×

ক্যাম্পাস

উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান

ট্যাগিংয়ের রাজনীতি ছাড়তে না পারলে শুধু দল নয়, দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে

Icon

জাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:০৫ পিএম

ট্যাগিংয়ের রাজনীতি ছাড়তে না পারলে শুধু দল নয়, দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে

মোহাম্মদ কামরুল আহসান

দীর্ঘ ৩৩ বছর পরে অনুষ্ঠিত হলো জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় শিক্ষার্থী সংসদ (জাকসু)। নানা নাটকীয়তার মাধ্যমে সম্পন্ন এই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন অভিযোগ উঠলেও সেগুলোকে মীমাংসিত বলে মন্তব্য করেছে কমিশন। আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে খণ্ডিত এতো অভিযোগগুলোর কোন ভিত্তি নেই বলে জানায় তারা। গত ১১ সেপ্টেম্বর জাকসু নির্বাচন সম্পন্ন হলেও এর ফলাফল এসেছে নাটকীয়ভাবে ৪৮ ঘণ্টা পর। এরপরেও যেহেতু নির্বাচন বিধি ৮এর (জ) ধারা অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশের ৩ দিনের মধ্যে যদি কোন অভিযোগ আসলে ১৪ দিনের মধ্যে ফয়সালা করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তখন প্রমাণিত হবে যে অভিযোগগুলো এসেছে তা যথাযথ নাকি বানোয়াট। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান এর সঙ্গে কথা বলেছেন ভোরের কাগজের জাহাঙ্গীরনগর প্রতিনিধি তানভীর ইবনে মোবারক।

ভোরের কাগজ: জাকসু নির্বাচনের পূর্বে আশঙ্কা ছিল যে নির্বাচন আদৌ হবে কি না। নির্বাচনী কার্যক্রমে কমিশনের শত অব্যবস্থাপনা সত্ত্বেও অবশেষে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হলো এ নিয়ে মিশ্র অনুভূতি কি?

কামরুল আহসান: জাকসু নির্বাচন হলো আমাদের ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে অন্যতম যে গণ-আকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে সেটা হলো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে পুনরুদ্ধার করা। জাতীয় নির্বাচনের আগে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো নির্বাচনের মাধ্যমে এই গণ-আকাঙ্ক্ষার শুরু হলো- ডাকসুর পড়ে জাকসুর হলো। জাকসু নিয়ে যে আশঙ্কার কথা বলা হয়েছিলো। আমি মনে করি গণঅভ্যুত্থানে অংশগ্রহণকারী সকল দলের মধ্যে জাকসুর দাবি নিয়ে জোটবদ্ধ ছিল। ফলে শিক্ষার্থীদের এই দাবির বিপরীতে অন্য কোনো আশঙ্কাকে আমি আশঙ্কা মনে করি না। এ অব্যবস্থাপনার বিষয়ে নির্বাচন কমিশন থেকে আমি অবগত হয়েছি, নির্বাচন কমিশনে যে অভিযোগগুলো নির্বাচনের দিন এসেছে, নির্বাচন কমিশন গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ব্যাখ্যা দিয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারদের পত্র দিয়ে জানিয়ে জবাব নিয়েছে। আইনি পরামর্শ নিয়ে তারা কার্যক্রম পরিচালনা করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে লিগ্যাল এডভাইজার এর মতামত নিয়ে ভোট গ্রহণ ও গণনা চলমান থাকার পরামর্শ দেন। যে প্রশ্ন উঠেছে সেটার ব্যাখ্যা নির্বাচন কমিশন আইনীভাবে দিয়েছেন।

ভোরের কাগজ: নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পরে ফলাফল ঘোষণার আগে দুইদিনে পরপর দু’জন নির্বাচন কমিশনের সদস্যের পদত্যাগকে কীভাবে দেখছেন?

কামরুল আহসান: বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য হিসেবে আমি মনে করি, নির্বাচন কমিশন ৫ সদস্য নিয়ে গঠিত। দুইজন পদত্যাগ করলেও কমিশন জানিয়েছে সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত নিয়ে তারা গঠনতন্ত্র এবং বিধি অনুযায়ী যেভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা প্রয়োজন তারা সেভাবেই নিয়েছেন। ফলে দুইজন সদস্য পদত্যাগ করলেও নির্বাচনীর ভোট গণনায় এবং ফলাফল প্রকাশ করায় কোন ব্যত্যয় ঘটায়নি। নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ হতে না দিয়ে নির্বাচনকে সফল করতে অভিযোগগুলো নিয়ে কাজ করলে বিষয়টি অনেক বেশি সুন্দর হতো। আমরা মিডিয়ায় দেখেছি। যারা সমস্যার সমাধান করবেন তারা সমস্যাগুলোকে অভিযোগ হিসেবে উত্থাপন করেছেন যা প্রত্যাশা বহির্ভূত। গণঅভ্যুত্থানে পর একটি নির্বাচনকে আন্তরিকতার সাথে এই অতিরিক্ত দায়িত্বটুক পালন করাটাই ছিল প্রত্যাশা।

তবে গঠনতন্ত্রের ৮-এর (জ) ধারা অনুযায়ী-‘নির্বাচন বিষয়ক অভিযোগ ও নিষ্পত্তিকরণ: নির্বাচন সম্পর্কে যেকোনো অভিযোগ ফলাফল প্রকাশের তিন (৩) দিনের মধ্যে সভাপতির কাছে পেশ করা যাবে এবং সংসদ সভাপতি আপিল কমিটির (ডিন, প্রক্টর, প্রভোস্ট সমন্বয়ে গঠিত) মাধ্যমে এ বিষয়ে চেদ্দি (১৪) দিনের মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করবেন।’ যে অভিযোগগুলো এসেছে সেগুলো গঠনতন্ত্রের ধারা অনুযায়ী আইনসম্মতভাবে, গ্রহণযোগ্য পদ্ধতিতে এপ্রোচ করা হয়েছে।

ভোরের কাগজ:  বিক্ষিপ্ত কয়েকটি ঘটনা ব্যাতিত প্রত্যেকটা হলে সুষ্ঠু নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে। এরপরেও নির্বাচনে কারচুপির যে অভিযোগ আনা হয়, সেটিকে কোন স্বার্থান্বেষী মহলের কাজ বলবো না কেন?

কামরুল আহসান: যারা অভিযোগ করেছেন তারা সবচেয়ে ভালো উত্তর দিতে পারবেন। তবে নির্বাচন কমিশন এই অভিযোগগুলোকে আমলে এনে আইনি পরামর্শ নিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তাতে প্রতীয়মান হয় এই অভিযোগগুলো ভোট গণনা, ফলাফল ঘোষণার ক্ষেত্রে কোন অন্তরায় নয়। এটি সার্থান্বেষী মহলের কাজ কি না সেবিষয়ে মন্তব্য করা দূরহ। তবে নির্বাচন কমিশন যে পদ্ধতি অনুসরণ করে সিদ্ধান্ত নেয়ার কথা সেখানে যেহেতু আইনি কোন ব্যত্যয় ঘটেনি স্বাভাবিকভাবেই প্রতিয়মান হয় এ ধরণের অভিযোগগুলো ভিন্ন উদ্দেশ্যে হতে পারে। তবে সেটি নির্ভর করছে যারা অভিযোগ করেছে তাদের ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের উপরে। ফলে অন্য পক্ষের বিস্তারিত না শুনে মন্তব্য করা সমীচীন মনে করছি না। যেহেতু ৮-এর-জ ধারা অনুযায়ী আপিল কমিটির মাধ্যমে ফয়সাল করার বাধ্য-বাধ্যবাধকতা আছে, ফলে এ -ধরনের আইনি বিষয় নিয়ে মন্তব্য পরিহার করাই শেয় বলে আমি মনে করি।

ভোরের কাগজ: নির্বাচনে সৈয়দা অনন্যা ফারিহা ছাত্রদলের সদস্য হওয়া সত্ত্বেও প্রথমে প্যানেলে পদ না পেয়ে স্বতন্ত্র দাঁড়ায় কিন্তু আকস্মিকভাবে নির্বাচনের একদিন পূর্বে তিনি প্রার্থীতা থেকে সড়ে দাঁড়ান, এর পেছনে আপনার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে একটি গণমাধ্যমে ভিডিও চিত্র দেখা যায়। এই বিষয়ে আপনার বক্তব্য কি?

কামরুল আহসান: জাকসুর সভাপতি হিসেবে ব্যক্তিগতভাবে জাকসুর যেকোনো প্রার্থীর অভিযোগ-অনুযোগ জানানোর এখতিয়ার রয়েছে। তিনি নানা ধরনের সংকটের মধ্যে যাওয়ার কারণে সভাপতি হিসেবে তার উদ্বেগের কথাটি তিনি আমাকে অবহিত করার চেষ্টা করেছেন। আমি একটি তদন্ত কমিটির সভা শেষে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হই, তখন আমার সঙ্গে সাক্ষাতের অভিমত প্রকাশ করেন। সংকটটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হওয়ার কারণে আমি পথেই গাড়ি থেকে নেমে তার সাথে সাক্ষাৎ করি। কারণ এটা আমার দায়িত্বের অংশ বলেই মনে করি। যেটা ভিডিও চিত্রে দেখা গেছে তা পুরোটাই সত্য এবং এই সত্যের পেছনে যা ব্যাখা তা আপনাকে জানালাম।

ভোরের কাগজ: আমরা দেখেছি, জাকসুতে ভোট গণনা ম্যাশিনের মাধ্যমে করার কথা থাকলেও কারচুপির অভিযোগ এনে হাতে গণনা করা হয়। অভিযোগ ছিল ওএমআর মেশিনটি জামাতের ব্যবসায়ী থেকে কেনা হয়েছ। মেশিন আসলে কবে থেকে দলের হয়ে কাজ করা শুরু করলো?

কামরুল আহসান: এই বিষয়টি সম্পূর্ণ নির্বাচন কমিশনের ইখতিয়ার। তবে তাদের এবং বিভিন্ন গণমাধ্যম থেকে যেটি অবহিত হই, তিনি একটি বিশেষ রাজনৈতিক দলের বিশেষ সমর্থক। তবে এজন্যই তাকে সুবিধা দেয়া হয়েছে নাকি যারা প্রতিযোগিতার অংশগ্রহণ করেছিলেন তার মধ্যে তিনি বেটার অপশন ছিলেন, সেটি ৫ সদস্যের কাছে জানা সম্ভব। গণমাধ্যমে দেখা গেছে তার রাজনৈতিক পরিচয় সঠিকভাবে জানা যায়নি। দ্বিতীয়ত, একটি মেশিনের দক্ষতার সাথে কোন রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কোন সম্পর্ক আছে কিনা এটি গুরুত্বপূর্ণ বিবেচ্য বিষয়। আমি যেটা নির্বাচন কমিশন থেকে অবগত হয়েছি, তখন নির্বাচন চলাকালীন সময়ে শত ব্যস্ততার মাঝে যে বিতর্কটি তৈরি হয়েছে সেটি নির্বাচনে গ্রহণ করার প্রক্রিয়াকে ব্যাপকভাবে বাধাগ্রস্ত করছিল। কমিশন অবগত করেছে তাদের পক্ষে এই প্রক্রিয়াটি নতুন করে পদ্ধতিগতভাবে প্রক্যিউরমেন্ট প্রসেস ফলো করে যদি করতে হয়, তাহলে নির্বাচন অনুষ্ঠান অথবা ভোট গণনা কোনটা ই সম্ভব হতো না। ফলে বৃহত্তর অঙ্গিকার বাস্তবায়নের জন্যই হাতে ভোট গণনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে এবং এই হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে হাতে গণনা করতে হয়েছে। এবং আমি একই সঙ্গে সকল গণমাধ্যম কর্মী, আইন শৃঙ্খলা বাহিনী এবং গোটা বাংলাদেশের যারা এই নির্বাচন অবলোকন করেছেন তাদেরকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি এবং যে কষ্ট হয়েছে সেজন্য দুঃখ প্রকাশ করছি।

ভোরের কাগজ: আপনি বলেছিলেন জাকসু নির্বাচনে ক্যাম্পাসে লাশ পড়বে, কিন্তু আমরা শিক্ষার্থীদের মধ্যে সহনশীলতা দেখেছি। তবে আমরা একজন শিক্ষককে হারিয়েছি। আপনার বলা বাক্য কি সত্য হয়ে গেল?

কামরুল আহসান: আমি লাশ পড়ার বিষয়ে তখনি বলেছি, যখন দেখেছি বৈচিত্র্যের নামে বিভাজন হচ্ছিল। ২৪-এর গণ অভ্যুত্থানে আমরা একটি অসাধ্য সাধন করেছি। নিজেদের মধ্যে অত্যন্ত গৌণ বিষয় নিয়ে মতভিন্নতা তৈরি বারে পরাজিত শক্তিকে ফিরিয়ে আমার অপচেষ্টা চলছিল। সেজন্য সাবধান করেছিলাম, আপনারা যদি বৈচিত্র্যের নামে বিভাজনে লিপ্ত হোন, তাহলে নির্বাচনের মতো গণআকাঙ্খা বাস্তবায়িত হবে না। বরং সুযোগ-সন্ধানী কোন পক্ষ এ ধরনের কর্মসংঘটন করে অভ্যুত্থানের পক্ষের শক্তিকে বিতর্কিত করবে। লাশ পড়ার বক্তব্যের পেছনে এটি ছিল মূল কারণ।  

ভোরের কাগজ: ভোট কারচুপির অভিযোগ আনা হয়েছে বিভিন্ন মহল থেকে। এটা বাস্তবিকভাবে সম্ভব কি না? জাকসুতে আদৌ এই ঘটনা ঘটেছে কি না?

কামরুল আহসান: ৩৩ বছরে পরে অনুষ্ঠিত এই জাকসুতে কিছু ভুল-ত্রুটি হয়েছে। কিন্তু ভোট গ্রহণ, গণনা এবং ফলাফল প্রকাশে কোন অনিয়ম হয়েছে বলে নির্বাচন কমিশন অবহিত করেননি। বরং তারা আইনি পরামর্শ নিয়ে বিষয়টিকে সুরাহা করার জন্য নির্বাচন কমিশনকে যথাসময়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে, ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ফলে কারচুপির অভিযোগ নির্বাচন কমিশনের বক্তব্যের সঙ্গে পরস্পর বিরোধী। তবে যেহেতু নিবার্চন বিধি ৮এর (জ) ধারা অনুযায়ী ফলাফল প্রকাশের ৩ দিনের মধ্যে যদি কোন অভিযোগ আসলে ১৪ দিনের মধ্যে ফয়সালা করার যে বাধ্যবাধকতা রয়েছে সেটির বিষয়ে অঙ্গিকারবদ্ধ। তখন আসলে প্রমাণিত হবে যে অভিযোগগুলো এসেছে তা যথাযথ নাকি বানোয়াট।

ভোরের কাগজ: জাকসুতে ছাত্রদলের করা নানা অভিযোগের সঙ্গে জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞপ্তি দেয়াটা কিভাবে দেখছেন? যা আবার আপনার পূর্বের সংগঠন ছিল।

কামরুল আহসান: অভিযোগ যা এসেছে এবং এর জবাবে নির্বাচন কমিশনের যে সমাধানের চেষ্টা উভয়কেই আমি স্বাগত জানাই। কিন্তু জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের পক্ষ থেকে যে বিজ্ঞপ্তি দেয়া হয়েছিল সে বিষয়ে তাদের বক্তব্য রয়েছে। তবে আমি যেহেতু এই আদর্শের সঙ্গে ছিলাম সেক্ষেত্রে এই আদর্শ আমাকে আমার দায়িত্ব পালন করার ক্ষেত্রে অনেক বেশি সচেতন করেছে যেন এই নির্বাচন নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হয়। উপাচার্য হিসেবে নির্বাচন কমিশনে হস্তক্ষেপ করা আমার পক্ষে সমীচীন নয় এবং তা আমি করিনি।

ভোরের কাগজ: আপনাকে ক্যাম্পাসে জামায়াতের ভিসি নামে আখ্যায়িত করা হয়। অথচ ভিসি হওয়ার পূর্বে আপনি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের আহবায়ক ছিলেন। এই নিয়ে কিছু বলতে চান?

কামরুল আহসান: উপাচার্য হওয়ার আগে আমি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরামের সভাপতি দিলাম। দীর্ঘ ১৭ বছর ধরে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য বিভিন্ন মিডিয়ায়, সংগ্রামে আন্দোলনরত অবস্থায় আমাকে দেখেছেন। আমার একমাত্র লক্ষ্য হচ্ছে পেশাজীবিতার জায়গা থেকে গণতন্ত্র পুনুরুদ্ধারে সহায়তা করা। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে গত বছর ১৫ জুলাই থেকে  অগাস্টের ৫ তারিখ পর্যন্ত বক্তব্য রাখার মতো মানুষ কম ছিলো। তখনও আমি আমার ছোট্ট  একটা গাড়ি নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর থেকে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত হাসিনার স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে গিয়েছে। দেশের গুণগত পরিবর্তন করা যা গণতন্ত্র চর্চার মাধ্যমে  সম্ভব। আমি গণতন্ত্র চর্চার পাশাপাশি সত্যতা ন্যায্যতা এবং  নীতি-নৈতিকতা তাই আদর্শকে সমানভাবে গুরুত্ব দিই। দেখুন, বেনজির ও মতিউর অনেক মেধাবী ছিলেন। কিন্তু তাদের আজ যে পরিচয় সে পরিচয়ের বিপরীতে দেখা যায় সে যে ভবনের, যে বিভাগের প্রধান দিলেন সে ভবনের নৈশপ্রহরীর জীবনের চেয়েও তাদের জীবন কলঙ্কিত। তাহলে মেধাই সবকিছু নয়। সততা, নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালনই মানুষের জীবনের সবচেয়ে বড় অঙ্গিকার হওয়া উচিত বলে মনে করি।

উপাচার্য হিসেবে কোন রাজনৈতিক পরিচয় আমার কাছে বড় নয়। আমি জাতীয়তাবাদী আদর্শের তবে এর সঙ্গে পক্ষপাতমুক্ত নিরপেক্ষ আচরণ করার কোন পরস্পর বিরোধী অবস্থান আমি দেখি না। এই আদর্শই আমাকে নিরপেক্ষভাবে শিরদাড়া সোজা করে, শক্ত করে দাড়াতে সহায়তা করেছে। এই নিয়ম পালন করার জন্য যদি ট্যাগিং করা হয় তাহলে ক্ষতি হবে। এর কারণ আমরা প্রতিপক্ষকে প্রতিহিংসার নয় বরং ইতিবাচক প্রতিযোগিতার মাধ্যমে হারাতে চাই। অন্যকে ব্লেইম দেয়ায় চাইতে নিজের গুণগত পরিবর্তন করা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আমি মনে করি আমার এই দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে আমার আদর্শের বিজয় হয়েছে। আমার এই দায়িত্ব পালন জামায়াতি ভিসি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত নয় বরং জাতীয়তাবাদী আদর্শে বিশ্বাসী শিঁরদাড়া শক্ত একজন আছে যার উপর সবাই আস্থা রাখতে পারে সেটা মানুষের কাছে প্রমাণিত হয়েছে। এখনো সময় আছে এই অভিযোগ-অনুযোগ ট্যাগের রাজনীতি ছেড়ে দিয়ে প্রত্যেকের গুনগত পরিবর্তন করে যে গণআকাঙ্ক্ষা তৈরি হয়েছে সে অনুযায়ী সামনে এগিয়ে যাওয়া তা না হলে শুধু দল নয় বরং দেশও ক্ষতিগ্রস্থ হবে। মূল অঙ্গিকার এর জায়গায় বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বার্থে কেউ কাজ করলে আমি এর বিরুদ্ধে আবারও দাঁড়াবো। সেদিন হয়তো আমাকে অন্যদলের হিসেবে ট্যাগ দেয়া হবে, কিন্তু প্রতিবারই আমার সংগ্রাম চলবে নীতি প্রতিষ্ঠায়, দায়িত্ব-পালনের অঙ্গীকার আস্তবায়নে।

ভোরের কাগজ: ১৫ জুলাই রাতে ছাত্রলীগের হামলার বিচার হয়েছে কিন্তু মদদদাতা শিক্ষকদের বিচারকার্য এখনো সম্পন্ন হয়নি, যা জাকসুর পূর্বেই করার কথা ছিল। সে বিচার কি আদতে হবে?

কামরুল আহসান: শিক্ষক যারা মদদদাতা হিসেবে ছিল তাদের বিচার চলমান। ‘justice hurried, justice burried’। আমরা বিচারকার্যে কারও উপর জুলুম করতে চাই না। আবার কোন অপরাধী যেন শাস্তি থেকে রেহাই না পায়। এজন্য একে কোন সময়ের ফ্রেমে বেধে সেটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চাই না। আশা করি বিষয়টি সকল অংশীজন বিষয়টি উপলব্ধি করবেন।

ভোরের কাগজ: জাকসুর নবনির্বাচিত  প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে কি বার্তা দিবেন?

কামরুল আহসান: জাকসু থেকে ৫ জন প্রতিনিধি সিনেটে প্রতিনিধিত্ব করবেন। এক্ষেত্রে তারা বিভিন্ন দাবি-দাওয়া নিয়ে আন্দোলন করে যে সময় ব্যয় করতেন সেখানে তারা এখন আইন প্রণয়নকারী বডির অংশ হয়ে গেলেন। এতে করে যেকোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় তাদের উপস্থিত থাকা কাজে দিবে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন যা শিক্ষার্থীদের জন্য ইতিবাচক।

ভোরের কাগজ: আমাদের মাঝে যে শিক্ষিকা চলে গেলেন উনার জন্য কি করবেন?

কামরুল আহসান: অত্যন্ত অনাকাঙ্খিতভাবে আমাদের একজন সহকর্মী মারা গিয়েছেন। তিনি নির্বাচনের দিন কাজ করেছেন। পরে তিনি বাসায় গিয়ে রাত্রিযাপন করেন। পরের দিন তিনি ভোট গণনা করতে আসার সময় সিটি ভবনে প্রবেশ করার আগেই হঠাৎ করে হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন। হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তিনি ভোট গণনা করতে গিয়ে তার প্রাণ যায়নি এটি সত্য ঘটনা, কিন্তু তিনি অঙ্গিকারজ্ঞাবদ্ধ ছিলেন। তাই আমি চাই গণঅভ্যুত্থানে যে দুই হাজার শহীদ হয়েছেন তাদের সাথে তার নামটি যুক্ত করতে চাই। জাহাঙ্গীরনগর এবং তার গোটা জাতির পক্ষ থেকে তার এই শহীদি মর্যাদা আমাদের স্বীকার করা উচিত। কারণ এই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের চেষ্টাটা মুলত্র ২৪-এর গণ-অভ্যুত্থানের গন-আকাঙক্ষা সেটিরই বাস্তবায়ন। আর তিনি বাস্তবায়নকালীন একজন শহীদ। আমি তার শহীদি আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উচিত দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া : রাশেদ খান

স্বাস্থ্য উপদেষ্টার উচিত দায়িত্ব থেকে সরে যাওয়া : রাশেদ খান

ট্যাগিংয়ের রাজনীতি ছাড়তে না পারলে শুধু দল নয়, দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে

উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান ট্যাগিংয়ের রাজনীতি ছাড়তে না পারলে শুধু দল নয়, দেশও ক্ষতিগ্রস্ত হবে

সংগীতশিল্পী দীপ আর নেই

সংগীতশিল্পী দীপ আর নেই

সার্বিক মূল্যস্ফীতি মোটামুটি স্থিতিশীল : অর্থ উপদেষ্টা

সার্বিক মূল্যস্ফীতি মোটামুটি স্থিতিশীল : অর্থ উপদেষ্টা

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App