আজ মহান বিজয় দিবস
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:০৫ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
আজ ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস। বাঙালি জাতির শৌর্য, বীরত্ব ও আত্মত্যাগের এক অবিস্মরণীয় গৌরবময় দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের পর বাঙালি জাতি অর্জন করেছিল চূড়ান্ত বিজয় এবং পৃথিবীর মানচিত্রে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয় ঘটে।
বিজয় দিবস উপলক্ষে দেশজুড়ে চলছে নানা কর্মসূচি ও আয়োজন। রাজধানী ঢাকা থেকে শুরু করে প্রত্যন্ত গ্রাম পর্যন্ত বিজয়োল্লাসে মুখরিত গোটা দেশ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে আয়োজন করা হয়েছে আলোচনা সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ও বিশেষ প্রদর্শনীর।
সকালে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রথমে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন। এরপর প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস সেখানে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। পরে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপদেষ্টার নেতৃত্বে বীরশ্রেষ্ঠ পরিবার, যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা ও বীর মুক্তিযোদ্ধারা পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। পাশাপাশি বিদেশি কূটনীতিক, বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন এবং সর্বস্তরের মানুষ মহান মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
দিবসটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি ও প্রধান উপদেষ্টা পৃথক বাণীতে জাতির প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার বাণীতে বলেন, স্বাধীনতার প্রকৃত সুফল জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে গণতন্ত্রকে আরও শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হবে। তিনি মুক্তিযুদ্ধে শহীদ, যুদ্ধাহত ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গভীর শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন।
প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস তার বাণীতে বলেন, এবারের বিজয় দিবস হোক জাতীয় জীবনে নতুন করে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার দিন। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে যে নবযাত্রা শুরু হয়েছে, তা রক্ষার শপথ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
বিজয় দিবস উপলক্ষে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিদেশি কূটনীতিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এছাড়া, তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে সশস্ত্র বাহিনীর ফ্লাই-পাস্ট ও বিশেষ ব্যান্ড শো অনুষ্ঠিত হবে। একই সঙ্গে সর্বোচ্চসংখ্যক জাতীয় পতাকা নিয়ে প্যারাশুটিং করে নতুন গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় তিন দিনব্যাপী বিজয় মেলা, শিশুদের জন্য আবৃত্তি, রচনা ও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। শিল্পকলা একাডেমি, বাংলা একাডেমি, জাতীয় জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক অনুষ্ঠানমালা বাস্তবায়ন করছে। বিদেশে অবস্থিত বাংলাদেশ দূতাবাসগুলোও দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করছে।
রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও রয়েছে নানা কর্মসূচি। বিএনপি জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদনসহ দলীয় কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। জামায়াতে ইসলামী রাজধানীতে যুব ম্যারাথন আয়োজন করছে। জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জাতীয় স্মৃতিসৌধে শ্রদ্ধা নিবেদন এবং আগ্রাসনবিরোধী যাত্রার কর্মসূচি দিয়েছে।
মহান বিজয় দিবসে সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ পরিবারের সদস্যদের সংবর্ধনা দেওয়া হবে। আনন্দ-উৎসব আর শ্রদ্ধার মধ্য দিয়ে জাতি আজ স্মরণ করছে স্বাধীনতার জন্য আত্মোৎসর্গকারী সকল শহীদকে এবং উদযাপন করছে স্বাধীন বাংলাদেশের ৫৪তম বিজয় দিবস।
