রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে প্রধান উপদেষ্টার ৭ প্রস্তাব

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ আগস্ট ২০২৫, ০২:২৬ পিএম

সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ছবি : সংগৃহীত
রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সাত দফা প্রস্তাব তুলে ধরেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। সোমবার (২৫ আগস্ট) কক্সবাজারের হোটেল বে ওয়াচে রোহিঙ্গা ইস্যুতে অংশীজন সংলাপে তিনি এ প্রস্তাব পেশ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ২০১৭ সালের এই দিনে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত অতিক্রম করে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য, এখনও নতুন করে রোহিঙ্গাদের আগমন অব্যাহত রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো ইতিহাসের সঠিক পাশে দাঁড়ানো এবং জাতিগত নিধন বন্ধ করানো।
অধ্যাপক ইউনূসের সাত দফা প্রস্তাব
প্রথমত, রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে নিরাপদে ফিরতে হবে। এজন্য দ্রুত একটি বাস্তব রোডম্যাপ তৈরি করতে হবে, যাতে তাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিত হয়।
দ্বিতীয়ত, জীবনরক্ষাকারী সহায়তা অব্যাহত রাখতে আন্তর্জাতিক দাতা সংস্থার সীমাহীন অবদান প্রয়োজন। তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং ভবিষ্যতের জন্য টেকসই অর্থায়নের আহ্বান জানানো হয়।
তৃতীয়ত, রোহিঙ্গাদের প্রতি সকল ধরনের নিপীড়ন বন্ধ করতে হবে। মিয়ানমার সরকার ও আরাকান আর্মিকে রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা, নিরাপত্তা ও জীবিকা নিশ্চিত করতে হবে। একইসঙ্গে নতুন করে যেন কেউ বাংলাদেশে প্রবেশ না করে এবং মিয়ানমারের অভ্যন্তর বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ বাড়িতে ফিরতে দিতে হবে।
চতুর্থত, মিয়ানমারের ভেতরে সহিংসতা বন্ধে ও জাতিগত নিপীড়ন রোধে সংলাপের একটি কার্যকর প্ল্যাটফর্ম তৈরি করতে হবে। রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিতে মিয়ানমার সরকার ও রাখাইন কর্তৃপক্ষকে গঠনমূলক সংলাপ চালাতে হবে।
আরো পড়ুন : সম্মেলনে যোগ দিতে কক্সবাজারে প্রধান উপদেষ্টা
পঞ্চমত, আসিয়ানসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রাখাইনে নিরাপদ পরিবেশ তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখা। তাদের সক্রিয় সহযোগিতা সংকট সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
ষষ্ঠত, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অংশীজনদের জাতিগত নিধনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে হবে।
সপ্তমত, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বন্ধে এবং ন্যায়বিচার ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
অধ্যাপক ইউনূস বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যার উৎপত্তি মিয়ানমারে, তাই সমাধানও মিয়ানমারেই হতে হবে। আন্তর্জাতিক মহলকে এখনই সক্রিয় হতে হবে। আপনাদের সোচ্চার ভূমিকা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসনের আশা জাগাতে পারে।
তিনি বলেন, ২০১৭ সালসহ এর আগেও মানবিক কারণে বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশ প্রায় ১৩ লাখ রোহিঙ্গাকে আশ্রয় দিচ্ছে, ফলে কক্সবাজার বিশ্বের সবচেয়ে বড় শরণার্থী ক্যাম্পে পরিণত হয়েছে। প্রতিবছর গড়ে ২২ হাজার শিশু জন্ম নিচ্ছে ক্যাম্পে। অন্যদিকে, মিয়ানমারে এখন ৫ লাখেরও কম রোহিঙ্গা রয়েছে। এ তথ্য প্রমাণ করে যে এখনও নিপীড়নের কারণে রোহিঙ্গারা দেশত্যাগে বাধ্য হচ্ছে।
প্রধান উপদেষ্টা জানান, গত আট বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতি, পরিবেশ, সমাজ, বাস্তুসংস্থান ও শাসনব্যবস্থায় রোহিঙ্গা সংকটের ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। নানা চ্যালেঞ্জ থাকা সত্ত্বেও টেকসই সমাধান ছাড়া এই সংকট মোকাবিলা করা সম্ভব নয়।
আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়, অংশীজন ও দাতা সংস্থার অব্যাহত প্রচেষ্টার প্রশংসা করে ড. ইউনূস বলেন, আপনাদের নিরলস প্রচেষ্টা অত্যন্ত জরুরি, যতদিন না রোহিঙ্গারা নিরাপদে নিজ দেশে ফিরতে পারছে।