আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল
র্যাবের একসময়ের দাপুটে যেসব কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ০৮ অক্টোবর ২০২৫, ০৭:৫০ পিএম

র্যাবের একসময়ের দাপুটে যেসব কর্মকর্তাদের গ্রেপ্তারের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদের একজন লে. কর্ণেল সাইফুল ইসলাম
আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে র্যাবের যেসব কর্মকর্তা মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িত ছিলো তাদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই তালিকায় র্যাব কর্মরত ছিলেন সাবেক এমন ১৪ কর্মকর্তার নাম রয়েছে।
যাদের মধ্যে র্যাবের সাবেক তিনজন মহাপরিচালক (ডিজি) এবং সেনাবাহিনীর ১১ জন কর্মকর্তা রয়েছেন। যাদের মধ্যে একজন বাদে সবাই সেনাবাহিনীতে কর্মরত আছেন।
বুধবার বিচারপতি গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এই গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। সেই সঙ্গে আসামিদের গ্রেপ্তার করে হাজির করতে আগামী ২২ অক্টোবর দিন ধার্য করা হয়েছে। এদিন গুমের মাধ্যমে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের পৃথক আরেক মামলার অভিযোগ আমলে নেয় আদালত। একই দিন আদালত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধী মতাবলম্বীদের গুম করে র্যাবের টাস্কফোর্স ইন্টারোগেশনের (টিএফআই) গোপন সেলে বন্দি রেখে নির্যাতন করা হতো। এই ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে প্রধান আসামি করে ১৭ জনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেওয়া হয়। এরপরেই আসামিদের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হলো।
এই তালিকায় রয়েছে— শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী (অব.), সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নাম।
র্যাবের সাবেক যেসব কর্মকর্তা আসামি
টিএফআই গোপন সেলে বন্দি রেখে নির্যাতনের ঘটনা মামলায় গ্রেপ্তার করতে বলা হয়েছে— র্যাবের সাবেক ডিজি ও সাবেক পুলিশপ্রধান বেনজীর আহমেদ, সাবেক ডিজি এম খুরশীদ হোসেন, ব্যারিস্টার হারুন অর রশিদকে।
এছাড়াও সেনাবাহিনী থেকে প্রেষণে র্যাবে চাকরি করা সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি অপস) আনোয়ার লতিফ খান, জাহাঙ্গীর আলম, তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, কে এম আজাদ, কামরুল হাসান, মাহাবুব আলম, আব্দুল্লাহ আল মোমেন, সাবেক গোয়েন্দা প্রধান সারওয়ার বিন কাশেম, খায়রুল ইসলাম, মশিউর রহমান জুয়েল এবং সাইফুল ইসলাম সুমন—এদের বিরুদ্ধেও পরোয়ানা জারি হয়েছে। এরমধ্যে খায়রুল ইসলাম চাকরি থেকে অব্যাহতি নিয়ে বর্তমানে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন।
অন্যদিকে জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে (জেআইসি) গুম ও নির্যাতনের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়েছে। যাদের মধ্যে সেনাবাহিনীর সাবেক ও বর্তমান ১২ জনের নাম রয়েছে। তারা হলেন— শেখ হাসিনার প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল তারিক আহমেদ সিদ্দিকী (অব.), ডিজিএফআইয়ের সাবেক মহাপরিচালক (ডিজি) লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আকবর হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) সাইফুল আবেদিন, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) সাইফুল আলম, লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) আহমেদ তাবরেজ শামস চৌধুরী, মেজর জেনারেল (অব.) হামিদুল হক, মেজর জেনারেল (অব.) মোহাম্মদ তৌহিদুল উল ইসলাম, বর্তমান চা বোর্ডের চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, শেখ হাসিনার সাবেক সামরিক সচিব ও রাষ্ট্রদূত মেজর জেনারেল কবীর আহম্মেদ, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী, ডিজিএফআইয়ের সাবেক পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাহাজার সিদ্দিকী এবং সাবেক ডিজিএফআই কর্মকর্তা লে. কর্নেল মখছুরুল হক (অব.)।
গত বছর জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন দমনে আওয়ামী লীগ সরকার, তাদের দলীয় ক্যাডার এবং তৎকালীন সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে ট্রাইব্যুনালে। বর্তমানে দুটি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এসব অপরাধের বিচার কাজ চলছে।
শেখ হাসিনাসহ ৩০ আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, ‘জনগণের বেতনে ইউনিফর্ম পরে যারা গুমের অপরাধের সঙ্গে জড়িত ও অভিযুক্ত বিভিন্ন বাহিনীতে সম্পৃক্ত থাকলেও কর্মকর্তাদের অপরাধে দায় ব্যক্তি নিজের, এর দ্বায় কোনো বাহিনীর বা প্রতিষ্ঠানের নয়।’
তাজুল ইসলাম বলেন, ‘গুমের ঘটনায় উঠে এসেছে কীভাবে র্যাব ও ডিজিএফআইকে ব্যবহার করে ভিন্নমতের লোকজনকে গোপন কক্ষে বন্দি রেখে ভয়াবহ নির্যাতন চালানো হয়েছে বছরের পর বছর। ডিজিএফআই পরিচালিত জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেলে বন্দি থাকা আব্দুল্লাহিল আল আযমি, মারুফ জামান, মাইকেল চাকমাসহ কয়েকজনের গুমের আসামি ডিজিএফআইয়ের সাবেক বেশ কয়েকজন মহাপরিচালকসহ ১৩ জন। তাদের কয়েকজন এখনও কর্মরত। আবার অনেকেই পালিয়েছেন। তবে প্রধান আসামি শেখ হাসিনা।’
তিনি বলেন, এ ছাড়া র্যাবের গোপন কক্ষ টিএফআই সেলে বন্দি থাকা ব্যারিস্টার আরমান, আইনজীবী সোহেল রানাসহ বিশের অধিক গুমের তদন্তও শেষ হয়েছে। এই মামলায় আসামি শেখ হাসিনা, আসাদুজ্জামান খান, তারেক সিদ্দিকী, সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদ ও র্যাবের সাবেক কর্মকর্তাসহ মোট ১৭ জন।