মুখে লাল কাপড় বেঁধে জাবি শিক্ষকদের প্রতিবাদ মিছিল

জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ: ৩০ জুলাই ২০২৪, ০৫:০৪ পিএম

ছবি: ভোরের কাগজ
কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিহতদের স্মরণে রাষ্ট্রীয় শোক প্রত্যাখ্যান করে ও দেশব্যাপী সাধারণ মানুষকে গুম, খুন, নির্যাতন ও আটকের প্রতিবাদে চোখে-মুখে লাল কাপড় বেঁধে মৌন মিছিল করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা।
মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টায় ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে’র পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে জড়ো হয়ে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে একাত্মতা পোষণ করেন। পরে শহীদ মিনার থেকে মিছিলটি শুরু হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুরাতন ফজিলাতুন্নেসা হল সংলগ্ন শহীদ স্মৃতিস্তম্ভের সামনে গিয়ে কোটা আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভটির সামনে দাড়িয়ে এক মিনিট নিরবতা পালন করেন তারা। পরে মিছিলটি শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এসে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হয়।
সমাবেশে দেশব্যাপী কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষদের হত্যা, তাদের ওপর হামলা, নির্যাতন ও আটকের ঘটনার প্রতিবাদ জানান শিক্ষকরা। বক্তারা কোটা আন্দোলনে সংগঠিত হত্যাকে 'জুলাই গণহত্যা' বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে ‘মিথ্যা মামলায়’ রিমান্ড মঞ্জুর করার ঘটনার নিন্দা জানান।
ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক গোলান রব্বানী বলেন, আমরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্ধিগ্ন। দুইজন মন্ত্রী বলেছেন শিক্ষার্থীদেরকে কোনো ধরণের হয়রানি করা হবে না। কিন্তু আমরা দেখতে পাচ্ছি সারাদেশে শিক্ষার্থীদের উপর মামলা করে, বাসা-বাড়ি থেকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তাহলে বাড়ি থেকে তুলে নেয়া, রাস্তা থেকে তুলে নেয়া এগুলো কি হয়রানি করা নয়? আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও ছাত্র সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে তুলে নিয়ে গেছে ভোররাতে, এরপর দুদিন নিখোঁজ ছিল। গতকাল (সোমবার) আবার মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে ৬ দিনের রিমান্ড দিয়েছে আদালত। এসব দেখে তো আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা বসে থাকতে পারি না। এগুলো একটা স্বাধীন রাষ্ট্রে চলতে পারে না। আরিফ সোহেলসহ ছাত্র আন্দোলনের সব সমন্বয়ককে মুক্তির দাবিতে ও রাষ্ট্রীয় শোককে প্রত্যাখ্যান করে আজকে তাই আমরা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা মৌন মিছিল করেছি।
আরো পড়ুন: নতুন কর্মসূচি দিল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা
ফার্মেসি বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ মাফরুহী সাত্তার বলেন, ‘আন্দোলকারী শিক্ষার্থীদের বেশ কিছু স্লোগানে আমার দুঃখ হচ্ছিলো কারণ কিছু স্লোগানের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে পারছিলাম না। মেনে নিতে পাছিলাম না ‘শেখ হাসিনা স্বৈরাচার’, ‘শেখ হাসিনা বাংলা ছাড়’ এই স্লোগান। আজ বলতেই হচ্ছে ৫২’র ভাষা আন্দোলন দেখিনি, ৬৯ এর আন্দোলন দেখার মতো অবস্থা ছিলো না। ৭১’র যৎসামান্য বুঝেছি। আজকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় স্লোগান দেখে প্রশ্ন জেগেছে তাহলে কি ৯০’র গণঅভ্যুত্থান ব্যর্থ হয়ে গেছে। আজকে যে নিপীড়ন চালানো হচ্ছে, ভীতিকর অবস্থা সৃষ্টি করেছেন এগুলোর সমাধান করে নিজেদের দায় স্বীকার করে শিক্ষার্থীর দাবি মেনে নিয়ে নিজেরাও বাঁচুন আমাদেরকেও বাঁচান।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন জাবি শাখার সমন্বয়ক তৌহিদ সিয়াম বলেন, ‘গত দুইদিন আগে ছয়জন সমন্বয়কারীদের ধরে নিয়ে ডিবি কার্যালয়ে জোরপূর্বক জিম্মি করে আন্দোলন প্রত্যাহারের বক্তব্য আদায় করা হয়। ডিবি কার্যালয় থেকে কোনো কথা বললে সেটি ছাত্রসমাজ গ্রহণ করবে না। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা স্পষ্ট করে বলে দিতে চাই, যে রাষ্ট্র এখন পর্যন্ত আন্দোলন চলাকালে শহিদদের সংখ্যা স্পষ্ট করে বলতে পারছে না এবং যে হত্যার জন্য রাষ্ট্র সরাসরি জড়িত সেই রাষ্ট্রের শোক ছাত্রসমাজ সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে। আমাদের দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলবে। একই সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের জাবি শাখার সমন্বয়ক আরিফ সোহেলকে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানাচ্ছি।’
সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যম বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মৃধা মো. শিবলী নোমানের সঞ্চালনায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন, নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা বিভাগের অধ্যাপক আদিল মুহাম্মদ খান, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক মো. মাসউদ ইমরান ও দর্শন বিভাগের অধ্যাপক মাহমুদা আকন্দ প্রমুখ।