আদালতে কথা বলতে গিয়ে তোপের মুখে গোলাপ ও রুপা

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৬ আগস্ট ২০২৪, ০৮:৩২ পিএম

ছবি: সংগৃহীত
আদালতে কথা বলতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ এবং একাত্তর টেলিভিশনের সাবেক প্রধান প্রতিবেদক ফারজানা রুপা। এই পরিস্থিতিতে কথা বলেননি গোলাপ। আর কথা বলা শুরু করলেও শেষ করতে পারেননি রুপা।
সোমবার (২৬ আগস্ট) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোশাররফ হোসেনের আদালতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে রাজধানীর আদাবরে গার্মেন্টস কর্মী রুবেল হত্যা মামলার শুনানি হয়। এসময় আইনজীবীদের তোপের মুখে পড়েন গোলাপ ও রুপা। পরে গোলাপের ৭ দিন এবং সাংবাদিক দম্পতি শাকিল আহমেদ ও রুপার ৫ দিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
তিনজনকেই বিকেল ৫টার দিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। তাদের সিএমএম আদালতের হাজতখানায় রাখা হয়। ৫টা ৮ মিনিটে এজলাসে তোলা হলে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আদাবর থানার পরিদর্শক মিন্টু চন্দ্র বণিক শাকিল ও রুপাকে গ্রেপ্তার দেখানোসহ ১০ দিনের রিমান্ড আবেদন করেন। গোলাপেরও সমান রিমান্ড আবেদন করা হয়।
৫টা ১২ মিনিটে আদালতের বিচারকাজ শুরু হলে প্রথমে শাকিল ও রুপাকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন আদালত। এরপর তিন আসামির রিমান্ডের বিষয়ে শুনানি হয়।
পরে রাষ্ট্রপক্ষ আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ডের প্রার্থনা করেন। রাষ্ট্রপক্ষ জানায়, গোলাপ এই মামলার এজাহারের ৭৫ নম্বর আসামি। আর শাকিল-রুপা তদন্তেপ্রাপ্ত আসামি। তারা ঘটনার সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত।
এসময় বিএনপিপন্থি আইনজীবী ওমর ফারুক ফারুকী আসামিদের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুরের পক্ষে শুনানি করেন। তিনি বলেন, শেখ হাসিনা এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, তার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টারে চলাফেরা করেন। গোলাপ অবৈধ সংসদের অনির্বাচিত সদস্য। পিয়ন যদি ৪০০ কোটি টাকার মালিক হন, গোলাপ হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। টাকা পাচার করেছেন, বেগমপাড়ায় বাড়ি করেছে। আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের ওপর গুলি চালাতে প্ররোচনা দিয়েছেন তিনি।
আইনজীবী ওমর ফারুক বলেন, শাকিল ও রুপা শেখ হাসিনাকে স্বৈরাচার হতে সাহায্য করেছে। সরকারকে আরো কঠোর হয়ে আন্দোলনকারীদের ওপর গুলি চালাতে টেলিভিশনে টকশো করে জনমত তৈরি করেছেন। সাংবাদিকদের আমরা সম্মান করি। কিন্তু তারা সাংবাদিকতার নামে অপসাংবাদিকতা করেছে।
শুনানিতে শাকিল ও রুপার আইনজীবী বলেন, তারা প্রথিতযশা সাংবাদিক, ঘটনাস্থলে ছিলেন না। পেশাগত দায়িত্ব পালনে অফিসে ছিলেন। আরেক মামলায় রিমান্ডে ছিলেন। আজকের মামলায় আবার গ্রেপ্তার দেখিয়ে রিমান্ড আবেদন করেছেন। অথচ রিমান্ডে নেয়ার মতো সাধারণ উপাদানও নেই।
গোলাপের আইনজীবী বলেন, তিনি অসুস্থ, বাম পায়ে সমস্যা। দাঁড়াতে পারেন না। সপ্তাহে ৬ দিন থেরাপি দিতে হয়। এছাড়া হার্টের সমস্যা রয়েছে। রিমান্ড বাতিল করে তাকে জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদ করা হোক।
এসময় এই আইনজীবী বলেন, জাতীয় দলের ক্রিকেটার সাকিব আল হাসানও এ মামলার আসামি। এতে বিএনপিপন্থী আইনজীবীরা প্রতিবাদ করে ওঠেন। তারা বলতে থাকেন, সাকিব এখানে নেই। তার প্রসঙ্গ কেন আসবে।
তখন আব্দুর রশীদ নামে এক আইনজীবী বলেন, এমন নিষ্ঠুরতা, অমানবিকতা আর কোথাও হয়নি। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের হত্যা করা হয়েছে। এরা গণহত্যাকারী। তাদের প্রত্যেকেরই ১০ দিনের রিমান্ড হওয়া প্রয়োজন। নাহলে যারা মারা গেছে তাদের আত্মা কষ্ট পাবে।
এরপর আদালত আসামিদের বক্তব্য শুনতে চান। তখনো আইনজীবীরা এর বিরোধিতা করেন। আদালত বলেন, এক মিনিটে কথা শেষ করবেন। আদালতের অনুমতি পেয়ে প্রথমে আত্মপক্ষ সমর্থন করেন গোলাপ। তিনি বলেন, আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা।
এসময় আবারও আদালতে হট্টগোল শুরু হয়। আইনজীবীরা চিৎকার করে বলতে থাকেন, কীসের মুক্তিযোদ্ধা। তার বয়স কত? আইনজীবিদের তোপের মুখে গোলাপ আর কোনো কথা বলেননি।
এসময় বিএনপিপন্থি আইনজীবী ওমর ফারুক বলেন, তাদের আইনজীবী কথা বলেছেন। ওদের তো কথা বলার প্রয়োজন নেই। তারা কথা বললে পরিস্থিতি খারাপ হয়ে যাবে।
এর মধ্যেই রুপা আদালতকে বলেন, মাননীয় আদালত, আপনি আদালত পরিচালনা করছেন, না উনারা করছেন? এটা কি আদালত অবমাননার শামিল নয়? পরে আদালত তাদের রিমান্ডের আদেশ দেন।
এরপর শাকিল-রুপাকে সিএমএম আদালতের হাজতখানায় নিয়ে যাওয়া হয়। তখন সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শাকিল বলেন, সাংবাদিকতা কোনো অপরাধ না। সত্য ও ন্যায়ের পক্ষে সাংবাদিকতা করেছি।