গাজায় যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে উচ্ছ্বাসের জোয়ার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৩:২৬ পিএম

ইসরায়েল-ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী চুক্তি স্বাক্ষরের পর গাজায় উচ্ছ্বাস। ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েল ও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা নিয়ন্ত্রণকারী রাজনৈতিক গোষ্ঠী হামাসের মধ্যে যুদ্ধবিরতি চুক্তি স্বাক্ষরের খবরে গাজায় আনন্দের জোয়ার নেমে এসেছে। কেউ আনন্দে কাঁদছেন, কেউ গান গাইছেন, নাচছেন, কেউ বা বাঁশি বাজিয়ে উল্লাস প্রকাশ করছেন। চারদিকে শোনা যাচ্ছে ‘আল্লাহু আকবর’ ধ্বনি।
গাজার বাসিন্দা ও পাঁচ সন্তানের মা ঘাদা জানান, খবরটি শোনার পর থেকেই তিনি আনন্দে কেঁদে চলেছেন। বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে তিনি বলেন, হ্যাঁ, আমি কাঁদছি, কিন্তু এটা আনন্দের অশ্রু। মনে হচ্ছে, নতুন করে আবার জন্ম নিলাম। আশা করছি, এই ভয়াবহ যুদ্ধের শেষ হচ্ছে।
ঘাদা বলেন, ইসরায়েলি বোমায় বাড়িঘর ধ্বংস হয়ে যাওয়ার পর গত ১৫ মাস ধরে তাঁবুতে বসবাস করছেন তিনি ও তাঁর পরিবার।
গত ২৯ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটনে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজায় যুদ্ধবিরতি পরিকল্পনা ঘোষণা করেন। ইসরায়েল, মিসর ও কাতার সঙ্গে সঙ্গে এতে সম্মতি জানায়, তবে হামাস তখন নীরব থাকে। পরে ৩ অক্টোবর হামাসও সম্মতি জানায়। ৪ অক্টোবর ট্রাম্প ইসরায়েলকে গাজায় বোমাবর্ষণ বন্ধের নির্দেশ দেন। এরপর ৬ অক্টোবর মিসরের শারম আল শেখে ইসরায়েল, হামাস, মিসর, যুক্তরাষ্ট্র ও কাতারের প্রতিনিধিদের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়।
আরো পড়ুন : গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে ট্রাম্পের প্রস্তাবই সেরা: রাশিয়া
দুই দিনের আলোচনার পর গতকাল রাতে ট্রাম্পের পরিকল্পনার প্রাথমিক বাস্তবায়নের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ইসরায়েল ও হামাস চুক্তিতে স্বাক্ষর করে। এই প্রথম ধাপটি ছয় সপ্তাহ স্থায়ী হবে। এই সময়ে হামাস তাদের হাতে থাকা সব জিম্মিকে মুক্তি দেবে, বিনিময়ে ইসরায়েল গাজায় সামরিক অভিযান বন্ধ রাখবে, বন্দি ফিলিস্তিনিদের মুক্তি দেবে এবং ধীরে ধীরে সেনা প্রত্যাহার করবে।
চুক্তির খবর প্রকাশিত হতেই গাজার খান ইউনিস শহরে রাতেই আনন্দ মিছিল বের হয়। তরুণ-তরুণীরা বাঁশি, খঞ্জনি ও ড্রাম বাজিয়ে গান গেয়ে উল্লাস করেন।
স্থানীয় তরুণী ইমান আল কৌকা বলেন, আজ আমাদের আনন্দের দিন, আবার দুঃখেরও দিন। আমরা হাসব, আবার কাঁদবও যাদের হারিয়েছি, যা হারিয়েছি, সবকিছু স্মরণে। আমরা শুধু মানুষ নয়, আমাদের শহরও হারিয়েছি। এই যুদ্ধ আমাদের প্রাগৈতিহাসিক যুগে ফিরিয়ে দিয়েছে।
গাজার বাসিন্দা আহমেদ দাহমান জানান, ইসরায়েলি হামলায় তিনি নিজের বাড়িঘর ও বাবাকে হারিয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে বাবার মরদেহ রেখে পালাতে বাধ্য হয়েছিলেন। তিনি বলেন, অবশেষে গাজায় রক্তপাত বন্ধ হচ্ছে, এটা আনন্দের খবর। কিন্তু যুদ্ধ-পরবর্তী পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। আমরা ফিরে গেলে দেখব, কিছুই আর অবশিষ্ট নেই। প্রথম কাজ হবে বাবার দেহাবশেষ খুঁজে দাফন সম্পন্ন করা।
আহমেদের মা বুশরা বলেন, এই যুদ্ধবিরতি আমার স্বামীকে ফিরিয়ে দেবে না, কিন্তু অনেকের জীবন রক্ষা পাবে। আমি কাঁদব এমন কান্না, যা কোনোদিন কাঁদিনি। কারণ এই নিষ্ঠুর যুদ্ধ আমাদের কাঁদার সময়ও দেয়নি।