×

অপরাধ

মোস্তফা আফাজের বিরুদ্ধে তারেক রহমানের কাছে অভিযোগ

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৫:৫০ পিএম

মোস্তফা আফাজের বিরুদ্ধে তারেক রহমানের কাছে অভিযোগ

মোস্তফা আফাজের বিরুদ্ধে তারেক রহমানের কাছে অভিযোগ

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের কাছে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব মোস্তফা জামান এবং তার ভাগিনা আফাজের বিরুদ্ধে একটি বিশদ অভিযোগপত্র জমা দেওয়া হয়েছে। পাঁচ পৃষ্ঠার এই অভিযোগপত্রে তাদের বিরুদ্ধে উত্তরা ও গাজীপুরে শতাধিক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আশ্রয় দিয়ে প্রতি মাসে ৩৫ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ আনা হয়েছে। বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদের মাধ্যমে অভিযোগপত্রটি তারেক রহমানের কাছে পাঠানো হয়েছে।

অভিযোগে বলা হয়েছে যে, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদ্য নিযুক্ত সদস্য সচিব হাজী মোস্তফা জামান একসময় তুরাগ থানা ছাত্র শিবিরের সভাপতি ছিলেন। তার বাবা ও মায়ের দিকের আত্মীয়-স্বজনদের প্রায় সকলেই জামাত ও আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। পরিবারের মধ্যে তিনিই একমাত্র সদস্য যিনি বিএনপির রাজনীতির সাথে যুক্ত এবং মহানগর উত্তর বিএনপির একজন বড় নেতা।

পারিবারিক সংশ্লিষ্টতা: অভিযোগ অনুযায়ী, মোস্তফা চার ভাই ও তিন বোনের মধ্যে সবার বড়। তার এক ভাই ফিরোজ জামান আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং ফিরোজ জামানের স্ত্রী উত্তরা ৫১ নং ওয়ার্ড যুব মহিলা লীগের সভাপতি। তার বিরুদ্ধে বৈষম্য বিরোধী হত্যার ৩টি মামলা রয়েছে এবং ৫ই আগস্টের পর তিনি উত্তরা ১১ নং সেক্টর কল্যাণ সমিতির সভাপতি পদ দখল করেছেন। মোস্তফার অপর দুই ভাই সুরুজ্জামান ও খালিদুজ্জামান জামাত ইসলামের পদধারী নেতা। সুরুজ্জামান ৫৩ নং ওয়ার্ডের জামাত মনোনীত কাউন্সিলর প্রার্থী। মোস্তফার একজন বোন জামাই, হাজী আরব আলী, তুরাগ থানা জামাতের নায়েবে আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। অপর বোনের একমাত্র ছেলেও জামাতের রাজনীতিতে জড়িত। মোস্তফার বাবার দিকের সকল আত্মীয়-স্বজন আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত এবং বিভিন্ন ইউনিটের পদধারী নেতা। অভিযোগে আরও বলা হয়েছে যে, মোস্তফার পরিবার জামাতের সাথে এতটাই ঘনিষ্ঠ যে, ২০০১ সালের পর নিজেদের পৈতৃক সম্পত্তি থেকে তিন বিঘা জমি ইসলামী ছাত্র শিবিরের কাছে নামমাত্র মূল্যে বিক্রি করে।

রাজনৈতিক উত্থান ও সম্পত্তির যোগসূত্র: তুরাগ এলাকা আওয়ামী অধ্যুষিত হওয়ায় মোস্তফা খুব সহজেই তুরাগ থানা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হয়ে যান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। বিএনপির অনেক সদস্যের মতে, মোস্তফা শুধুমাত্র সম্পত্তি রক্ষা ও হাতিয়ে নেওয়ার জন্য বিএনপির সাথে যুক্ত হয়েছেন এবং এটি পারিবারিক সিদ্ধান্তেই হয়েছে বলে জনশ্রুতি আছে। অভিযোগ অনুযায়ী, মহানগরীর সদস্য সচিব হওয়ার পর দলের জন্য কিছু করতে না পারলেও তিনি নিজের সমস্যাযুক্ত জায়গাজমিগুলোর কাগজপত্র ঠিকঠাক করার কাজটি সঠিকভাবে শেষ করেছেন।

সম্পত্তি বিষয়ক অভিযোগ: অভিযোগে বলা হয়েছে, মোস্তফা রুপায়ন সিটিতে ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে প্রায় ৬০ কাঠা জমিতে মালিকানা দাবি করছেন এবং এটি নিয়ে কোম্পানির সাথে দলীয় প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করছেন। গত সিটি নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে মোস্তফা ৪০ হাজার ভোটের মধ্যে মাত্র ২৩০০ ভোট পান, যা আওয়ামী লীগের পরাজিত বিদ্রোহী প্রার্থীর চেয়ে ১২০০ ভোট কম ছিল।

ভূমি দখলের অভিযোগ: অভিযোগপত্রে মোস্তফাকে ভূমি খেকো হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। বলা হয়েছে, তিনি যে কোনো বিষয়ে কোর্ট-কাচারি করে অসহায় মানুষকে ভয়ভীতি দেখিয়ে জমি লিখে নিতে পারদর্শী। তিনি বংশের মেয়েদের সম্পত্তি ও গরিব লোকের জায়গা জমি কেনার জন্য টার্গেট করতেন। বৃহত্তর উত্তরায় মোস্তফার নামে-বেনামে প্রায় ৭০০ শতাংশ জমি এবং বিশটির মতো রাজউক প্লট আছে। তার তৈরিকৃত বাড়ি আছে আরও ১০-১২টি। রাজধানীর গুলশান, বনানী ও উত্তরাতে নামে-বেনামে ১০টিরও বেশি ফ্ল্যাট রয়েছে। এসব সম্পত্তির বেশিরভাগই এলাকার গরিব মানুষ এবং নিজ বংশের মেয়েদের সম্পত্তি নামমাত্র মূল্যে কেনা বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে। পৈতৃক সম্পত্তি বাদে প্রায় ৫০০ শতাংশ জমি তিনি ঠকবাজি করে হাতিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

পদ পদবি ব্যবহার করে সম্পত্তি অর্জন: 

দলের মহানগর উত্তর কমিটির সদস্য সচিব পদ পাওয়ার পর মোস্তফা রাজউকে প্রভাব খাটিয়ে সোনারগাঁ জনপদ রোডে ১০ কাঠার একটি প্লট বাগিয়ে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। রাজউকের মামলাযুক্ত প্লটটি দীর্ঘ দিন দখলে রাখার পর ক্ষমতার অপব্যবহার করে নিজের নামে নিয়েছেন। জমিটি নিজের নামে নিয়েই ক্ষান্ত না হয়ে, আইন লঙ্ঘন করে অবৈধ ভবন তৈরি করে কাঁচাবাজার গড়ে তুলেছেন। রুপায়নের সাথে ঝামেলাযুক্ত প্রায় ৬০ কাঠা জমির ভুয়া কাগজপত্রও পদ পদবির জোরে শুদ্ধ করে নিয়েছেন বলে অভিযোগ। রুপায়ন সূত্র জানিয়েছে, মোস্তফা ২০০১ সালে রুপায়নের জন্য জায়গা কেনার দালাল হিসেবে কাজ শুরু করেন। মানুষের কাছ থেকে জমি কেনার জন্য রুপায়ন থেকে টাকা নিলেও প্রতারণার আশ্রয় নেন। রুপায়নের টাকা দিয়ে প্রথমে জমিগুলো নিজ নামে বায়না দলিল করে রেজিস্ট্রেশন করে নিতেন। পরে জমিওয়ালাকে ভুল বুঝিয়ে বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে একই জমি রুপায়নকে আবার লিখে দিতেন, তবে নিজ নামে সম্পাদিত দলিল বা বায়নার তথ্য গোপন রাখতেন।

ভাগিনা আফাজের বিতর্কিত ভূমিকা: 

মোস্তফার ভাগিনা আফাজ উদ্দিন বিএনপি করলেও তাকে নিয়েও যথেষ্ট বিতর্ক রয়েছে। অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক আফাজ উদ্দিন এবং ঢাকা মহানগর উত্তর মহিলা দলের সভাপতি রুনা লায়লা সম্প্রতি একটি বেসরকারি হাসপাতালের কেবিনে "অপকর্ম করতে গিয়ে জনতার হাতে ধরা পড়েছেন"। তার বিরুদ্ধে দলীয় স্বজনপ্রীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার অভিযোগও জোরালো।

চাঁদাবাজি ও আওয়ামী লীগকে আশ্রয় দেওয়া: অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, দলের পক্ষে চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও মাদক কারবারের বিষয়ে "জিরো টলারেন্স" কথা বলা হলেও মোস্তফার পক্ষের সব চাঁদাবাজ, দখলবাজ ও মাদক কারবারিরা নিরাপদে দখল বাণিজ্য করে যাচ্ছেন। মোস্তফা উত্তরায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের আশ্রয় দেওয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল। তার ভাই, ভাতিজা ও বন্ধু আওয়ামী লীগের লোকগুলো এখন রীতিমতো মোস্তফার আশ্রয়ে আছেন। তাদের সহায়-সম্পত্তি দেখাশোনার দায়িত্বও তিনি নিয়েছেন। এরকম শতাধিক আওয়ামী লীগ কর্মীকে আশ্রয় দিয়ে প্রতি মাসে প্রায় ৩০-৩৫ লক্ষ টাকা চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এছাড়া সদস্য সচিব হিসেবে তার ভাগিনা আফাজ নানা তদবির বাণিজ্য করছেন।

ঢাকা-১৮ আসনের জনগণ মোস্তফা ও আফাজ উদ্দিনের অত্যাচার থেকে মুক্তি চান বলে অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

জোহরান মামদানির জয়: বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য গণতান্ত্রিক শিক্ষা

জোহরান মামদানির জয়: বাংলাদেশের রাজনীতির জন্য গণতান্ত্রিক শিক্ষা

ভবিষ্যতের এক নীরব সংকট বেকারত্ব

ভবিষ্যতের এক নীরব সংকট বেকারত্ব

রাজধানীতে প্রযুক্তি খাতে নতুন কেন্দ্রবিন্দু: ঢাকা কম্পিউটার সিটি

রাজধানীতে প্রযুক্তি খাতে নতুন কেন্দ্রবিন্দু: ঢাকা কম্পিউটার সিটি

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের বাসায় পুলিশের অভিযান, আটক ৭

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নওফেলের বাসায় পুলিশের অভিযান, আটক ৭

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App