মন্দার কবলে অর্থনীতি: বিনিয়োগে স্থবিরতা, কর্মসংস্থানে বিপর্যয়

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৯ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩৩ এএম

দেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যিক পরিস্থিতি নাজুক সময় পার করছে। ছবি : সংগৃহীত
দেশের সামগ্রিক ব্যবসা-বাণিজ্যিক পরিস্থিতি নাজুক সময় পার করছে। আইন-শৃঙ্খলার অবনতির পাশাপাশি বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। উচ্চ সুদের হার, ডলারের মূল্যবৃদ্ধি, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস, কাঁচামাল আমদানিতে ব্যয় বৃদ্ধি ও চাহিদা কমে যাওয়ায় শিল্পখাত সংকটে পড়েছে। উদ্যোক্তারা নতুন ব্যবসা বা সম্প্রসারণে আগ্রহ হারিয়েছেন।
এর প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আয় ও কর্মসংস্থানে। একের পর এক কারখানা বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, ফলে লাখো মানুষ চাকরি হারিয়ে বেকারত্ব ও দারিদ্র্যের বেড়াজালে পড়ছে।
সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করা হলেও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এখন সর্বোচ্চ মূল্যস্ফীতির দেশ বাংলাদেশ। ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তারা বলছেন, সরকারের কাছ থেকে কোনো আশ্বাস না পাওয়ায় তারা চরম উদ্বেগ ও আস্থাহীনতায় ভুগছেন।
সম্প্রতি প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে নেমে এসেছে। ঋণ প্রবৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় উভয়ই স্থবির। ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪.১ শতাংশে। কর-জিডিপি অনুপাত কমে ৬.৮ শতাংশে ঠেকেছে। বেকারত্ব বেড়ে হয়েছে ৩.৭ শতাংশ।
রপ্তানিতেও ভাটা পড়েছে। আগস্টে রপ্তানি প্রবৃদ্ধি কমেছে ৩ শতাংশ, সেপ্টেম্বরে ৪.৬১ শতাংশ। বিশ্বব্যাংক বলছে, রাজনৈতিক অস্থিরতা ও ব্যাংক খাতের দুর্বলতাই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হারানোর মূল কারণ।
আরো পড়ুন : ভিসা জটিলতা দূর করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সভাপতি আবদুল হাই সরকার বলেন, অর্থনীতির সব সূচক এখন খারাপ। ব্যবসা-বাণিজ্যবান্ধব পরিবেশ নেই। আমলারা ব্যবসায়ীদের সমস্যা বোঝেন না। নীতিনির্ধারণে বাস্তব অভিজ্ঞতার ঘাটতি রয়েছে। জ্বালানি ও বিদ্যুৎ না পেলে বিনিয়োগ সম্ভব নয়।
বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ব্যবসা এখন শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থায়। অর্থনীতি চলছে ঠিকই, কিন্তু কোনো অগ্রগতি নেই। সরকার উদ্যোক্তাদের সঙ্গে বসছে না। সবাই অপেক্ষা করছে নতুন সরকারের জন্য।
ঢাকা চেম্বারের সাবেক সভাপতি হোসেন খালেদ বলেন, সরকারি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ প্রায় থেমে গেছে। জিডিপির এক-তৃতীয়াংশ আসে সেখান থেকে। বেসরকারি খাতও এতে যুক্ত। এখন সব স্থবির হয়ে আছে, ফলে প্রবৃদ্ধিতে প্রভাব পড়ছে।
উইমেন এন্টারপ্রেনার অ্যাসোসিয়েশনের (ডব্লিউইএবি) প্রেসিডেন্ট নাসরিন আউয়াল মিন্টু বলেন, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে। নারীদের ওপর অত্যাচার, লুটপাট, ব্যবসায়িক অনিরাপত্তা বেড়েছে। সবাই স্থিতিশীল রাজনৈতিক সরকারের অপেক্ষায়। নির্বাচন ছাড়া এ পরিস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব নয়।
অ্যাকসেসরিজ খাতের সংগঠন বিজিএপিএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ শাহরিয়ার জানান, আমাদের সেক্টরের ৪৩ শতাংশ কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। ঋণের সুদ এখন ১৬ শতাংশ, কিন্তু জ্বালানি সরবরাহ অনিয়মিত। ফলে সাড়ে আট হাজার শ্রমিক চাকরি হারিয়েছে। মালিকরা ফ্যাক্টরি চালিয়ে যেতে পারছেন না।