধীরে ধীরে সঞ্চয়পত্র থেকে ঋণ নেওয়ার প্রবণতা কমাচ্ছে। উচ্চ সুদের চাপ কমিয়ে তুলনামূলক সস্তা সুদের ট্রেজারি বিল ও বন্ডের দিকে ঝুঁকছে সরকার। এর অংশ হিসেবে আগামী জানুয়ারি থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আরো কমানো হবে। ফলে নতুন বছর থেকে সর্বোচ্চ সুদহার নেমে আসবে ১০ শতাংশের কাছাকাছি।

সরকার বাজেট ঘাটতি পূরণে সঞ্চয়পত্র, ট্রেজারি বিল ও বন্ড থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণ নেয়। তবে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার তুলনামূলকভাবে বেশি হওয়ায় এটি সরকারের জন্য ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ অবস্থায় ট্রেজারি বিল-বন্ডকে মূল অর্থায়নের উৎসে পরিণত করার পরিকল্পনা নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।

জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বর্তমানে ১১টি সঞ্চয় স্কিম পরিচালনা করছে। এর মধ্যে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র, দুটি ডাকঘর সঞ্চয় হিসাব, একটি ডাক জীবনবীমা, একটি প্রাইজবন্ড ও প্রবাসীদের জন্য তিনটি বিশেষ বন্ড রয়েছে।

বর্তমানে সঞ্চয়পত্রে সর্বোচ্চ সুদহার ১১.৯৮ শতাংশ এবং সর্বনিম্ন ৯.৭২ শতাংশ। চলতি বছরের জুলাইয়ে সুদহার ৪৭ থেকে ৫৭ বেসিস পয়েন্ট পর্যন্ত কমানো হয়। জানুয়ারিতে আরো এক থেকে দেড় শতাংশ কমানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ১৩ অক্টোবরের নিলামে ৯১ দিন মেয়াদি ট্রেজারি বিলের গড় সুদ ছিল ৯.৫০ শতাংশ, দুই বছর মেয়াদি বন্ডের গড় সুদ ৯.৪৪ শতাংশ, আর ১০ বছর মেয়াদি বন্ডের গড় সুদ ৯.৯০ শতাংশ। ফলে সঞ্চয়পত্রের তুলনায় ট্রেজারি বিল ও বন্ড এখন সরকারের জন্য সস্তা ঋণের উৎস।

সুদের হার কমার প্রভাবে সঞ্চয়পত্রের বিক্রি ধারাবাহিকভাবে কমছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য বলছে, চলতি অর্থবছরে (২০২৪–২৫) নিট বিক্রি ঋণাত্মক ৬ হাজার ৬৩ কোটি টাকা। আগের অর্থবছরে এই ঘাটতি ছিল ২১ হাজার ১২৪ কোটি টাকা, যা ছিল কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এই নীতি সরকারের ঋণ ব্যয় কমাবে, কিন্তু অবসরপ্রাপ্ত, প্রবীণ ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত সঞ্চয়কারীদের ওপর বাড়তি চাপ ফেলবে। কারণ তারা নিরাপদ বিনিয়োগের জন্য সঞ্চয়পত্রে নির্ভরশীল।

আরো পড়ুন : দরপত্র ছাড়াই চিনি কিনছে সরকার

নতুন নিয়ম অনুযায়ী, বিনিয়োগের পরিমাণ যত বেশি হবে, মুনাফার হার তত কমবে। ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচে বিনিয়োগকে ছোট বিনিয়োগ হিসেবে ধরা হয়। এই শ্রেণির বিনিয়োগকারীরা তুলনামূলক বেশি মুনাফা পান। ৫ লাখ টাকার নিচে বিনিয়োগে উৎসে কর ৫ শতাংশ, আর এর বেশি বিনিয়োগে কর ১০ শতাংশ।

অর্থনীতিবিদদের মতে, সরকারের পক্ষ থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদহার কমানো একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত। এটি বাজেট ঘাটতি পূরণে ঋণের ব্যয় কমাবে। তবে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে সাধারণ মানুষের ওপর।

১৯৭৭ সালে প্রথম পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র প্রবর্তন করে সরকার। পরে আরো তিনটি– তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পেনশনার সঞ্চয়পত্র ও পরিবার সঞ্চয়পত্র প্রবর্তন করা হয়। চার ধরনের সঞ্চয়পত্রে সবচেয়ে বেশি সুদ পেনশনার সঞ্চয়পত্রে। এরপর পরিবার সঞ্চয়পত্র। এ ছাড়া পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র ও তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে।

পেনশনার সঞ্চয়পত্রে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম বিনিয়োগ করলে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে মুনাফা পাওয়া যাবে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ হারে। আর বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ হারে মুনাফা।

পেনশনার সঞ্চয়পত্রে অবসরপ্রাপ্ত সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত, আধা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ও কর্মচারী, সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি, সশস্ত্র বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত সদস্য এবং মৃত চাকরিজীবীর পারিবারিক পেনশন সুবিধাভোগী স্বামী, স্ত্রী ও সন্তান এতে বিনিয়োগ করতে পারেন।

সঞ্চয়পত্রের মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় পরিবার সঞ্চয়পত্র। পেনশনার সঞ্চয়পত্রের পর বেশি সুদ পরিবার সঞ্চয়পত্রে। এই সঞ্চয়পত্রে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম বিনিয়োগ করলে পাঁচ বছরের মেয়াদ শেষে মুনাফা পাওয়া যাবে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ হারে। আর বেশি বিনিয়োগকারীরা পাবেন ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ হারে মুনাফা।

পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রে ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার কম বিনিয়োগ করলে মুনাফা মিলবে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ আর বেশি বিনিয়োগে এই হার হবে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ।

তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে কম বিনিয়োগের ক্ষেত্রে মুনাফা হবে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ আর বেশি বিনিয়োগে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

এ ছাড়া ডাকঘর সঞ্চয়ে ব্যাংকের তিন বছর মেয়াদি ৭ লাখ ৫০ হাজার টাকার নিচে বিনিয়োগ করলে মুনাফা পাওয়া যাবে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ হারে আর বেশি বিনিয়োগে পাওয়া যাবে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

সরকার নির্ধারিত এই নতুন হার আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। এরপর পরিস্থিতি বিবেচনায় তা আবার পরিবর্তন করা হতে পারে।

এদিকে, সঞ্চয়পত্র ছাড়াও প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য তিন ধরনের বন্ড রয়েছে। সবচেয়ে বেশি ১২ শতাংশ মুনাফা ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে। এটি পাঁচ বছর মেয়াদি। ৬ মাস অন্তর মুনাফা তোলার সুযোগ রয়েছে। ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড তিন বছর মেয়াদি। এর মুনাফার হার সাড়ে ৬ শতাংশ। প্রবাসীদের জন্য আরেকটি বন্ড রয়েছে, যার নাম ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড। তিন বছর মেয়াদি এই বন্ডে মুনাফার হার ৭ দশমিক ৫ শতাংশ। তিনটিরই বিনিয়োগের বিপরীতে পাওয়া মুনাফা করমুক্ত।

ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ডে সর্বোচ্চ ১ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে পারেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। বাকি দুই বন্ডে অবশ্য কোনো সীমা নেই। অর্থাৎ যত খুশি অর্থ বিনিয়োগ করতে পারবেন প্রবাসীরা। এসব বন্ড দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকের এডি শাখা, বিদেশে থাকা বাংলাদেশের ব্যাংকের শাখা, এক্সচেঞ্জ হাউস ও এক্সচেঞ্জ কোম্পানি থেকে কেনা যায়।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর: আইন উপদেষ্টা

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন করতে সরকার বদ্ধপরিকর: আইন উপদেষ্টা

ভারতে এসে কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু

ভারতে এসে কেনিয়ার সাবেক প্রধানমন্ত্রীর মৃত্যু

নতুন রেকর্ড গড়লেন লিওনেল মেসি

নতুন রেকর্ড গড়লেন লিওনেল মেসি

হাসপাতালে ভর্তি হানিয়া আমির!

হাসপাতালে ভর্তি হানিয়া আমির!

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App