হাসতে ভুলে গেছেন মুগ্ধের ভাই স্নিগ্ধ

আরিফুর রহমান স্বপন, লাকসাম (কুমিল্লা)
প্রকাশ: ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬:০১ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
১৮ জুলাইয়ে পর আমি এখন হাসতে ভুলে গেছি। সবাই বলতো আমার আর মুগ্ধের হাসি নাকি খুব সুন্দর। কিন্তু আমি এখন আর হাসতে পারি না। আবু সাঈদ, মুগ্ধসহ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের করুণ মৃত্যু প্রতিটি মুহুর্তে আমাকে তাড়া করে বেড়ায়। আমি এখন আর ঘুমাতে পারিনা।
শনিবার (২৮ সেপ্টেম্বর) সকালে লাকসাম পৌর অডিটোরিয়ামে লাকসামের ঐতিহ্যবাহী সুরক্ষা সিটির আয়োজনে সুরক্ষা পরিবার ও আপনজনদের স্বীকৃতি এবং ভালোবাসার অনুষ্ঠানে এ কথাগুলো বলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহত শহীদ মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ'র ভাই ও জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনের সাধারণ সম্পাদক মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ।
সুরক্ষা সিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মু. আসাদুজ্জামান ভুট্টো'র সভাপতিত্বে সুরক্ষা পরিবার ও আপনজনদের স্বীকৃতি এবং ভালোবাসা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, যে হারিয়েছে সেই বুঝে হারানোর যন্ত্রণা কত নির্মম ও কষ্টের। তবে আমরা সব কষ্ট ভুলে যাবো, যদি একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়তে পারি। আমার ভাই বোনদের একটিমাত্র উদ্দেশ্য ছিল সেটি হলো, শোষণ এবং অন্যায় অত্যাচার ও দুর্নীতিমুক্ত একটি সুন্দর বাংলাদেশ গড়ার। তাদের সেই স্বপ্ন পূরণে আমরা এখন কাজ করছি।
মীর মাহবুবুর রহমান স্নিগ্ধ বলেন, আন্দোলনে নিহত ও আহতরা আমাদেরকে একটি স্বৈরাচারী সরকারের হাত থেকে দেশকে স্বাধীন করে দিয়ে গেছে। কিন্তু আমরা ভুলে গেলে চলবে না, তাদের রক্তে অর্জিত সেই স্বাধীনতা আমাদেরকে রক্ষা করতে হবে। দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রে সংস্কার করতে হবে। সেই জন্যে আমাদের এই অন্তর্বর্তীকালীন উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনুসের সরকারকে আরো বেশি করে সহযোগিতা করতে আমাদের সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতদের পরিবার ও আহতদের আমরা খোঁজখবর রাখছি। তাদের সহযোগিতা করার জন্য জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশন নামে একটি সংগঠন সৃষ্টি করেছি। আপনারা সবাই মিলে সহযোগিতা করলে এটি আরো ব্যাপকভাবে প্রসারিত হবে ইনশাআল্লাহ।
এসময় তিনি যাত্রাবাড়িতে নিহত কুমিল্লার লাকসাম পৌর এলাকার জিসানের বাবা বাবুল মিয়া, আহত আবুল কাসেম এবং কুমিল্লায় আহত শুভ'র সঙ্গে কথা বলে সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবদুল হাই সিদ্দিকী, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. নাজিয়া বিনতে আলম, ভাইয়া গ্রুপের পরিচালক, সাবেক পৌর মেয়র মো. মফিজুর রহমান, বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা সেক্রেটারি, উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ড. সৈয়দ সরওয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, জামায়াতে ইসলামী লাকসাম পৌরসভার আমীর মু. জয়নাল আবেদীন পাটোয়ারী, সেক্রেটারি মু. শহীদ উল্লাহ, বিশিষ্ট আইনজীবী মু. বদিউল আলম সুজন, নবাব ফয়েজুন্নেছা পরিবারের সদস্য আয়াজ আলী চৌধুরী, লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ মো. সাহাবুদ্দিন খান, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক সাদিক আল আরমান, সংগীত শিল্পী মশিউর রহমান, ঢাকা পারি ফাউন্ডেশনের নেত্রী, মানবিক সংগঠক তাছলিমা শাহনুর, বিশিষ্ট ব্যবসায়ি মো. গোলাম ফারুক, ব্যবসায়ি রাফসান ইসলাম, শাহরিয়ার কবির রাতুল, সুরক্ষা সিটির পরিচালক মু. শাহ আলম প্রমুখ।
অনুষ্ঠানে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ঢাকা যাত্রাবাড়িতে নিহত কুমিল্লার লাকসাম পৌর এলাকার জিসানসহ সব নিহতদের মাগফিরাত কামনা করা হয় এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে জনকল্যাণে অবদানের জন্য বিশিষ্ট ব্যক্তি ও সুরক্ষা পরিবারের আপনজনদের সম্মাননা ও স্বীকৃতি ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।