রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ডেঙ্গু আতঙ্ক!

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৯ জুলাই ২০২৩, ০৮:৪০ এএম

কক্সবাজারের উখিয়া-টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে উঠেছে ডেঙ্গুর হটস্পট। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টার আগের ২৪ ঘণ্টায় জেলায় নতুন করে ৬৬৮ ডেঙ্গুরোগী শনাক্ত হয়েছে। এরমধ্যে রোহিঙ্গা ৬১৯ জন। বাকি ৪৯ জন স্থানীয় বাঙালি। এ নিয়ে চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৭ জুলাই পর্যন্ত কক্সবাজার জেলায় মোট ২ হাজার ৮৪১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছে।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে এসব তথ্য জানান কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পরিসংখ্যানবিদ পংকজ পাল। তিনি বলেন, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গত সোমবার পর্যন্ত উখিয়া ও টেকনাফের রোহিঙ্গা ক্যাম্পকেন্দ্রিক ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা ২ হাজার ৬৭৬ জন। যেখানে ২ হাজার ৫২১ জন রোহিঙ্গা ও ১৫৫ জন স্থানীয় বাঙালি।
গত রবিবার পর্যন্ত মোট আক্রান্ত ছিল ২ হাজার ২৩ জন। যেখানে রোহিঙ্গা ছিল ১ হাজার ৯০৫ জন এবং ১১৮ জন ছিল স্থানীয় বাঙালি।
পরিসংখ্যানবিদ পংকজ পাল জানান, রোহিঙ্গা ক্যাম্পের পাঁচটি এলাকা ডেঙ্গুর জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এরমধ্যে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৩ নম্বর ক্যাম্পে ৬২০ জন, ১৭ নম্বর ক্যাম্পে ১৭১ জন, ৪ নম্বর ক্যাম্পে ১৬৭ জন, ১ নম্বর ডব্লিউ ক্যাম্পে ১১৫ জন এবং ২৪ নম্বর ক্যাম্পে ২৪ জন ডেঙ্গুরোগী পাওয়া গেছে। এছাড়া কক্সবাজার পৌরসভায় ৩২ জন, চকরিয়ায় ২৭ জন, উখিয়ায় ২৬ জন, টেকনাফে ২৩ জন, সদরে ২০ জন এবং মহেশখালীতে ১৩ জন রোগী পাওয়া গেছে।
তিনি আরো জানান, গত ২৪ ঘণ্টায় ১৫ জনকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সোমবার পর্যন্ত ভর্তি ছিল মোট ২৫ জন। এর বাইরে উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ৫ জন ভর্তি রয়েছে। সর্বশেষ ২৩ জুন একজনের মৃত্যুসহ গত ৬ মাসে মোট ৪ জনের মৃত্যু হয়েছে। তারা সবাই রোহিঙ্গা।
কক্সবাজারের শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসনের কমিশনারের কার্যালয়ের স্বাস্থ্য কোঅর্ডিনেটর ডা. আবু তোহা বলেন, রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অধিকসংখ্যক ডেঙ্গু আক্রান্ত হলেও এটা উদ্বেগজনক বলা যাবে না। সচেতনতার কারণে আক্রান্তদের দ্রুত শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে। এখানে চিকিৎসা নিয়ে ঘরে ফিরেছে ৯৯ শতাংশ। মাত্র ৪ জন রোগী নানা কারণে মারা গেছে।
তিনি বলেন, ক্যাম্পে এখন অধিক সচেতনতা কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। ক্যাম্পে অবস্থিত বিভিন্ন ড্রেনেজ সিস্টেমে নিয়মিত ব্লিচিং পাউডার ছিটানো এবং এ বিষয়ে তদারকির জন্য ওয়াশ সেক্টরের সঙ্গে সমন্বয় করা হয়েছে। ক্যাম্পে হেলথ সেক্টরের সঙ্গে নিয়মিত সভা হচ্ছে। প্রতিটি ক্যাম্পের ব্লকের নেতা (মাঝি) এবং উপনেতাদের (সাব-মাঝি) সঙ্গে সভা করে জমানো পানি অপসারণ করা হচ্ছে। ডেঙ্গু নির্ণয়ের জন্য পর্যাপ্ত কিট সরবরাহসহ নানা উদ্যোগ বাস্তবায়ন হচ্ছে। ফলে ডেঙ্গু কমানো সম্ভব বলে আশা করা যাচ্ছে।
কক্সবাজারের সিভিল সার্জন ডা. বিপাশ খীসা বলেন, সম্ভাব্য ডেঙ্গু পরিস্থিতি মোকাবিলায় কক্সবাজারে সব প্রকার প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে চিকিৎসার জন্য ১০ জন চিকিৎসক নিয়ে টেলিমেডিসিন সেবা চালু হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে সদর হাসপাতালসহ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো।
উল্লেখ্য, ২০২২ সালে কক্সবাজারে মোট ১৯ হাজার ২৩১ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়েছিলো। এর মধ্যে ১৫ হাজার ৬৩৬ জন রোহিঙ্গা ও ৩ হাজার ৫৮৫ জন স্থানীয় ছিল। ওই বছরে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৩৯ জন। যার মধ্যে রোহিঙ্গা ২৬ জন ও বাঙালি ১৩ জন।