ইসরায়েলি অবরোধে ক্ষুধা-শীতে বিপর্যস্ত গাজাবাসী
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ নভেম্বর ২০২৫, ১১:২০ এএম
ছবি : সংগৃহীত
যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় মানবিক বিপর্যয় কমেনি। ইসরায়েলের অবরোধে ক্ষুধা, শীত, চিকিৎসা সংকট এবং নতুন করে হামলার আতঙ্কে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন লাখো ফিলিস্তিনি।
সোমবার (৩ নভেম্বর) আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে জানানো হয়, যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় ঘোষিত যুদ্ধবিরতির পরও গাজায় ইসরায়েলের হামলা অব্যাহত রয়েছে। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, গত এক মাসে অন্তত ২৩৬ জন নিহত এবং ৬০০ জনের বেশি আহত হয়েছেন। শুধুমাত্র গত ২৪ ঘণ্টায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে, পাশাপাশি ধসে পড়া ভবন থেকে আরো তিন মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি শুরু হওয়ার পর থেকে ধ্বংসস্তূপের নিচ থেকে আরো ৫০০ ফিলিস্তিনির মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। তারা সবাই ইসরায়েলের টানা বোমাবর্ষণ ও ধ্বংসযজ্ঞের শিকার।
রোববার সন্ধ্যায় ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানায়, রেডক্রসের মাধ্যমে তিনজন ইসরায়েলি বন্দির মরদেহ ফেরত নেওয়া হয়েছে। যুদ্ধবিরতির শর্ত অনুযায়ী, প্রতিটি ইসরায়েলি বন্দির মরদেহের বিনিময়ে ১৫ জন মৃত ফিলিস্তিনি বন্দির মরদেহ ফেরত দিতে হবে।
এদিকে, মার্কিন সেনা সদর দপ্তর সেন্টকম অভিযোগ করেছে যে, হামাস দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে একটি ত্রাণবাহী ট্রাক লুট করেছে। তবে কোনো প্রমাণ দেখানো হয়নি। গাজার সরকারি গণমাধ্যম এই অভিযোগ অস্বীকার করে জানায়, এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ইসরায়েলের পরিকল্পিত প্রচারণা- ফিলিস্তিনিদের কলঙ্কিত করার উদ্দেশ্যে।
ইসরায়েলি অবরোধে চিকিৎসা ব্যবস্থা প্রায় ভেঙে পড়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) জানায়, বিশেষায়িত চিকিৎসার প্রয়োজন এমন ১৬ হাজার ৫০০-এর বেশি রোগী এখনো গাজায় আটকা রয়েছেন। জাতিসংঘের তথ্যমতে, সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মিসর, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কাতার, তুরস্ক ও ইতালি মিলে প্রায় ৭ হাজার আহত ফিলিস্তিনিকে চিকিৎসা দিয়েছে, তবে এখনও হাজারো রোগী বিদেশে চিকিৎসার অপেক্ষায় আছেন।
এদিকে শীত ঘনিয়ে আসায় বাস্তুচ্যুত মানুষরা বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টায় লিপ্ত। নির্মাণসামগ্রী নিষিদ্ধ থাকায় অনেকেই কাদা ও ধ্বংসস্তূপের ইট দিয়ে অস্থায়ী ঘর তৈরি করছেন। গাজার বাসিন্দা খালেদ আল-দাহদুহ বলেন, শীত আসছে, তাই ধ্বংসস্তূপের ইট আর কাদা দিয়ে একটা ঘর বানিয়েছি, অন্তত ঠান্ডা থেকে কিছুটা রক্ষা পাব।
জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচি (ইউএনডিপি)র প্রতিনিধি আলেসান্দ্রো ম্রাকিচ সতর্ক করে বলেন, নির্মাণসামগ্রীর অভাবে মানুষ প্রাচীন পদ্ধতিতে আশ্রয় গড়ছে। তাপমাত্রা আরো কমলে পরিস্থিতি ভয়াবহ হতে পারে।
যুদ্ধবিরতি চললেও ক্ষুধা, ঠান্ডা আর অনিশ্চয়তার মধ্যে গাজার মানুষ আজও মৃত্যুভয়ে দিন কাটাচ্ছে।
