স্বামী-স্ত্রীকে যেসব কথা বলা উচিত নয়

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৭ আগস্ট ২০২৫, ১১:২৮ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
একটি সম্পর্কের ভিত্তি যতটা ভালোবাসায় গড়া, ততটাই টিকে থাকে বোঝাপড়া ও পরস্পরের প্রতি সম্মানবোধের ওপর। বিশেষজ্ঞদের মতে, সুখী দাম্পত্য জীবনের চাবিকাঠি শুধু সময় দেয়া নয়, বরং কীভাবে একে অপরের সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, সেটাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মাঝে মাঝে কিছু কথার আঘাত এতটাই গভীর হয় যে সম্পর্ক থেকে বিশ্বাসটাই সরে যায়।
জেনে নিন এমন ৬টি লাইন, যা সঙ্গীকে বলা উচিত না-
১. তুমি কোনো কাজের না
যেসব কথা আপনার সঙ্গীর আত্মসম্মানে আঘাত করে, সেসব কথা সম্পর্কে দূরত্ব তৈরি করে দেয়। তুমি কোনো কাজের না – এই কথাটি মানুষকে মূল্যহীন মনে করায়। এ ধরনের কথায় একজন সঙ্গীর আত্মবিশ্বাস ভেঙে যায় এবং আত্মসম্মান ক্ষুণ্ণ হয়। ইউনিভার্সিটি অব ক্যালিফোর্নিয়ার একটি গবেষণায় বলছে, দাম্পত্যে অবমাননাকর শব্দ ব্যবহার মানসিক অবসাদ এবং দাম্পত্য বিচ্ছেদের সম্ভাবনা ৭০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়িয়ে দিতে পারে। তাই সঙ্গীর ভুল ধরার বদলে গঠনমূলক পরামর্শ দিন। যেমন – এই কাজটা যদি এভাবে করো, হয়তো সহজ হবে।
২. তোমার পরিবারের লোকজন এমনই
পারিবারিক অপমান আপনার সঙ্গীকে অনুভব করাব যে, আপনার সঙ্গে মন খুলে কিছু শেয়ার করা নিরাপদ না। ঝগড়ার মধ্যে পরিবার টেনে আনা মানে সঙ্গীর শেকড়কে আঘাত করা। এতে দুজনের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে। আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশনের মতে, যারা পারিবারিক অপমান সহ্য করে, তাদের দাম্পত্য সম্পর্কের মানসিক নিরাপত্তা দ্রুত নষ্ট হয় এবং সেই ক্ষত সহজে সারেও না। এ কারণে যদি কোনো আচরণ নিয়ে সমস্যা হয়, সেটা নির্দিষ্ট করে বলুন, পরিবারের পুরো চরিত্র নিয়ে মন্তব্য করবেন না।
৩. তুমি সবসময় এটা করো বা তুমি কখনোই সেটা করোনি
এ ধরনের ‘চিরন্তন সত্য’ ধরনের কথঅ দাম্পত্যে বিষ ঢালে। ‘সবসময়’ বা ‘কখনোই’ ধলনের শব্দ সম্পর্কের আলোচনাকে তর্কে রূপান্তর করে। ফলে সঙ্গী তখন আত্মরক্ষামূলক আচরণ করতে থাকে, আর পারস্পরিক বোঝাপড়ার সুযোগ কমে যায়। দ্য গটম্যান ইনস্টিটিউটের একটি গবেষণায় দেখা যায়, এই ধরনের ভাষা ব্যবহার ‘ফোর হর্সমেন অব দ্য অ্যাপোকিলিপ্স’ এর মধ্যে পড়ে, যা বিবাহবিচ্ছেদের চারটি প্রধান পূর্বাভাসকে ইঙ্গিত করে। তাই এমন কথা না বলে নির্দিষ্ট পরিস্থিতির উদাহরণ দিয়ে বলুন। যেমন – গতকাল তুমি আমাকে না জানিয়ে বের হয়ে গেলে, এটা আমার ভালো লাগেনি।
৪. তোমাকে বিয়েই করা উচিত হয়নি
সম্পর্কের ভিত্তিকে আঘাত করার মতো কথাগুলো আপনার সঙ্গীর মাথায় থেকে যায়, ঝগড়া মিটে যাওয়ার পরও। কারণ এটি শুধু একটি রাগের কথা নয়, বরং সম্পর্ককে অস্বীকার করার মতো আঘাত। একে বলা হয় ‘রিলেশনার অ্যাটাক’, যা একজন মানুষকে মানসিকভাবে বিচ্ছিন্ন করে দেয়। হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুলের মতে, এমন বাক্য বারবার বললে সম্পর্কের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি বিষণ্ণতা ও সম্পর্কহীনতা তৈরি হয়। সঙ্গী আত্মগ্লানিতে ভোগে। তাই সম্পর্ক নিয়ে হতাশা থাকলে সেই অনুভূতি নিয়ে কথা বলুন। যেমন - আমি কিছু বিষয় নিয়ে অসন্তুষ্ট, আমাদের কথা বলা দরকার।
৫. তুমি যদি আমাকে ভালোবাসতে, তাহলে এটা করতে
এটি এক ধরনের ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল বা আবেগ দিয়ে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা। ভালোবাসার শর্ত দেওয়ার মানে, আপনি সম্পর্ককে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছেন। মায়ো ক্লিনিক ও আমেরিকান সাইকোলজিকাল অ্যাসোসিয়েশন বলছে, আবেগ দিয়ে সঙ্গীকে দায়বদ্ধ করার চেষ্টা দীর্ঘ মেয়াদে মানসিক চাপ তৈরি করে, যা সঙ্গীর আত্মমর্যাদা কমিয়ে দেয়। তাই এ ধরনের কথা না বলে আপনার চাওয়া ও অনুভূতি স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করুন। যেমন – তুমি যদি আমার সঙ্গে বেশি সময় কাটাতে, আমি খুশি হতাম।
৬. তুমি বদলে গেছো
আক্ষেপভরা স্বরে এ কথা বললে পরিবর্তনকে নেতিবাচক হিসেবে উপস্থাপন করা হয়। কিন্তু প্রতিটি মানুষ সময়ের সঙ্গে বদলায়। সেটা যদি একজন সঙ্গী স্বাভাবিকভাবে নিতে না পারেন, তখন সমস্যার জন্ম হয়। সাইকোলজি টুডেতে প্রকাশিত একটি নিবন্ধে বলা হয়, পরিবর্তনকে ইতিবাচক আলোচনায় আনলে দাম্পত্য টিকে থাকে, কিন্তু অভিযোগ করে তুললে ক্ষোভ বাড়ে।
সঙ্গীর কোনো পরিবর্তন মেনে নিতে অসুবিধা হলে তাকে সরাসরি বলুন - তুমি আগে যেভাবে আমার খেয়াল রাখতে, সেটা আমি মিস করি। কথা সম্পর্কের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। একই অনুভূতি আপনি অনেকভাবে প্রকাশ করতে পারবেন। তবে একটি লাইন হয়তো আপনার সঙ্গীকে আপনার অনেক কাছে টেনে আনতে পারে, আরেকটি লাইন দূরে সরিয়ে দিতে পারে। তাই সঙ্গীর সঙ্গে ভেবেচিন্তে কথা বলুন। ‘ঘরের মানুষ’ বলে অবহেলা করবেন না।