ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে বিপর্যস্ত কুড়িগ্রামের জনজীবন
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ১০:২০ এএম
ছবি : সংগৃহীত
উত্তরের জেলা কুড়িগ্রামে ঘন কুয়াশা ও তীব্র শীতে জনজীবন চরমভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন খেটে খাওয়া মানুষ। দিনের বেলাতেও হেডলাইট জ্বালিয়ে চলাচল করছে যানবাহন। ঠান্ডা নিবারণে অনেকেই খড়কুটো জ্বালিয়ে আগুন পোহাচ্ছেন।
শীতজনিত রোগে শিশু ও বয়স্কদের আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি বিপাকে পড়েছেন গবাদিপশু পালনকারীরাও।
শনিবার (২৭ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় কুড়িগ্রাম জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
ভোর থেকেই ঘন কুয়াশা ও হিমেল বাতাসে মানুষ কাজে বের হতে পারছেন না। দিনমজুর, নৌকার মাঝি, কৃষিশ্রমিক, রিকশা ও ভ্যানচালকদের আয় প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে। কাজ না থাকায় অনেক পরিবার মানবেতর জীবনযাপন করছে।
কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র জানান, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় জেলায় ১১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়।
রৌমারী উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের কৃষক আব্দুল মালেক বলেন, ভোরে কাজে বের হইলে হাত-পা সিষ্টি লাগি আসে। কাজ নাই, আয় নাই, কিন্তু সংসার তো চালাইতে হইবো। এখন খুব বিপদে পড়ছি।
চিলমারী উপজেলার নৌবন্দর এলাকার নৌকার মাঝি মো. কাশেম মিয়া বলেন, নদীতে কুয়াশা এত বেশি যে নৌকা চালানো ঝুঁকিপূর্ণ। তিন দিন ধইরা কোনো কাজ নাই।
স্থানীয়দের অভিযোগ, শীত বাড়লেও চরাঞ্চলে এখনো পর্যাপ্ত শীতবস্ত্র পৌঁছেনি। অনেক এলাকায় সরকারি ও বেসরকারি সহায়তা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম।
কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার যাত্রাপুর ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি প্যানেল চেয়ারম্যান রহিম উদ্দিন হায়দার রিপন বলেন, শহরে শীত কিছুটা সহনীয় হলেও চরাঞ্চলের অবস্থা ভয়াবহ। এখানকার মানুষ দিন এনে দিন খায়। কাজ বন্ধ মানেই না খেয়ে থাকা।
কুড়িগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. স্বপন কুমার বিশ্বাস জানান, শীতের কারণে শিশু ও বয়স্কদের নিউমোনিয়া, সর্দি-কাশি ও শ্বাসকষ্টের ঝুঁকি বেড়েছে। শীতজনিত রোগ প্রতিরোধে গরম কাপড় ব্যবহার ও প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দেন তিনি।
শীতের এই প্রকোপে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন কুড়িগ্রামের চরাঞ্চলের খেটে খাওয়া মানুষ—যাদের প্রতিদিনের জীবনই সংগ্রামে ভরা, আর এই শীতে সেই সংগ্রাম আরও কঠিন হয়ে উঠেছে।
এদিকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, জেলার নয়টি উপজেলায় শীতার্ত মানুষের মাঝে ৫৪ লাখ টাকার ২২ হাজার কম্বল বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
