×

অপরাধ

প্রতারণার মাধ্যমে অর্থআত্মসাৎ

ফুডপান্ডার ৬ কর্তার বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার মামলা

Icon

কাগজ প্রতিবেদক

প্রকাশ: ০৩ জুলাই ২০২৫, ০৭:০৪ পিএম

 ফুডপান্ডার ৬ কর্তার বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার মামলা

প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ফুডপান্ডা ও পান্ডামার্টের এই ৬ কর্তার বিরুদ্ধে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার মামলা হয়েছে

অনলাইনভিত্তিক খাবার সরবরাহ প্রতিষ্ঠান ফুডপান্ডার ছয়জন শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জাল-জালিয়াতি, হুমকি ও প্রতারণার মাধ্যমে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকার চারটি পৃথক মামলা দায়ের করা হয়েছে। রাজধানীর এক ব্যবসায়ী শিহাব মাহমুদ বশির এ মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) ঢাকার অতিরিক্ত চীফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. ছানাউল্ল্যাহ মামলাটি আমলে নিয়ে তদন্তের জন্য গুলশান থানাকে নির্দেশ দিয়েছেন। মামলা নাম্বার ৩৫১৭/২৫, ৩৫১৮/২৫, ৩৫১৯/২৫ এবং ৩৫২০/২৫। 

মামলার আসামির তালিকায় রয়েছেন ফুডপান্ডার কো-ফাউন্ডার ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দা আম্বারিন রেজা ও জুবায়ের সিদ্দিকী, পান্ডামার্টের পরিচালক ভারতীয় নাগরিক মো. তাবরেজ খান, হেড অব ক্যাটাগরি দিলারা ফারুক, সিনিয়র ম্যানেজার মো. সাজেদুল হক এবং এক্সিকিউটিভ ক্যাটাগরি মো. তৌফিক। এজাহারে বলা হয়, সৈয়দা আম্বারিন রেজার বাবা মৃত সৈয়দ মাসুম রেজা ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য (বরিশাল-৬, বাকেরগঞ্জ)। আর মাতা আইরিন রেজা বরিশাল জেলা পরিষদের সাবেক প্যানেল চেয়ারম্যান ও বরিশাল জেলা আওয়ামীলীগের নেত্রী। 

আরও পড়ুন- ফুডপান্ডাকে বাঁচাতে ই-ক্যাবের পরিচালনা পর্ষদের পদত্যাগ!

মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেন, তিনি আইপিএলই ইলেকট্রনিক্স নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে হাউজহোল্ড ও কিচেন অ্যাকসেসরিজ, মোবাইল এক্সেসরিজসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করে ফুডপান্ডার সহযোগী প্রতিষ্ঠান পান্ডামার্টে সরবরাহ করতেন। ২০২২ সালের জুন থেকে ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন ক্রয় আদেশের মাধ্যমে প্রায় ২ কোটি ৫০ লাখ টাকার পণ্য সরবরাহ করেন। তবে প্রতিষ্ঠানটি শুধুমাত্র ১ কোটি ৫০ লাখ টাকা পরিশোধ করে, বাকি ১ কোটি টাকারও বেশি অর্থ পরিশোধ না করে আত্মসাৎ করে।

বাদীর অভিযোগ, ফুডপান্ডার কর্মকর্তারা প্রভাব খাটিয়ে পণ্য নষ্ট দেখিয়ে ভুয়া ফেরত চালান তৈরি করেন, অথচ সরবরাহকৃত পণ্য গ্রহণের সময় গুণগত মান যাচাই করেই গ্রহণ করেছিলেন। এছাড়া, নামমাত্র এক-দুই বা একশ টাকার কম পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করে বাকী পাওনা গড়িমসি করেন। তিনি অভিযোগে আরও উল্লেখ করেন, প্রতিষ্ঠানটি ভ্যাট-ট্যাক্স ফাঁকিরও অভিযোগে আগেও আলোচনায় এসেছে, যা এনবিআর-এর বিভিন্ন তদন্ত ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।

বাদী জানান, একাধিকবার নোটিশ দেওয়ার পরও পাওনা পরিশোধ না করে সম্প্রতি তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে তিনি গুলশান থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। এছাড়া হঠাৎ করে ক্রয় আদেশ বন্ধ করে দেওয়ায় তার গুদামে সংরক্ষিত পণ্য মেয়াদোত্তীর্ণ হয়ে নষ্ট হয়, এতে তার আরও প্রায় ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে।

মামলায় আরও বলা হয়, ফুডপান্ডা কর্তৃপক্ষ চুক্তিভঙ্গ করে অবৈধভাবে বাদীর পাওনা টাকা থেকে ভ্যাট, ট্যাক্স ও বিজ্ঞাপন বাবদ প্রায় ১০ লাখ টাকা কেটে নেয়। সব মিলিয়ে বাদীর দাবি, প্রতিষ্ঠানটির কাছে তার মোট পাওনা দাঁড়ায় প্রায় ৫ কোটি ৬০ লাখ টাকা, যা আত্মসাৎ করা হয়েছে।

বাদী এজাহারে উল্লেখ করেন, আসামিরা দণ্ডবিধির ৪২০ (প্রতারণা), ৪৬৭ (মূল্যবান দলিল জালিয়াতি), ৪৬৮ (প্রতারণার উদ্দেশ্যে জালিয়াতি), ৪৭১ (জাল দলিলকে আসল দলিল হিসেবে ব্যবহার) এবং ৫০৬ (ফৌজদারি ভীতি প্রদর্শন) ধারায় অপরাধ করেছেন। থানায় মামলা করতে গেলে তাকে আদালতে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়, যার পরিপ্রেক্ষিতে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেন।

আরও পড়ুন- ফুডপান্ডার এক নিউজে সৈয়দা আম্বারীন রেজার তিন প্রতিবাদ

আদালত মামলাটি আমলে নিয়ে গুলশান থানাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে দণ্ডবিধির ৪২০/৪৬৭/৪৬৮/৪৭১/৫০৬ ধারায় ফুডপান্ডার কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।

অতীতেও ফুডপান্ডা ও পান্ডামার্টের বিরুদ্ধে ভ্যাট ফাঁকি ও একচেটিয়া ব্যবসার অভিযোগ উঠেছিল। ২০২০ সালে ফুডপান্ডার বিরুদ্ধে ৩ কোটি ৪০ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির অভিযোগে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) মামলা করে। এরপর ২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন (বিসিসি) একচেটিয়া ব্যবসা পরিচালনার দায়ে ফুডপান্ডাকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। এবার নতুন চারটি মামলা অনলাইন ফুড ও গ্রোসারি ডেলিভারি খাতের স্বচ্ছতা ও ব্যবসায়িক নীতি নিয়ে নতুন করে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।

ব্যবসায়ী শিহাব মাহমুদ বশির ভোরের কাগজকে বলেন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সহযোগী প্রতিষ্ঠান ফুডপান্ডা ও পান্ডামার্ট প্রতারণার মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত অর্থ আত্মসাৎ করে আসছে। আমি একা নই—এ ধরনের প্রতারণার শিকার হয়েছেন আরও বহু ভুক্তভোগী। আমি আইন ও আদালতের প্রতি সম্পূর্ণ শ্রদ্ধাশীল। সুষ্ঠু বিচার প্রত্যাশায় আমি আদালতের শরণাপন্ন হয়েছি।

এ বিষয়ে ফুডপান্ডা কর্তৃপক্ষ ভোরের কাগজের কাছে লিখিত এক বক্তব্যে বলেছে, ফুডপান্ডা বাংলাদেশ ও প্রতিষ্ঠানটির ছয় কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইপিএলই ডিস্ট্রিবিউশন নেটওয়ার্কের মালিক শিহাব মাহমুদ বশিরের দায়ের করা মামলাগুলোয় যেসব অভিযোগ করা হয়েছে, তা সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট। ফুডপান্ডা ও এর কর্মীদের সুনাম ও ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার উদ্দেশ্যে এ অপচেষ্টা গ্রহণ করা হয়েছে। এর আগে ফুডপান্ডা ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে শিহাব মাহমুদ বশিরের বিরুদ্ধে নেগোশিয়েবল ইনস্ট্রুমেন্টস অ্যাক্ট, ১৮৮১-এর ১৩৮ ধারায় তিনটি মামলা দায়ের করে। শিহাব মাহমুদ বশিরের দেয়া চেক প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় এ মামলা করে ফুডপান্ডা।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, এই আইনগত পদক্ষেপের বিপরীতে, শিহাব মাহমুদ বশির সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিযোগ এনে পাল্টা মামলা করেছেন। আমরা মনে করি, আর্থিক দায় এড়ানোর উদ্দেশ্যে এবং আইনি বাধ্যবাধকতা থেকে নিজেকে আড়াল করতে পরিকল্পিত উপায়ে তিনি ফুডপান্ডা ও এর কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করেছেন। প্রকৃত সত্য আড়াল করতে শিহাব মাহমুদ বশির মিডিয়ার কাছে ফুডপান্ডা নিয়ে বিভ্রান্তিকর তথ্য সরবরাহ করছেন। আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিষ্ঠা ও সুনামের সাথে বাংলাদেশে কার্যক্রম পরিচালনা করে ফুডপান্ডা। অথচ শিহাব মাহমুদ বশির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত হয়ে বানোয়াট ও বিভ্রান্তিকর অভিযোগের ভিত্তিতে মামলা করে ফুডপান্ডার মত আন্তর্জাতিকভাবে সুনাম অর্জন করা প্রতিষ্ঠানের সুনামহানি করছেন বলে দাবি করেছে প্রতিষ্ঠানটি।

লিখিত বিবৃতে ফুডপান্ডা আরও বলেছে, এসব মিথ্যা অভিযোগ ও অপপ্রচেষ্টার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় আইনগত পদক্ষেপ নেয়ার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করছি। ফুডপান্ডা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে নিজেদের ব্যবসায়িক কার্যক্রমে সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রাখার ব্যাপারে সম্পূর্ণ অঙ্গীকারবদ্ধ।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

এসএসসির ফল প্রস্তুত, শিগগিরই প্রকাশ

এসএসসির ফল প্রস্তুত, শিগগিরই প্রকাশ

এবার নিজের নামে সুগন্ধি আনলেন ট্রাম্প

এবার নিজের নামে সুগন্ধি আনলেন ট্রাম্প

বাংলাদেশে জাপানের সহযোগিতা আরও বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

বাংলাদেশে জাপানের সহযোগিতা আরও বাড়াতে প্রধান উপদেষ্টার আহ্বান

সন্তান স্মার্টফোনে বুঁদ, নেশা কাটাতে যা করবেন

সন্তান স্মার্টফোনে বুঁদ, নেশা কাটাতে যা করবেন

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App