×

ঢাকা

হরিরামপুর ও শিবালয়ে উপজেলা প্রশাসনের দোহাই দিয়ে ড্রেজার বাণিজ্য

Icon

সুরেশ চন্দ্র রায়, মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশ: ১৪ জুলাই ২০২৫, ০৩:৫৩ পিএম

হরিরামপুর ও শিবালয়ে উপজেলা প্রশাসনের দোহাই দিয়ে ড্রেজার বাণিজ্য

ছবি : ভোরের কাগজ

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার গালা ইউনিয়নের বিজয়নগর বাজারের উত্তর পূর্বপাশের নদীতে এবং শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম এলাকার (কালিবাড়ির কাছে) ফসলী মাঠের ডাঙায় ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

রবিবার (১৩ জুলাই) দুপুরের দিকে সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিজয়নগর বাজারের পাশের নদীতে ড্রেজার বসিয়ে আদম ব্যবসায়ী রহিজ উদ্দিন, সুপারি বিক্রেতা আব্দুল লতিফ ও অটো চালক ফারুক মিয়ার জায়গা ভরাট করা হচ্ছে। অপরদিকে, পাড়াগ্রামের (কালিবাড়ির পাশে) রশিদ মোল্লা ও সমোর ডাঙার পাশে অবস্থিত মিণ্টু, লাল্টু ও বিল্টুদের ডাঙায় ড্রেজার বসিয়ে মসজিদের আশেপাশের কয়েকটি জায়গা ভরাট করা হয়েছে এবং প্রফেসর অনিল সরকার ও শিক্ষক প্রিয়বালা সরকারের পুরাতন বাড়িটি ভরাটের প্রস্তুতি চলছে। যে বাড়িটি পদ্মায় ভাঙা লোকজন কিনে নিয়েছেন বলে স্থানীয়দের মাধ্যমে জানা যায়।

আরো পড়ুন : ঢাবির জগন্নাথ হলের ছাদ থেকে পড়ে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু

স্থানীয়রা জানান, বিজয়নগর এলাকার আদম ব্যবসায়ী রহিজ উদ্দিনের নেতৃত্বে দিয়াবাড়ী (পোড়াভিটা) এলাকার ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. সুমন বিজয়নগর এলাকার নদী থেকে মাটি উত্তোলন করছেন এবং টেপড়া এলাকার ড্রেজার ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান শিবালয় উপজেলার শিমুলিয়া ইউনিয়নের পাড়াগ্রাম এলাকার (কালিবাড়ির কাছে) মৃত, হক সাহেবের ছেলে মিণ্টু মাতব্বর, লাল্টু ও বিল্টু গংদের ডাঙায় (জলাশয়) ড্রেজার বসিয়ে দাপটের সঙ্গে মাটি উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করে হতিয়ে নিচ্ছেন লাখ লাখ টাকা। এই ড্রেজার ব্যবসায়ীদের উপজেলা প্রশাসন নাকি মৌখিক অনুমতি দিয়েছেন! এটি প্রচার করে তারা এই এলাকায় দীর্ঘদিন যাবৎ ড্রেজার ব্যবসা বিনা বাঁধায় চালিয়ে যাচ্ছেন। ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. সুমন ও লুৎফর রহমানের ড্রেজার বাণিজ্যের কারণে বিজয়নগর এলাকার নদী পাড়ের মানুষ এবং পাড়াগ্রাম এলাকার কৃষকরা ভাঙন আতঙ্কে দিন পাড় করছেন।

বিজয়নগর এলাকার নদীপাড়ের বাসিন্দা মো. আজাহার জানান, ড্রেজার ব্যবসায়ী সুমন আমার বাড়ির ঘেষে নদীতে ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলন শুরু করেছিল। কঠোর বাঁধা ও প্রতিবাদের মুখে তারা ড্রেজার সরিয়ে সামান্য পশ্চিম দিকে বসিয়েছেন। ড্রেজার ব্যবসায়ীদের দাপটের কাছে তিনিসহ এলাকাবাসী অসহায়।

বিজয়নগর এলাকার কতিপয় বাসিন্দা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মিণ্টু মাতব্বরের ডাঙায় ড্রেজার বসিয়ে প্রতিদিন লক্ষাধিক ঘনফুট মাটি উত্তোলন করে বিভিন্ন জায়গায় বিক্রি করছেন লুৎফর রহমান। গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লুৎফর রহমান যেভাবে নেতাকর্মীদের সঙ্গে মিলেমিশে এ এলাকায় ড্রেজার ব্যবসা করেছেন এখনও একইভাবে ব্যবসা করছেন এককভাবে। লুৎফর রহমান অত্যন্ত ধূর্ত প্রকৃতির লোক। তিনি লোকজনের কাছে বলে বেড়ান তার বাড়ি টেপড়া উপজেলা এলাকায়। তার সঙ্গে নাকি উপজেলা প্রশাসনের সবার সখ্যতা রয়েছে।

তিনি দম্ভের সঙ্গে স্থানীয়দের বলেন, শিবালয় উপজেলার সব ড্রেজার ব্যবসায়ীর ড্রেজার ব্যবসা বন্ধ হলেও তার ব্যবসা নাকি কেউ বন্ধ করতে পারবে না। লুৎফর রহমান তার ড্রেজার ব্যবসার জন্য এমন সব জায়গা নির্বাচন করেন যেখানে প্রশাসনের লোকজন ইচ্ছে করলেও খুব সহজে যেতে পারেন না। তার এ দাপুটে ব্যবসা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হলে যৌথবাহিনীর অভিযান একান্তভাবে প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।

আরো পড়ুন : ময়মনসিংহে ২ সন্তানসহ মায়ের গলা কাটা লাশ উদ্ধার

বিজয়নগর এলাকার আদম ব্যবসায়ী ও ড্রেজারের নেতৃত্বদানকারী রহিজ উদ্দিন বলেন, এলাকার রাস্তা ভরাটের জন্য তিনি গালা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানকে সঙ্গে নিয়ে হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে গিয়েছিলেন। প্রথমে ওই কর্মকর্তা ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করতে সম্পূর্ণ নিষেধ করেছিলেন। কিন্তু তাকে এ বিষয়ে বিশেষভাবে অনুরোধ করায় তিনি মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন। তবে, তিনি শর্ত দিয়েছেন এই মাটি অন্য কোথাও বিক্রি করা যাবে না। নদীর পাড়ে আপনার ব্যক্তিগত জায়গা থেকে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনকালে এর সঙ্গে যে পরিমাণ নদীর মাটি উত্তোলিত হচ্ছে সে বিষয়ে আপনি কী বলবেন? এ প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি তার প্যাণ্টের পকেট থেকে টাকা বের করে প্রতিবেদককে দেয়ার জন্য জোর চেষ্টা করেন। কিন্তু পরিশেষে তার এই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

গালা ইউপি চেয়ারম্যান মো. শফিক বিশ্বাস জানান, বিজয়নগর এলাকার ওই রাস্তাটি দীর্ঘদিন যাবৎ অবহেলিত ছিল। জনস্বার্থে রাস্তাটি মেরামত অত্যন্ত জরুরি ছিল। এ কারণে, রহিজ উদ্দিনের সঙ্গে তিনি ইউএনও অফিসে গিয়ে তিনি ইউএনও সাহেবকে ড্রেজারের বিষয়ে অনুরোধ করেন। বিশেষ অনুরোধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ড্রেজার দিয়ে মাটি ভরাটের জন্য মৌখিকভাবে অনুমতি দিয়েছেন।

তবে, তিনি শর্ত দিয়েছেন এই মাটি অন্য কোথাও বিক্রি করা যাবে না। রাস্তার কাজের জন্য ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলনকালে নিরীহ প্রতিবেশি আজাহার উদ্দিনকে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। এ ঘটনায় একটি মামলাও করা হয়েছে। যেটি এখনও চলমান। যেখানে ড্রেজার বসানো হয়েছে সেখান থেকে রহিজ উদ্দিনের ব্যক্তিমালিকানা জমির মাটির সঙ্গে তো নদীর মাটিও উত্তোলিত হচ্ছে। এ বিষয়ে আপনি কী বলবেন? উত্তরে চেয়ারম্যান সাহেব বলেন, আসলে কোথায় ড্রেজার বসানো হয়েছে তা তিনি স্ব-শরীরে গিয়ে দেখেননি।

ড্রেজার ব্যবসায়ী মো. সুমন প্রতিবেদককে বলেন, এ বিষয়ে মোবাইলে তিনি কোন কথাই বলবেন না। তিনি প্রতিবেদকের একটি বিকাশ নম্বর চেয়েছেন।

ড্রেজার ব্যবসায়ী লুৎফর রহমানের মোবাইলে ফোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ না করায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

হরিরামপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কোহিনুর আক্তার প্রতিবেদককে বলেন, গালা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান তার ব্যক্তিগত পুকুর থেকে মাটি উত্তোলনের একটি বিষয় নিয়ে তার কাছে গিয়েছিলেন বেশ কিছুদিন আগে। কিন্তু ব্যক্তিগত হোক আর নদী হোক, ড্রেজার দিয়ে কোথাও থেকে মাটি উত্তোলনের কোন সুযোগ নেই। অবশ্যই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

শিবালয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জাকির হোসেন দৈনিক ভোরের কাগজকে জানান, যদি ফসলী জমি না হয়ে বদ্ধ জলাশয় হয় তবে ড্রেজার দিয়ে মাটি উত্তোলন করা যেতে পারে। সেক্ষেত্রে, উপজেলা প্রশাসনের অনুমতির প্রয়োজন হয় কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, অবশ্যই অনুমতির প্রয়োজন হয়। ড্রেজার ব্যবসায়ী লুৎফর রহমান পাড়াগ্রাম এলাকার ডাঙায় (জলাশয়ে) ড্রেজার বসিয়ে মাটি উত্তোলনের জন্য শিবালয় উপজেলা প্রশাসনের নিকট অনুমতির জন্য এসেছিলেন কিনা প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, না। এই ধরনের কাজের অনুমতির জন্য কেউ তার দপ্তরে আসেননি।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

ড. ইউনূসকে ‘জাতীয় সংস্কারক’, সাঈদ-মুগ্ধদের ‘জাতীয় শহীদ’ ঘোষণা কেন নয়

ড. ইউনূসকে ‘জাতীয় সংস্কারক’, সাঈদ-মুগ্ধদের ‘জাতীয় শহীদ’ ঘোষণা কেন নয়

বিবেক জাগান

বিবেক জাগান

হানিফ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুই মামলা, সন্তানদের নোটিশ

হানিফ ও তার স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুই মামলা, সন্তানদের নোটিশ

দুই দেশে বেনজীরের অস্থাবর সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

দুই দেশে বেনজীরের অস্থাবর সম্পদ জব্দ, ব্যাংক হিসাব অবরুদ্ধ

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App