তিস্তার ভাঙনে সেতু রক্ষা বাঁধে ধস, ঝুঁকিতে হাজারো পরিবার

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৪ আগস্ট ২০২৫, ০৮:১৯ এএম

ছবি : সংগৃহীত
রংপুরের গঙ্গাচড়ার মহিপুরে তিস্তা নদীর ওপর নির্মিত দ্বিতীয় সড়ক সেতুর পশ্চিম তীরে সেতু রক্ষা বাঁধের বড় অংশ ধসে পড়েছে। এতে প্রায় ৭০ ফুট গভীর গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। কয়েকদিন ধরে পানি বৃদ্ধি ও তীব্র স্রোতের ধাক্কায় লালমনিরহাট–রংপুর সড়ক এবং পার্শ্ববর্তী এক হাজারের বেশি পরিবার এখন ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে।
দেখা গেছে, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির পানিতে তিস্তার জলধারা দ্রুত বেড়ে গিয়ে সেতুর পশ্চিম পাশের প্রায় ৯০০ মিটার দীর্ঘ রক্ষা বাঁধে তীব্র স্রোতের আঘাত লাগছে। নিচের মাটি ধুয়ে গিয়ে ব্লকগুলো ধসে পড়ছে এবং অবশিষ্ট অংশও ধীরে ধীরে নেমে যাচ্ছে। দ্রুত পদক্ষেপ না নিলে পুরো বাঁধ ভেঙে গিয়ে সেতু ও যোগাযোগ ব্যবস্থা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে বলে জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
২০১৮ সালে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ (এলজিইডি) প্রায় ১২১ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতুটি নির্মাণ করে, যা রংপুর ও লালমনিরহাট জেলার মধ্যে যোগাযোগ সহজ করেছে। কিন্তু বর্তমান ভাঙন নিয়ন্ত্রণে না আনতে পারলে সেতুটি ও সংলগ্ন সড়ক বড় বিপদে পড়বে।
আরো পড়ুন : বঙ্গোপসাগরে লঘুচাপ, বাড়বে বৃষ্টি
তিস্তা নদীর পানি বিপৎসীমা অতিক্রম করায় রংপুরের গঙ্গাচড়া, কাউনিয়া ও পীরগাছা উপজেলার তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল, চর ও দ্বীপ চরগুলো ইতোমধ্যে প্লাবিত হয়েছে। গঙ্গাচড়ার নোহালী, আলমবিদিতর, কোলকোন্দ, লক্ষ্মীটারী, গজঘন্টা ও মর্ণেয়া ইউনিয়ন, কাউনিয়ার বালাপাড়া ও টেপামধুপুর, এবং পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়নের অনেক ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে। বন্যার আশঙ্কায় অনেকেই উঁচু স্থানে বা আত্মীয়ের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছেন।
গঙ্গাচড়ার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মাহমুদ হাসান মৃধা বলেন, বন্যায় প্লাবিত পরিবারগুলোর সহায়তায় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্যদিকে, পীরগাছার ছাওলা ইউনিয়নের শিবদেবসহ আশপাশের এলাকায় সাম্প্রতিক ভাঙনে শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। শুধু শিবদেবে কমপক্ষে ৫০টি বসতবাড়ি, একটি ইবতেদায়ি মাদ্রাসা ও একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় হারিয়ে গেছে।
মঙ্গলবার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত ৩০ পরিবারকে এক বান্ডিল ঢেউটিন ও নগদ ৩ হাজার টাকা করে দিয়েছে। তবে ক্ষতিগ্রস্তদের দাবি, সাময়িক সহায়তার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি বাঁধ রক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে, নইলে প্রতিবছর একইভাবে ক্ষতির মুখে পড়তে হবে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, বুধ ও বৃহস্পতিবার রংপুর অঞ্চলের তিস্তা, ধরলা ও দুধকুমার নদী সংলগ্ন এলাকায় বন্যার ঝুঁকি রয়েছে। পাশাপাশি ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও পদ্মা অববাহিকার নদীগুলো সতর্ক সীমায় প্রবাহিত হতে পারে এবং পদ্মা তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল সাময়িকভাবে প্লাবিত হতে পারে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার পঞ্চগড়ে ২০০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। একই সঙ্গে উজানে ভারতের আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টি হয়েছে, যা তিস্তার পানি বৃদ্ধিতে বড় ভূমিকা রাখছে। বুধবারও সারাদিন রংপুর বিভাগ ও তিস্তার উজানে বৃষ্টিপাত অব্যাহত ছিল।