তিস্তা মহাপরিকল্পনা কখন চূড়ান্ত হবে, জানালেন রিজওয়ানা হাসান

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ১২:৩৩ এএম

ছবি: সংগৃহীত
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, প্রয়োজনীয় পরিবর্তনসহ তিস্তা মহাপরিকল্পনা ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত হবে। রবিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) পড়ন্ত বিকেলে তিস্তা নদীর পাড়ে রেলব্রিজ এলাকায় রংপুর জেলা প্রশাসনের আয়োজিত তিস্তা নিয়ে করণীয় শীর্ষক গণশুনানিতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।
রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০১৬ সালে তিস্তা মহাপরিকল্পনা নিয়ে যে চুক্তিটা হয়েছিল, সেই চুক্তি অনুযায়ী চায়না একটি পরিকল্পনা দিয়েছিল। ওইটা যখন আবার চায়না সরকারকে পাঠানো হয়, তখন তারা বলে, যেভাবে পরিকল্পনা সাজানো হয়েছে, তাতে স্থায়ী হবে না। এখন চায়না আবার আমাদের কাছে দুই বছরের সময় চেয়েছে। আমরা তাদের দুই বছরের সময় দিতে সম্মত হয়েছি।
তিনি উল্লেখ করেন, সেখানে দুটি শর্ত যোগ করা হয়েছে। শর্ত দুটির মধ্যে একটি হলো, মহাপরিকল্পনায় যে বিষয়গুলো থাকবে এবং থাকবে না, তা তিস্তা পাড়ের মানুষের সঙ্গে কথা বলে মতামত নিয়ে ঠিক করতে হবে। দ্বিতীয় শর্ত হচ্ছে ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে চূড়ান্ত করতে হবে।
পরিবেশ উপদেষ্টা বলেন, বন্যার সময় ভারত বাঁধ খুলে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে জানালে আমরা মানুষদের সরিয়ে নিতে পারি। তাতে বন্যায় জানমালের ক্ষতি থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আমাদের মন্ত্রণালয় থেকে ভারতকে এ বিষয়ে বারবার বলেছি, আবারও বলব। বাঁধ খুলে দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে জানাতে হবে।
তিনি বলেন, তিস্তায় ৪৫ কিলোমিটার হচ্ছে পানি ভাঙন-প্রবণ। এর মধ্যে ২০ কিলোমিটার হচ্ছে বেশি ভাঙন-প্রবণ এলাকা। আমাদের তো চুক্তি হতে কিংবা মহাপরিকল্পনা হতে দেরি হচ্ছে। এই বছরে তো আবারও নদী ভাঙবে। এজন্য আজকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের সঙ্গে বসা হয়েছিল এবং তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
রিজওয়ানা হাসান জানান, আগামী সপ্তাহের মধ্যে এই ভাঙন এলাকা নিয়ে টেন্ডার করবে। সেই সঙ্গে এই সপ্তাহের মধ্যে তারা ডিজাইন চূড়ান্ত করবে। আগামী মার্চের মধ্যে কাজ শুরু হবে। ৪৫ কিলোমিটার ভাঙন এলাকা ধরে কাজটা শুরু করতে চাই।
তিনি বলেন, যখন অন্তর্বর্তী সরকার থাকবে না, তখন আমিও উপদেষ্টা থাকব না। সেই সময় আমি আপনাদের কাতারে অতীতের মতো দাঁড়াব এবং আওয়াজ তুলব, যাতে এই সময়ের করা ভিত্তির-ওপর থেকে সেই সময়ের সরকার কাজ করতে পারে।
এসময় তিস্তা রেলব্রিজ এলাকায় তিস্তা নিয়ে করণীয় শীর্ষক গণশুনানি মঞ্চে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় এবং যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়া।
রংপুর বিভাগীয় কমিশনার শহিদুল ইসলাম এনডিসির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণশুনানি মঞ্চে আরো বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব এ কে এম তারিকুল ইসলাম, জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রবিউল ফয়সাল, নদী গবেষক নজরুল ইসলাম হক্কানী, নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. আতিক মুজাহিদ, আবু সাঈদ লিয়ন, বিএনপি নেতা এমদাদুল হক ভরসাসহ অন্য বক্তারা।
এর আগে সকাল থেকেই তিস্তা নদী নিয়ে গণশুনানিতে অংশ নিতে মানুষজন আসতে শুরু করে। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে মানুষের ঢল নামে তিস্তা পাড়ে। গণশুনানিতে অংশ নেয়া মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তাদের কথা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখা নয় বরং বর্তমান সরকারের আমলেই এই মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়ন চান এলাকাবাসী।