আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মাসকলাই চাষে সফল কৃষকরা
মো. আবদুস সালাম তালুকদার, গোমস্তাপুর (চাঁপাইনবাবগঞ্জ) থেকে
প্রকাশ: ১২ নভেম্বর ২০২৫, ০২:০৫ পিএম
ছবি : ভোরের কাগজ
চাঁপাইনবাবগঞ্জের গোমস্তাপুরে আম বাগানের গাছের ফাঁকে ফাঁকে সাথী ফসল হিসেবে মাসকলাই চাষ শুরু করেছেন স্থানীয় কৃষকরা। মাসকলাইয়ের বীজ ডাল হিসেবে প্রচলিত এবং ঐতিহ্যবাহী খাবার কলাইয়ের রুটি তৈরিতেও এটি ব্যবহৃত হয়। পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ এই ডাল সহজে হজমযোগ্য এবং এতে রয়েছে আমিষ, ক্যালসিয়াম, লৌহ, ভিটামিন বি-২, আঁশ ও অন্যান্য খনিজ পদার্থ।
মাসকলাই চাষে খুব বেশি খরচ বা পরিচর্যার প্রয়োজন পড়ে না। এজন্য আম বাগানের পাশাপাশি কৃষকরা এই ফসলের দিকে ঝুঁকেছেন এবং সাফল্যও পাচ্ছেন। উপজেলার জনপ্রিয় জাতগুলো হলো বারি মাস-১, বারি মাস-২, বিনা মাস-৪ ও বিনা মাস-৫। প্রতি বিঘা জমিতে খরচ মাত্র ২ হাজার টাকা এবং ৬০ থেকে ৬৫ দিনে ফসল ঘরে তোলা সম্ভব। প্রতি বিঘা জমিতে ৫–৬ মন পর্যন্ত উৎপাদন হয়, যা বাজারে ৩,৫০০–৪,০০০ টাকা প্রতি মন বিক্রি হয়।
আরো পড়ুন : রমনা থানার সামনে পুলিশের গাড়িতে আগুন
উপজেলার বিভিন্ন আম বাগান পরিদর্শন করে দেখা গেছে, গাছের ফাঁকে ফাঁকে মাসকলাই ফসল পরিপক্ক হচ্ছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চলতি মাসেই মাসকলাই উত্তোলন করা সম্ভব। পাশাপাশি পেয়ারা, মাল্টা, সরিষা, মিষ্টি কুমড়াসহ অন্যান্য সাথী ফসল চাষ করা হচ্ছে। এতে শুধু চাষিরাই লাভবান হচ্ছেন না, জমির মালিকরাও আগের তুলনায় দুই-তিন গুণ বেশি লীজ পেয়ে সন্তুষ্ট।
রহনপুর ইউনিয়নের কৃষক মো. বেলাল জানান, আমার ৭ বিঘা জমিতে আম বাগানের ফাঁকে মাসকলাই চাষ করেছি। এ ফসল না হলে জমি পতিত থাকতো। অল্প খরচে স্বল্প সময়ে আয় হচ্ছে, খুবই লাভজনক।
পারবর্তীপুর ইউনিয়নের চাষি মো. খাদেম আলী বলেন, ১৬ বিঘা জমিতে মাসকলাই চাষে মোট খরচ ৭০–৭৫ হাজার টাকা, উৎপাদিত মাসকলাই বাজারে আনুমানিক ৩ লাখ টাকার। এই আয়ের পরেই আবার সরিষা চাষ করবো। এতে আরো কৃষক সাথী ফসল চাষে উৎসাহিত হয়েছেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মো. সাকলাইন হোসেন জানান, উপজেলার ৩,৮৪০ হেক্টর জমিতে মাসকলাই আবাদ করা হয়েছে। চলতি অর্থ বছরে ১,০৫০ জন কৃষককে বিনামূল্যে বীজ ও সার বিতরণ করা হয়েছে। এই ফসলের উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ৩৭৬ মেট্রিক টন নির্ধারণ করা হয়েছে, আশা করা হচ্ছে ছাড়িয়ে যাবে এটি। তিনি আরো জানান, আম বাগানে সাথী ফসল হিসেবে মাসকলাই চাষ প্রযুক্তিটি ইতিমধ্যেই সফলভাবে প্রয়োগ হচ্ছে এবং এটি কৃষকদের বাড়তি আয়ের উৎস হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
