ফজলুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৬ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:৫৯ পিএম
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুর রহমান। ছবি : সংগৃহীত
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচার ব্যবস্থা নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করে আদালত অবমাননার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী ফজলুর রহমান। সম্প্রতি একটি টেলিভিশন টকশোতে তিনি বলেন, ‘আমি এই আদালত মানি না, এই আদালতের রায় মানি না… এই ট্রাইব্যুনালে শেখ হাসিনার বিচার হতে পারে না।’ তাঁর এসব বক্তব্যকে আদালত অবমাননা হিসেবে দেখছে প্রসিকিউশন।
ট্রাইব্যুনালের এখতিয়ার নিয়ে প্রশ্ন তোলা, আদালতের নিরপেক্ষতায় অভ্যন্তরীণ সমন্বয় রয়েছে বলার ইঙ্গিত এবং প্রসিকিউশনকে উদ্দেশ করে অবমাননাকর মন্তব্য, এই তিনটি অভিযোগ আনা হয়েছে। বুধবার (২৫ নভেম্বর) দুপুরে ট্রাইব্যুনাল-১–এ এগুলো নিয়ে শুনানি হয়। শুনানি গ্রহণ করেন সদস্য বিচারক অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর একক বেঞ্চ।
প্রসিকিউশনের পক্ষে শুনানি করেন প্রসিকিউটর গাজী এমএইচ তামিম ও প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম।
আরো পড়ুন : অনির্বাচিত সরকারের বন্দর বা এলডিসি বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এখতিয়ার নেই
২৩ নভেম্বর চ্যানেল টোয়েন্টিফোরের মুক্তবাক: রাজনীতির তর্ক-বিতর্ক শীর্ষক টকশোতে অংশ নিয়ে ফজলুর রহমান ট্রাইব্যুনালকে অস্বীকার করে বিভিন্ন মন্তব্য করেন। ৪৯ মিনিটের অনুষ্ঠানটির ভিডিও পেনড্রাইভে জমা দিয়েছে প্রসিকিউশন। আদালতেও তাঁর বক্তব্যের অংশ বিশেষ বাজানো হয়।
ভিডিওতে তাঁকে বলতে শোনা যায়, “আমি প্রথম দিন থেকেই বলছি এই কোর্ট মানি না… প্রতিদিন বলছি, এই বিচার আমি মানি না। এই কোর্টে শেখ হাসিনার বিচার হতে পারে না।” তিনি আরো দাবি করেন, প্রসিকিউশনের সবাই ‘শিবির সমর্থিত’।
প্রসিকিউটর গাজী তামিম জানান, ট্রাইব্যুনাল আইন না বুঝেই এমন মন্তব্য করেছেন ফজলুর রহমান। আদালতের আরো জানতে চান, তাঁর পরিচয় কী। উত্তরে জানানো হয়, তিনি বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা এবং আগামী নির্বাচনে এমপি প্রার্থী। জুলাই বিপ্লব নিয়ে মন্তব্য করায় তাঁকে আগেও সাময়িকভাবে বহিষ্কার করেছিল বিএনপি।
তামিম বলেন, ফজলুর রহমান দাবি করেছেন ট্রাইব্যুনাল ১৯৭১ সালের রাজাকারদের বিচার করার জন্য গঠিত, তাই তিনি এটিকে মানেন না। আদালত তখন উল্লেখ করেন, ট্রাইব্যুনাল আইন প্রণীত হয় ১৯৭৩ সালে এবং এই আইনে ১৯৭৩ সালের আগে–পরে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার করা যায়। প্রসিকিউশনও ট্রাইব্যুনালের অবিচ্ছেদ্য অংশ।
ভিডিও পর্যালোচনার পর অভিযোগগুলো গুরুতর বলে মন্তব্য করেন ট্রাইব্যুনাল। তাই চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে পূর্ণাঙ্গ শুনানির জন্য আগামী রোববার (৩০ নভেম্বর) দিন ধার্য করা হয়েছে।
প্রসিকিউটর মিজানুল ইসলাম জানান, অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ এক বছরের বিনাশ্রম কারাদণ্ড বা পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।
তিনি বলেন, ফজলুর রহমান কেবল শেখ হাসিনার বিচার নয়, ট্রাইব্যুনালের সব বিচার–প্রক্রিয়া নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন এবং বিচারক ও প্রসিকিউশনকে অবমাননা করেছেন।আন্তর্জাতিক অপরাধ (ট্রাইব্যুনাল) আইনের ধারা ১১(৪) অনুযায়ী ট্রাইব্যুনাল নোটিশ দিয়ে তাঁর বক্তব্য শুনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে পারে।
