×

রাজধানী

ক্লাবের মাঠ ও পার্ক দখল বন্ধে সরকারের করণীয় কী?

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ১৭ আগস্ট ২০২৫, ০৭:৩৫ এএম

ক্লাবের মাঠ ও পার্ক দখল বন্ধে সরকারের করণীয় কী?

"মাঠ, পার্ক জলাধার দখলমুক্ত আন্দোলন"-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলন

রাজধানী ঢাকার ফুসফুস হিসেবে পরিচিত খেলার মাঠ ও পার্কগুলো একের পর এক প্রভাবশালী ক্লাব, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ক্ষমতাধর ব্যক্তিদের দখলে চলে যাচ্ছে। নাগরিক সমাজের দীর্ঘদিনের প্রতিবাদ এবং এমনকি সর্বোচ্চ আদালতের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা থাকা সত্ত্বেও দখল ও বাণিজ্যিকীকরণের এই আগ্রাসন বন্ধ হচ্ছে না। উল্টো গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়, রাজউক এবং ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মতো দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর উদাসীনতা ও ক্ষেত্রবিশেষে যোগসাজশে এই বেআইনি কর্মকাণ্ড আরও বিস্তার লাভ করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

শুক্রবার (১৬ আগস্ট) রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে "মাঠ, পার্ক জলাধার দখলমুক্ত আন্দোলন"-এর উদ্যোগে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব গুরুতর অভিযোগ তুলে ধরা হয়। সম্মেলনে বক্তারা বলেন, জনগণের টাকায় নির্মিত এসব উন্মুক্ত স্থান এখন মুষ্টিমেয় কিছু গোষ্ঠীর কোটি টাকার ব্যবসায়িক সম্পদে পরিণত হয়েছে, যেখানে সাধারণ নাগরিকের প্রবেশাধিকার সংকুচিত বা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।

ধানমন্ডি থেকে গুলশান: দখলের অভিন্ন চিত্র

সংবাদ সম্মেলনে ধানমন্ডি মাঠ এবং গুলশানস্থ শহীদ তাজউদ্দিন আহমদ স্মৃতি পার্কের দখলচিত্র বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হয়। একসময়ের উন্মুক্ত ধানমন্ডি মাঠটি একটি ক্লাবের দখলে চলে যাওয়ার পর সেখানে সাধারণ মানুষের প্রবেশ কার্যত নিষিদ্ধ হয়ে গেছে। মাঠটিতে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করে ক্লাবের সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত করা হয়েছে এবং লক্ষ লক্ষ টাকায় শেয়ার বিক্রি করে ক্লাবটি ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। প্রতিবাদকারী পরিবেশবাদীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করার মতো ঘটনাও ঘটেছে বলে সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়।

অন্যদিকে, প্রায় ৮ একর এলাকাজুড়ে বিস্তৃত গুলশানের শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্কটি ‘গুলশান ইয়ুথ ক্লাব’-এর দখলে চলে যাওয়ায় এর প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য হারিয়েছে। পার্কের সবুজ ঘাসের চত্বর ধ্বংস করে সেখানে কংক্রিটের ঢালাই দিয়ে কৃত্রিম ফুটবল টার্ফ তৈরি করা হয়েছে, যা ঘণ্টাপ্রতি হাজার হাজার টাকায় ভাড়া দেওয়া হচ্ছে। পার্কের প্রবেশপথে নিজস্ব নিরাপত্তা প্রহরী বসিয়ে জনসাধারণের প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে, যা পার্কের মূল ধারণার পরিপন্থী।

আদালতের আদেশ উপেক্ষিত, কর্তৃপক্ষের রহস্যজনক নীরবতা

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্কের বিষয়ে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট ও আপিল বিভাগ থেকে তিনটি মামলায় রাজউককে দখল উচ্ছেদ এবং ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনকে (ডিএনসিসি) কোনো ধরনের লিজ প্রদান থেকে বিরত থাকার সুস্পষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য কারণে উভয় সংস্থাই আদালতের আদেশ লঙ্ঘন ও অবমাননা করে চলেছে।

তথ্য অধিকার আইনে প্রাপ্ত তথ্যের বরাতে বক্তারা জানান, রাজউক পার্কটি ডিএনসিসিকে হস্তান্তর করেছিল এই শর্তে যে, এটি তৃতীয় কোনো পক্ষের কাছে লিজ বা ভাড়া দেওয়া যাবে না এবং কোনো স্থায়ী স্থাপনা নির্মাণ করা যাবে না। কিন্তু ডিএনসিসি সকল শর্ত ভঙ্গ করে পার্কটি গুলশান ইয়ুথ ক্লাবের কাছে হস্তান্তর করেছে। এমনকি, গত ৩১ অক্টোবর ২০২৪ তারিখে রাজউকের সাধারণ সভায় ক্লাবের সাথে চুক্তি বাতিল ও অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি। উল্টো, ক্লাবের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ডিএনসিসি গত ২৯ জুলাই ২০২৫ তারিখে চুক্তিটি পুনর্বহাল করেছে, যা সরাসরি আদালত অবমাননার শামিল।

আন্দোলনের নেতারা প্রশ্ন তোলেন, "কোন আইনের ক্ষমতায় একটি হেরে যাওয়া ক্লাবকে পার্ক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে? কেন রাজউক ও ডিএনসিসি আদালতের আদেশ অমান্য করে দখলদারদের সুবিধা দিচ্ছে?" তারা আরও জানান, ডিএনসিসি সম্প্রতি আরও পাঁচটি মাঠ বেসরকারি কোম্পানির হাতে তুলে দিয়েছে, যেখানেও সাধারণ মানুষের প্রবেশ বন্ধ হয়ে গেছে।

নাগরিক সমাজের দাবি ও পরবর্তী কর্মসূচি

সংবাদ সম্মেলন থেকে মাঠ-পার্ক রক্ষায় স্বল্প ও দীর্ঘমেয়াদী একগুচ্ছ দাবি উপস্থাপন করা হয়। স্বল্পমেয়াদী দাবির মধ্যে রয়েছে অবিলম্বে শহীদ তাজউদ্দিন স্মৃতি পার্কসহ সকল মাঠ থেকে অবৈধ স্থাপনা ও ফুটবল টার্ফ উচ্ছেদ, ক্লাবগুলোর দখলদারিত্ব বাতিল, পার্কের গেটে "সকলের জন্য উন্মুক্ত" সাইনবোর্ড স্থাপন এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ।

দীর্ঘমেয়াদী দাবির মধ্যে রয়েছে মাঠ, পার্ক, জলাধার সংরক্ষণ আইন সংশোধন, একটি পূর্ণাঙ্গ ব্যবস্থাপনা নীতিমালা প্রণয়ন, পরিবেশ আদালত আইন সংশোধন করে সকল নাগরিকের জন্য আদালতে যাওয়ার পথ সুগম করা এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ।

সংগঠনটি তাদের পরবর্তী কর্মসূচিও ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে রয়েছে দখলদারদের তালিকা তৈরি করে মন্ত্রণালয়ে প্রেরণ, দখলদারিত্বে সহায়তাকারী কর্মকর্তাদের তালিকা দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) দাখিল, আদালত অবমাননার মামলা দায়ের এবং সরকারের উপদেষ্টামণ্ডলীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মাঠ-পার্কের বেহাল দশা সম্পর্কে অবহিত করা।

বক্তারা হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, "ভবিষ্যৎ প্রজন্ম ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় আমরা আর চুপ থাকতে পারি না। একের পর এক আদালতের আদেশ অমান্য করে যারা জনগণের সম্পদকে ব্যক্তিগত সম্পদে পরিণত করছে, তাদের মুখোশ উন্মোচন করা হবে।"

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ইনজুরি কাটিয়ে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন মেসির

ইনজুরি কাটিয়ে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তন মেসির

ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস, কমবে গরম

ঢাকায় বজ্রসহ বৃষ্টির আভাস, কমবে গরম

ফারুকী এখন আশঙ্কামুক্ত, দোয়া চাইলেন তিশা

ফারুকী এখন আশঙ্কামুক্ত, দোয়া চাইলেন তিশা

বিদেশে কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

টেলিফোন কলে নির্দেশনা বিদেশে কূটনৈতিক মিশন থেকে রাষ্ট্রপতির ছবি সরানোর নির্দেশ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App