গাজীপুরের শফিপুরে নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্সের যাত্রা শুরু হয়েছে। শুক্রবার (২২ নভেম্বর) সকাল সাড়ে দশটায় নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে সম্পন্ন হলো উদ্বোধনী অনুষ্ঠান। অতিথিরা বেলুন উড়িয়ে নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্স ভবনের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন এবং নির্মিতব্য হাসপাতাল ও স্কুল ভবনের নির্মাণ কাজের উদ্বোধন ও ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন। এরপর নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্স ভবনে চলমান কার্যক্রম পরিদর্শন করেন অতিথিরা।

বাংলাদেশের অন্তবর্তী সরকারের ভূমি এবং বেসামরিক বিমান, পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ অতিথি হিসেবে ঢাকাস্থ রাজকীয় সৌদি রাষ্ট্রদূত জনাব ঈসা ইউসুফ ঈসা আল দুহাইলান, সৌদি আরব থেকে আগত ওয়ামি সচিবালয়ের এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল প্রফেসর ড. আবদুল হামিদ ইউসুফ আল মাজরু' এবং রিয়াদস্থ ওয়ামি প্রধান কার্যালয়ের বৈদেশিক অফিস ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ডিরেক্টর ফয়সাল সাআ'দ আব্দুল্লাহ বিন জাবর ও ত্রাণ বিভাগের কর্মকর্তা আব্দুল মালেক আল আমের উপস্থিত ছিলেন।

পবিত্র কোরআন তেলাওয়াতের পর ভ্রাতৃপ্রতিম বাংলাদেশ ও সৌদি আরবের জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। অতঃপর ওয়ামি বাংলাদেশ এর কান্ট্রি ডিরেক্টর ডা. মোহামাদ রেদওয়ানুর রহমান স্বাগত বক্তব্য রাখেন। তিনি উল্লেখ করেন, নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা সম্বলিত নবনির্মিত ওয়ামি কমপ্লেক্স ভবনে রয়েছে দ্বিতল বিশিষ্ট সুপরিসর মসজিদ, ১০০ জন এতিম শিশুর জন্য উন্নত মানসম্পন্ন আবাসন ব্যবস্থা, ১টি ক্যাডেট মাদ্রাসা, ১টি নূরানী ও হিফজ মাদ্রাসা, ১টি লাইব্রেরি হল, ১টি হলরুম ও কনফারেন্স রুম, তরুণ শিক্ষার্থীদের ডিজিটাল লার্নিং জন্য ১টি আইটি প্রশিক্ষণ সেন্টার ও ডাইনিং হল। এছাড়াও কমপ্লেক্স এর অবশিষ্ট পরিকল্পনার মধ্যে একটি হাসপাতাল, স্কুল, ভোকেশনাল সেন্টার, প্রশিক্ষণার্থীদের জন্য ডরমিটরি ও প্লে গ্রাউন্ড নির্মাণের বিষয় তিনি উল্লেখ করেন।

প্রধান অতিথি মাননীয় ভূমি উপদেষ্টা এ এফ এম হাসান আরিফ তার বক্তব্যে অন্যতম মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়ন কর্মকান্ডে ভ্রাতৃপ্রতিম সৌদি আরবের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা উল্লেখ করেন। এজন্য তিনি উপস্থিত সৌদি রাষ্ট্রদূতের প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি সফররত ওয়ামি প্রতিনিধি দলকে বাংলাদেশ সফরে আসার জন্য ধন্যবাদ জানান এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন ও অনগ্রসর জনগোষ্ঠির কল্যাণে যথাসম্ভব জোরালো ভূমিকা পালনের আহবান জানান।

সৌদি রাষ্ট্রদূত তার বক্তব্যে বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলিম দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উন্নয়নে সৌদি আরব সবসময় বাংলাদেশের পাশে থাকবে। ওয়ামি'র এসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারী জেনারেল প্রফেসর ড. আবদুল হামিদ ইউসুফ আল মাজরু বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ উন্নয়ন সংস্থা হিসেবে মানৰ কল্যাণে পৃথিবীব্যাপি ওয়ামি'র নানাবিধ কর্মসূচী তুলে ধরেন। এক্ষেত্রে রাজকীয় সৌদি সরকারের সমর্থন ও সহযোগিতার জন্য তিনি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকান্ডে রাজকীয় সৌদি সরকারের পাশাপাশি ওয়ামি পূর্বের চেয়ে আরো বেশি ভূমিকা পালনের চেষ্টা করবে।

অনুষ্ঠানে গাজীপুর জেলা প্রশাসক জনাব নাফিসা আরেফীন, কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা জনাব কাউছার আহাম্মেদ, কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহি কর্মকর্তা জনাব কাউছার আহাম্মেদ, কালিয়াকৈর উপজেলার এসি ল্যান্ড জনাব দিল আফরোজ, মেজর জেনারেল অবসরপ্রাপ্ত জনাব সালাহউদ্দিন মিয়াজি, জনাব কাজী মোহাম্মদ শাহেদ, প্রফেসর আমিনুর রহমান মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, প্রফেসর তানভীর মোহাম্মদ হায়দার আরিফ, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, এয়ার কমোডর অবসরপ্রাপ্ত মোহাম্মদ শওকত আলী, গণ্যমান্য অতিথিবৃন্দ ও স্থানীয় বিশিষ্টজন উপস্থিত ছিলেন।

উল্লেখ্য, ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়ামী) সৌদি আরব ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থা যা বিগত ৫২ বছর যাবৎ বিশ্বের প্রায় সবকয়টি দেশে শিক্ষা, সংস্কৃতি, প্রাকৃতিক ও মানবসৃষ্ট দূর্যোগে জরুরী ত্রাণ তৎপরতা, নারীর ক্ষমতায়নসহ নানাবিধ আর্থ-সামাজিক ও যুব উন্নয়নমূলক কর্মসূচী পরিচালনা করে আসছে। এর প্রধান কার্যালয় সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে অবস্থিত। ১৯৭২ সালে রিয়াদে অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক যুব সম্মেলনে গৃহিত প্রস্তাবনার আলোকে সৌদি আরবের তৎকালীন মহামান্য বাদশাহ কিং ফয়সাল এর রাজকীয় ফরমানে ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়ামী) প্রতিষ্ঠিত হয়।

ওয়ামী জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থাসহ নানা আন্তর্জাতিক ফোরামের সক্রিয় সদস্য হিসেবে বিশ্বব্যাপী ভূমিকা রেখে আসছে। ২০০০ সাল থেকে ওয়ামী গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের এনজিও বিষয়ক ব্যুরোর নিবন্ধিত সংস্থা হিসেবে দেশের বিভিন্ন জেলাসমূহে ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থানরত মায়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠির সহায়তার জন্য ইউএনএইচসিআরসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার মানবিক কার্যক্রমে সক্রিয় সহযোগি হিসেবে ওয়ামি ভূমিকা পালন করছে।

১৯৮১ সালে বাংলাদেশ সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় ও ওয়ার্ল্ড এসেম্বলি অব মুসলিম ইয়ুথ (ওয়ামী), সৌদি আরবের যৌথ উদ্যোগে বিশ্বের প্রায় অর্ধশত দেশের যুব প্রতিনিধিদের নিয়ে আন্তর্জাতিক যুব কনফারেন্স অনুষ্ঠিত হয়। কনফারেন্সের সমাপনী অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি তৎকালীন মহামান্য রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান যুব উন্নয়ন ও প্রশিক্ষণ কর্মকান্ড পরিচালনার জন্য গাজীপুরের শফিপুরের এ জমিটুকু ওয়ামিকে প্রদানের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেন। সেখানে আজ ওয়ামি কমপ্লেক্স ভবনের কার্যক্রম আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়েছে।