ভারত প্রশ্নে কৌশলী অবস্থান বিএনপির

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০৫:৪১ পিএম

বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। ছবি : ভোরের কাগজ
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরকালে দেশটির সাথে সম্পাদিত ‘চুক্তি-সমঝোতাসমূহ’ দেশের স্বার্থ বিরোধী অভিহিত করে এর বিরুদ্ধে আন্দোলনের কর্মসূচি দেবে বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকে নেয়া এই সিদ্ধান্তের কথা জানান দলটির মহাসচিব।
তিনি বলেন, সম্প্রতি শেখ হাসিনা ভারত সফরে দেশটির সঙ্গে ২টি চুক্তি, ৫টি নতুন সমঝোতা ও ৩টি চুক্তি নবায়নসহ ১০টি চুক্তি সমঝোতা সই হওয়ায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সভায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। সম্পাদিত চুক্তিগুলোতে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়।
চুক্তিগুলো বাংলাদেশের স্বার্থ বিরোধী হওয়ায় বিএনপি এই চুক্তিগুলো প্রত্যাখান করছে। আমি স্পষ্টভাষায় বলতে চাই, বিএনপি সৃষ্টির হয়েছে দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে। বিএনপি দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য সব রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এ বিষয়ে আমরা ২৮ তারিখে সংবাদ সম্মেলন করব। এরপরে আমরা প্রয়োজন হলে যে কর্মসূচি নেব সেটা আপনারা জানতে পারবেন।
আরো পড়ুন : দেশের স্বার্থ আদায়ে সরকার ব্যর্থ : বিএনপি
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বিএনপি মহাসচিব বলেন, তবে আমাদের কথা পরিষ্কার, আমাদের এই যে বক্তব্য বা আমাদের যে আন্দোলন এটা কিন্তু ভারতের বিরুদ্ধে নয়, এটা সরকারের বিরুদ্ধে।
তিনি বলেন, সরকার সম্পূর্ণভাবে ব্যর্থ হচ্ছে ভারতকে রিচ করতে বা তার কাছ থেকে দাবিগুলো আদায় করে নিয়ে আসতে। আপনি (সরকার) অভিন্ন নদীগুলোর পানির হিৎসা না পেয়ে চুক্তি সই করতে চাচ্ছেন। তিস্তার পানি আমাদের সবচেয়ে আগে দরকার কিন্তু তিস্তা প্রকল্পের কাজ করতে চায় সরকার। কারণ প্রকল্প হলে অনেক টাকা। সেই টাকাই তাদের (সরকার) আসলে উদ্দেশ্যে।
তিনি বলেন, আজকে পত্রিকায় দেখলাম, পরিষ্কার করেই মমতা ব্যানার্জি বলে দিয়েছেন যে, পশ্চিম বাংলাকে বাদ দিয়ে এটা করা যাবে না, তারা দেবে না। এজন্য আপনাকে তো অবশ্যই চাপ প্রয়োগ করা দরকার। ফারাক্কা তো একদিনের হয়নি, যতটুকু পাওয়া গেছে সেটা আন্দোলন করেই পাওয়া গেছে, ফারাক্কার ইস্যুটি দেশে-বিদেশে-ইউনাইটেড ন্যাশনসে তোলা হয়েছিলো।
এই সরকার এসব বিষয়ে (অভিন্ন নদী-তিস্তার পানির হিৎসা) জাতিসংঘে উত্থাপন করে নাই। আমরা অভিন্ন নদীর পানি পাচ্ছি না। এটাতে সমগ্র দেশের মানুষ বঞ্চিত হচ্ছে তাদের জীবন-জীবিকা থেকে, তাদের সব কিছু নির্ভর করে এসব নদীর উপরে। কোটি কোটি মানুষ এই পদ্মা-মেঘনা-যমুনা-তিস্তা এসব নদীর অববাহিকায় বাস করে। তাদের মাছ ধরা, পানি আনা সব কিছু নির্ভর করে এই নদীগুলোর ওপরে; সেখানে এসব নদীর হিৎসার ব্যাপারে কোনো কথাই নাই। দেখবেন এসব চুক্তিতে কোথাও এই হিৎসা নিয়ে একটা কথাও নাই। এটা থেকে বুঝা যায় আসলে এই সরকার দেশপ্রেমিক সরকার নয়, বাংলাদশ বিরোধী একটা সরকার।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, আমরা কোনো আন্দোলন থেকে সরে যাইনি। বিএনপি গত ১৫/১৬ বছরে যে আন্দোলন করেছে, এই আন্দোলনগুলোকে খাটো করে দেখার কোনো কারণ নেই। আমাদের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার আন্দোলনে কয়েক‘শ মানুষ প্রাণ দিয়েছে, এই আন্দোলনে ২২/২৩ জনকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেয়া হয়েছে, ২৭ হাজার লোককে দুইদিনে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এই ভয়াবহ সরকারের যে নিবর্তনমূলক, নির্যাতনমূলক দমননীতি এটার কারণেই হয়তবা সাফল্য আসেনি এখন পর্যন্ত। কিন্তু কোনো দিনই ন্যায়ের পথে আন্দোলন ব্যর্থ হয় না, আমাদের এটাতেও অবশ্যই সাফল্য আসবে।
আমরা কখনো ওই আন্দোলন থেকে সরে যাইনি। দেশনেত্রী খালেদা জিয়া হচ্ছেন গণতন্ত্রের প্রতীক। তাকে মুক্তি করার অর্থ প্রাথমিকভাবে গণতন্ত্র মুক্ত করার মতোই। আমরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন থেকে সরে যাইনি, দেশনেত্রীর মুক্তির আন্দোলন থেকে আমরা সরে যাইনি, এটা বাস্তবতা। সি ইজ সিম্বল অব ডেমোক্রেটিক মুভমেন্ট, দুই আন্দোলনকে আলাদা করে দেখা যাবে না।
মির্জা ফখরুল বলেন, আপনার চিকেন নেটটাকে বাদ দিয়ে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে করিডোর তৈরি করা এটাতে বাংলাদেশের লাভ কি? কোথায় বলতে পারেন? সম্পূর্ণ লাভ তার (ভারতের)। এটা ভারত বিরোধী নয়। আমাদের প্রশ্ন আমাদের স্বার্থে। দরকার কখনো বন্ধ হবে না, খোলা থাকবে। কানেকটিভি আমার স্বার্থে হতে হবে, আমার স্বার্থকে বিসর্জন দিয়ে হবে না। আমার নদীর পানির ন্যায্য হিসাকে বাদ দিয়ে কোনো চুক্তি হবে না।
সরকারের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, আপনি অভিন্ন নদীর পানির ব্যাপারে কোনো কিছুই করছেন না। সীমান্তে মানুষ হত্যা করছে, আপনি কিছুই বলছেন না। আপনি কি করেছেন ? চুক্তি করছে। এই চুক্তিতে এসব বিষয়ে একটা কথা আছে একটাও নাই।
আমার প্রশ্ন হচ্ছে যে, একজন দেশপ্রেমিক সে তার দেশের স্বার্থ আগে দেখতে হবে। উনি নিজেই বলেছেন যে, আমি সব কিছু আমি উজাড় করে দিয়ে দিয়েছি। উজাড় করে দিয়ে তো রেজাল্ট পেয়েছেন। এবারো উজাড় করে দিয়ে এসেছেন… আবার রেজাল্ট পাবেন।
মির্জা ফখরুল জানান, গত ২৪ জুনে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ভারতের সাথে সম্পাদিত চুক্তি ও সমঝোতার বিষয়গুলো বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।
তিনি বলেন, অভিন্ন নদীর পানির হিৎসা, সীমান্ত হত্যা, কানেকটিভিটির নামে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত পর্যন্ত রেল যোগাযোগ, ডাক ও টেলিযোগাযোগের সমঝোতা, কৌশলগত ও অপারেশনাল খাতে সামরিক শিক্ষা সহযোগিতা, ঔষধ সংক্রান্ত সমঝোতা, বাংলাদেশের জলসীমায় ভারতের অবাধ বিচরণ এবং ভারতের ইনস্পেস ও বাংলাদেশের ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের সমঝোতা, রেল মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমঝোতা, সমুদ্র বিষয়ক গবেষণায় দুই দেশের সমঝোতাগুলোতে দেশের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে। ভারতকে সকল প্রকার সুবিধা প্রদানের বিনিময়ে ভারতের কাছে বাংলাদেশের কোনো স্বার্থ আদায় করতে শেখ হাসিনা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছে। এটা ম্যান্ডেট বিহীন অবৈধ সরকারের নতজানু পররাষ্ট্র নীতির বর্হিপ্রকাশ।
এই সরকার পরিকল্পিতভাবে বাংলাদেশকে ভারতের উপর নির্ভরশীল করে ফেলেছে।