লকডাউনে ২০০ মাইল হেঁটে বাড়ির কাছে পৌঁছেই মৃত্যু

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২২ এপ্রিল ২০২০, ১১:১৫ এএম

জামলো মাদকাম
করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে ভারতজুড়ে লকডাউন চলছে। লকডাউনে কাজ না থাকায় ১২ বছর বয়সী এক কিশোরী অন্য সঙ্গীদের সঙ্গে বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। ২০০ মাইলের বেশি পথ হেঁটে বাড়ির কাছাকাছি এসে পৌঁছায়ও। কিন্তু বাড়ি থেকে মাত্র ঘণ্টাখানেক দূরত্বে থাকা অবস্থায় মৃত্যু ঘটে তার। জামলো মাদকাম নামের ওই কিশোরী দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা রাজ্যের পিরুর নামক গ্রামে মরিচ ক্ষেতে কাজ করত। গত ১৫ এপ্রিল বোন জামাই ও আরো ১১ জনসহ সেখান থেকে মধ্য ভারতের রাজ্য ছত্তিশগড়ের উদ্দেশে রওনা দেয় মাদকাম। লকডাউনের কারণে কাজ আর যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় তারা পায়ে হেঁটেই বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। ভারতে করোনার প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর ২১ দিনের লকডাউন ঘোষণা করে মোদি সরকার। তা শেষ হওয়ার কথা ছিল ১৪ এপ্রিল। কিন্তু দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পুনরায় লকডাউনের মেয়াদ আগামী ৩ মে পর্যন্ত বাড়ানোর ঘোষণা দেন। এরপর কবে লকডাউন প্রত্যাহার হবে তা নিয়ে সংশয়ে পড়েই জামলো মাদকাম বাড়ি ফেরার সিদ্ধান্ত নেয়। মাদকামের নিজ জেলার প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. বি আর পূজারি বলেন, তেলেঙ্গানা থেকে রওনা দেয়ার তিনদিনের মাথায় তারা প্রায় বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু ঠিক তখনই জামলো মাদকাম মারা যায়। মাদকামের সঙ্গী বাকি ১১ পরিযায়ী শ্রমিককে সরকারি তত্ত্বাবধানে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টাইনে রাখা হয়েছে। তিনি বলেন, পুলিশি বাধা ও তল্লাশি এড়াতে তারা গত তিনদিন ধরেই পাহাড়ি এলাকা দিয়ে হেঁটে বাড়ির পথে আসছিল। পেটের সমস্যা ও বমি করার কারণে যেদিন মৃত্যু হয় সেদিন সকালে সে কিছুই খায়নি বলে আমরা তার সঙ্গীদের কাছ থেকে জানতে পেরেছি। দেহে পানিস্বল্পতা ও অতিরিক্ত ক্লান্তিতে তার মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা ধারণা করছি। মাদকামের নমুনা পরীক্ষায় তার দেহে করোনা ভাইরাসের কোনো উপস্থিতি শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন ডা. পূজারি। এছাড়া তার বাকি ১১ জন সঙ্গীর নমুনা সংগ্রহ করে তা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ফল এখনো আসেনি। প্রসঙ্গত, ভারতে লকডাউন ঘোষণার পরপরই এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে কাজ করতে যাওয়া মানুষের পায়ে হেঁটে বাড়ি ফেরার ঢল নামে। কেননা লাখ লাখ এসব পরিযায়ী শ্রমিক তাদের কাজ হারিয়ে ফেলেন। সরকার আচমকা লকডাউন ঘোষণা করায় বাড়ি ফেরার কোনো উপায়ও ছিল না তাদের।