ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে ঢাকার দুই সিটির ১৩ ওয়ার্ড, ৫৯ শতাংশ ভবনে এডিসের লার্ভা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১৮ জুন ২০২৫, ১০:০২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
মৌসুম শুরুর আগেই বেড়েছে ডেঙ্গুর বিস্তার। ফেব্রুয়ারিতে চালানো এক জরিপে দেখা গেছে, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের অন্তত ১৩টি ওয়ার্ড ডেঙ্গুর উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। আর মার্চে দেশের ৮টি জেলায় পরিচালিত জরিপের তথ্য বলছে-বরগুনা, ঝিনাইদহ, মাগুরা, পিরোজপুর ও পটুয়াখালী ডেঙ্গুর সর্বোচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।
বুধবার (১৮ জুন) বিকেলে সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (আইইডিসিআর) অডিটোরিয়ামে ডেঙ্গু রোগের বাহকের কীটতাত্বিক জরিপে (২০২৪-২০২৫) এসব তথ্য উঠে এসেছে। আইইডিসিআর পরিচালক অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন জরিপের তথ্য তুলে ধরেন। ওই জরিপের তথ্য অনুযায়ী, ঢাকার প্রায় ৫৯ (৫৮ দশমিক ৮৮) শতাংশ বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া গেছে। গত বছর মে মাসে প্রকাশিত জরিপে এই হার ছিল ৪২ শতাংশ। এক বছরে বহুতল ভবনে এডিস মশার লার্ভা বেড়েছে ১৬ শতাংশ।
অধ্যাপক ডা. তাহমিনা শিরীন বলেন, রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশনের ৪১ ও ৩১টি ওয়ার্ডে মশার ঘনত্ব নির্দিষ্ট সূচকের চেয়ে বেশি যা ডেঙ্গু রোগের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ। এর মধ্যে ১৩টি ওয়ার্ড সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। ঢাকার বাইরে ঝিনাইদহ, মাগুরা, পটুয়াখালী ও পিরোজপুরে এডিস মশার লার্ভার উপস্থিতি বেশি। পিরোজপুর ও মাগুরায় ১০০ শতাংশ ভেক্টর এডিস অ্যালবোপেক্টাস পাওয়া গেছে। প্লাস্টিক ড্রাম, প্লাস্টিক বাস্কেট ও দইয়ের খালি পাত্রে লার্ভার উপস্থিতি বেশি পাওয়া গেছে।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে ঝুঁকিতে থাকা ওয়ার্ডগুলো হলো- ১২, ২, ৮, ৩৪, ১৩, ২২ নং ওয়ার্ড। আর ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ঝুঁকিপূর্ণ ওয়ার্ডগুলো হলো- ৩১, ৪১, ৩, ৪৬, ৪৭, ৪, ২৩ নং ওয়ার্ড। প্রসঙ্গত, অর্থসংকট ও নানা সীমাবদ্ধতার কারণে এ বছর ডেঙ্গু মৌসুম শুরু হওয়ার আগেই পূর্ব প্রস্তুতিমূলক জরিপ চালাতে পারেনি স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
সভায় প্রশ্নের উত্তরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবু জাফর বলেন, ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যাও বাড়ছে। দেখা যায় শিশু ও বয়স্কদের মধ্যে মৃত্যু হার বেশি। বিশ্বের মধ্যে ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুহার বাংলাদেশে। বিষয়টি লজ্জাজনক।
কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, কোভিড নিয়ে আতঙ্কিত হবার মতো অবস্থা হয়নি। পার্শ্ববর্তী দেশে কোভিডের প্রদুর্ভাব দেখা গেছে। আর তাই আমরা সচেতনতার উপর জোর দিচ্ছি। ডেঙ্গুর বিস্তারের ক্ষেত্রে মৌসুম একটি প্রভাব বিস্তার করে। বরগুনাতে গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর বিস্তার বেশি। ভৌগলিক কারণেও সেখানে ডেঙ্গুর বিস্তার বেড়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি। সংকট থাকায় সেখানে পর্যাপ্ত স্যালাইন সরবরাহ করা হয়েছে। চিকিৎসকও নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
অধ্যাপক ডা. তাহমিনা জানান, আইইডিসিআরের প্রতিনিধি দল বরগুনায় গিয়েছে। প্রতিনিধি দল সেখানকার তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে ঢাকায় আসলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। তবে প্রাথমিক ভাবে ধারনা করা হচ্ছে, সুপেয় পানির অভাবে পানি জমিয়ে রাখার প্রবণতার কারণে বরগুনায় ডেঙ্গুর বিস্তার ঘটেছে।