নিত্যপণ্যের দামের চাপে জনজীবন চিড়েচ্যাপ্টা
মরিয়ম সেঁজুতি
প্রকাশ: ২৮ অক্টোবর ২০২৫, ০১:৪৩ পিএম
ছবি : সংগৃহীত
কমছে না চালের দাম। মোটা চাল ৫৫ টাকা এবং ‘আটাশ’ চাল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। এদিকে শীতের সবজি বাজারে এলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কমেনি দাম। ডিম, মুরগির দামও কিছুটা চড়া। কমেনি মাছ, মাংস, ডালের দাম। অধিকাংশ নিত্যপণ্য বেশি দরে বিক্রি হওয়ায় ক্ষুব্ধ ক্রেতারা। টানা ৪৪ মাস ধরে শ্রমিকদের মজুরি মূল্যস্ফীতির সঙ্গে তাল মেলাতে পারছে না, ফলে নিম্ন ও মধ্যম আয়ের মানুষের ক্রয়ক্ষমতা ক্রমাগত হ্রাস পাচ্ছে। লাগামহীনভাবে বেড়েছে খাদ্য, ভাড়া ও পরিবহন খরচ। ফলে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা ভয়ানকভাবে চাপে পড়েছে। আয় কমে যাওয়ায় অনেকেই এখন সঞ্চয় ভেঙে সংসার চালাচ্ছেন, কমিয়ে দিয়েছেন মৌলিক খরচ।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সবশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে গড় মজুরি বেড়েছে ৮ দশমিক ০২ শতাংশ, যেখানে একই সময়ে সার্বিক মূল্যস্ফীতি ছিল ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশ। অর্থাৎ, প্রকৃত অর্থে শ্রমিকদের বাস্তব আয় কমছে। গত তিন মাস ধরে এ ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে- জুলাইয়ে মজুরি বেড়েছিল ৮ দশমিক ১৯ শতাংশ, আগস্টে ৮ দশমিক ১৫ শতাংশ, আর সেপ্টেম্বরের শেষে নেমে এসেছে ৮ দশমিক ০২ শতাংশে।
সরকারি তথ্য বলছে, দেশে মূল্যস্ফীতির হার গত এক বছরে বেশ কিছুটা কমেছে। কিন্তু কমলাপুরের মুদি দোকান সালাম জেনারেল স্টোরের কর্ণধার মো. সালামের কথা কথায় উঠে আসে ভিন্ন চিত্র। তিনি বলছেন, বেচাকেনা কমতির দিকে। এক বছরের ব্যবধানে তার দোকানে বিক্রি কমেছে ২০-২৫ শতাংশ। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, মানুষের আয় আগের চেয়ে অনেক কমে গেছে। ফলে তারা প্রয়োজনীয় পণ্যও কম পরিমাণে কিনছেন।
গত বছরের জুলাই-পরবর্তী অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর গত আগস্টে মূল্যস্ফীতি ছিল ১০ দশমিক ৪৯ শতাংশ। সরকারের হিসাবে এক বছরে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমলেও বাজারে দেখা যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম কমেনি। দাম বৃদ্ধির হার কিছুটা কমেছে। কিন্তু জিনিসপত্রের দাম বেড়েই চলেছে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে এই কমার কোনো প্রভাব বা স্বস্তি অনুভূত হচ্ছে না। সংশ্লিষ্টরা মতে, সাধারণ মানুষের স্বস্তি তখনই আসবে, যখন পণ্যের দাম কমবে। আগে দাম বেড়েছিল ১২ শতাংশ হারে, যা এখন ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে।
বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক প্রধান অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, মূল্যস্ফীতি কমা মানে এই নয়- পণ্যের দাম কমেছে। এ বছরও পণ্যের দাম ৮ শতাংশের উপরে বেড়েছে; অর্থাৎ মূল্যবৃদ্ধির হার কমেছে, কিন্তু মূল্য বেড়েই চলেছে। মূল্যবৃদ্ধির এই হার বাড়ছে বলেই সাধারণ মানুষের মধ্যে মূল্যস্ফীতি কমার কোনো প্রভাব বা স্বস্তি অনুভূত হচ্ছে না। তিনি বলেন, স্বস্তি তখনই আসবে, যদি পণ্যের দাম কমে। আগে যা ১২ শতাংশ হারে বাড়ছিল, এখন তা ৮ শতাংশ হারে বাড়ছে, কিন্তু তা বাড়ছে তো। প্রধান খাদ্যপণ্য চালের দাম এখনো বাড়তি। অন্যান্য পণ্যের দামও প্রতিবেশী দেশের তুলনায় বেশি। সরকারের উদ্যোগের বিষয়ে ড. জাহিদ বলেন, সরকার মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধির গতিটাকে কমানোর ক্ষেত্রে কিছুটা সফল হলেও, এটি সামগ্রিকভাবে সাধারণ মানুষের জীবনযাপনে বড় ধরনের কোনো প্রভাব ফেলতে পারছে না। একদম সাধারণ মানুষের পর্যায়ে এর সুফল পৌঁছে দেয়ার মতো গতি হ্রাস ঘটেনি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
নিত্যপণ্যের লাগামহীন দাম সাধারণ মানুষের নাগালের বাইরে চলে যাচ্ছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর ২০২৫-এ সার্বিক মূল্যস্ফীতি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮ দশমিক ৩৬ শতাংশে, যা আগের মাসের তুলনায়ও বেশি। বিশেষ করে চাল, ডাল, ভোজ্যতেল, সবজি, ওষুধ ও বাসাভাড়ার দাম বেড়েছে ধারাবাহিকভাবে। বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, মূল্যস্ফীতি কমার প্রভাব সাধারণ মানুষের ওপর না পড়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে চালের দাম বাড়তি থাকা। গত দুই মাসে চালের দাম কিছুটা স্থিতিশীল হলেও বছরজুড়েই দাম চড়া। যদিও আন্তর্জাতিক বাজারে চালের দাম উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে, যা আট বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম। বিশ্লেষকরা বলছেন, এখানে দুটি বিষয় কাজ করছে। প্রথমত, কর্মসংস্থান কমায় মানুষের আয় কমে গেছে। এতে চালের ওপর নির্ভরশীলতা বেড়েছে- বাজারে সরবরাহের ঘাটতি না থাকা সত্তে¡ও যে চালের দাম বাড়তি, এটি তার মূল কারণ। দ্বিতীয়ত, সরকারি সংস্থা পরিসংখ্যান ব্যুরোরই তথ্য, এখানে মূল্যস্ফীতির ৪৮ শতাংশই হচ্ছে চাল থেকে। অন্যদিকে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পিপিআরসির সা¤প্রতিক এক গবেষণায় দেখা গেছে, পরিবারের মাসের মোট খরচের প্রায় ৫৫ শতাংশ চলে যায় খাবার কেনায়। একটি পরিবার খাবার কিনতে মাসে গড়ে ১০ হাজার ৬১৪ টাকা খরচ করে। এছাড়া প্রতি মাসে শিক্ষায় ১ হাজার ৮২২ টাকা, চিকিৎসায় ১ হাজার ৫৫৬ টাকা, যাতায়াতে ১ হাজার ৪৭৮ টাকা ও আবাসনে ১ হাজার ৮৯ টাকা খরচ হয়।
বাজারে খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বেশ কিছু দিন ধরে দেশে চাল আমদানি হচ্ছে। কিন্তু আমদানি করা চাল দিয়ে রান্না করা ভাতের মান ভালো না বলে ভোক্তাদের চাহিদা কম। এজন্য দেশি চালেই চাপ বাড়ছে। কমছে না দাম। সাগর, মনজুরসহ বিভিন্ন কোম্পানির মিনিকেট চাল কেজিপ্রতি ৭৫ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে মজুমদার কোম্পানি, দাদা, ডায়মন্ড, হরিণ, মোজাম্মেল কোম্পানির মিনিকেট চালের দাম আরো বেশিÑ ৮৫ টাকা এবং নাজিরশাইল ৯৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া আটাশ চাল ৫৮ থেকে ৬৫ টাকা এবং মোটা চাল ৫২ থেকে ৫৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বিক্রেতারা বলছেন, ধান উঠলেও চালের দাম কমে না। বরং বিভিন্ন অজুহাতে মিলমালিকরা বাড়িয়ে থাকেন। এজন্যই গত আমন ও বোরো মৌসুমে ধান ওঠার পরও কমেনি চালের দাম।
প্রায় একই অবস্থা ডালের বাজারেও। বেশ কিছু দিন ধরে বিভিন্ন বাজারে মসুর ডালের দামও চড়া দেখা গেছে। দেশি মসুর ডাল ১৬০ টাকা কেজি। কমছে না দাম। তবে মোটা দানার মসুর ডাল ১২০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। ছোলার দামও বেড়ে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। খিলগাঁও বাজারে আল্লাহর দান স্টোরের রেজাউল করিম বলেন, দীর্ঘদিন ধরেই চালের দাম কমছে না, মসুর ডালের দামও বাড়তি। বেশ কিছু দিন ধরে ১৬০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। অন্য জিনিসের দামও কমে না। দাম বেশি হওয়ায় ক্রেতাও কমে গেছে। আগের মতো বিক্রি হয় না।
গত সপ্তাহে খুচরা পর্যায়ে পেঁয়াজের দাম ১০ টাকা বেড়ে ৯০ টাকা কেজি হয়। গতকাল সোমবারও বিক্রেতারা সেই দামে বিক্রি করেন। পাবনা ও রাজশাহীর পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৯০ টাকায়। তবে ফরিদপুরের পেঁয়াজ ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আগের সপ্তাহের মতো গতকালও আদার কেজি ১৬০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়। রসুনও বাড়তি দরে ১৫০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে।
নতুন শীতকালীন সবজি বাজারে আসায় কিছুটা কমতির দিকে থাকলেও এখনো তুলনামূলক চড়া দামেই বিক্রি হচ্ছে। দেশে নিম্নবিত্তের পাশাপাশি মধ্যবিত্তরাও বেশি করে ডিম কিনছেন। কারণ সবজিসহ মাছ-মাংসের দাম বেশি। গত সপ্তাহে বিভিন্ন বাজারে ১৪০ থেকে ১৪৫ টাকায় ডজন ডিম বিক্রি হলেও এখন তা ১৪০ টাকায় বিক্রি হয়। তবে বিভিন্ন পাড়া-মহল্লার দোকানে একটু বেশি দামেই তা বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেট করা ডিমের দাম আরো বেশি; ডজনপ্রতি ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে, বাজারে পণ্যের দাম না কমলেও শ্রমিকদের মজুরি বা আয় সেই হারে বাড়ছে না। ফলে বাস্তব আয় বা ক্রয়ক্ষমতা কমে গেছে। এ কারণে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষ সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়েছে। মাসের মাঝামাঝি থেকেই অনেক পরিবারকে ঋণ নিতে বা ধার করে সংসার চালাতে হচ্ছে। কেউ কেউ টিকে থাকার তাগিদে মৌলিক খরচ- খাদ্য, স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ব্যয় কমিয়ে দিচ্ছেন।
অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, পণ্যমূল্যের স্থিতি আনতে সরবরাহ ব্যবস্থা ও বাজার নিয়ন্ত্রণে আরো কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি। অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, শ্রমিকরা এখন দুই দিক থেকে আঘাত পাচ্ছেন- একদিকে দাম বাড়ছে, অন্যদিকে মজুরি বাড়ার গতি কমছে। তিনি বলেন, দেশের সব বিভাগেই সেপ্টেম্বর মাসে মজুরি বৃদ্ধির হার হ্রাস পেয়েছে। এর মধ্যে খুলনায় সবচেয়ে বেশি পতন- আগস্টের তুলনায় ০ দশমিক ১৮ শতাংশ পয়েন্ট কমেছে। ড. জাহিদ হোসেনের মতে, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ বা উৎপাদনশীলতা বাড়ানো ছাড়া বাস্তব আয়ের সংকট থেকে দ্রুত মুক্তি সম্ভব নয়।
জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) জানিয়েছে, দেশে তীব্র খাদ্য নিরাপত্তাহীনতায় ভোগা মানুষের সংখ্যা ২০২৪ সালের ডিসেম্বর নাগাদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ৩৬ লাখে- যা এক বছরের ব্যবধানে ৭০ লাখ বেশি। খাদ্য, বাসাভাড়া, পরিবহন, ওষুধ এবং শিক্ষা খাতে ব্যয় গত তিন বছর ধরে লাগাতার বাড়ছে। অর্থনীতির এ চাপে দেশের প্রবৃদ্ধি নেমে এসেছে গত পাঁচ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে। বিবিএসের হিসাবে, গত অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ছিল ৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) সম্প্রতি তাদের ‘ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক আউটলুক’ প্রতিবেদনে বাংলাদেশের ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির পূর্বাভাস কমিয়ে ৫ দশমিক ৪ থেকে ৪ দশমিক ৯ শতাংশে নামিয়েছে।
বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ প্রবাহেও স্থবিরতা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যে দেখা গেছে, আগস্টে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি দাঁড়িয়েছে ৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ- যা গত ২২ বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন। উচ্চ সুদহার, ব্যাংক ঋণ সংকট এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার কারণে নতুন প্রকল্প শুরু হচ্ছে না।
বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, চার বছর ধরে চলমান মূল্যস্ফীতি ও বিনিয়োগ স্থবিরতার কারণে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধি ভেঙে পড়েছে। সুশাসন ও লক্ষ্যভিত্তিক সহায়তা ছাড়া পরিস্থিতি পাল্টানো সম্ভব নয়।
রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, উচ্চ ঋণসুদের হার, জ্বালানি সংকট, আমদানি ব্যয় ও রাজস্ব ঘাটতি মিলিয়ে অর্থনীতি এখন এক ‘চাপের বলয়ে’। শিল্প খাতের অনেক প্রতিষ্ঠান উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে, নির্মাণ খাতে ধীরগতি, ব্যাংক ঋণে প্রবাহ সংকোচন- সব মিলিয়ে সামষ্টিক অর্থনীতি দুর্বল অবস্থানে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এটি শুধু অর্থনৈতিক নয়, সামাজিক সংকটও বটে। ক্রয়ক্ষমতা কমে গেলে মানুষ খরচ কমায়, চাহিদা হ্রাস পায়, ব্যবসা থেমে যায়- ফলে কর্মসংস্থান কমে ও আয় আরো সংকুচিত হয়। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখনই দরকার সমন্বিত নীতিগত পদক্ষেপÑ মজুরি বৃদ্ধির পরিবেশ তৈরি করা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করা, নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য খাদ্য সহায়তা ও নগদ ভর্তুকি বাড়ানো এবং বিনিয়োগবান্ধব রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা।
সরকারের নানা উদ্যোগ : অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নিয়ে মূল্যস্ফীতি কমানোকেই অন্যতম অগ্রাধিকার খাত হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। সেই অনুযায়ী সরকার বেশ কিছু পদক্ষেপও নিয়েছিল। বাংলাদেশ ব্যাংক গত এক বছরে তিন দফায় নীতি সুদহার বাড়িয়ে ১০ শতাংশে উন্নীত করে। এতে ব্যাংকঋণের সুদহারও ১৫ শতাংশ ছাড়িয়ে গেছে। উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করতে পারছেন না বেসরকারি বিনিয়োগকারীরা। এতে মূল্যস্ফীতি খুব বেশি না কমলেও বিনিয়োগে স্থবিরতা তৈরি হয়েছে। কমেছে কর্মসংস্থান এবং প্রবৃদ্ধি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা ধরনের পদক্ষেপ সত্ত্বেও মূল্যস্ফীতি কেন লক্ষ্য অনুযায়ী কমছে না, তা জানার চেষ্টা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সম্প্রতি দেশের শীর্ষ ২০ আমদানিকারক ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর। বৈঠকে দেশের শীর্ষ ভোগ্যপণ্য আমদানিকারকদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- মেঘনা গ্রুপ, টিকে গ্রুপ, সিটি গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, নিউজিল্যান্ড ডেইরি, ডেলটা অ্যাগ্রো ফুডের প্রতিনিধিরা। এ সময় ব্যবসায়ীরা ঋণের সুদহার কমানো, পণ্য আমদানিতে নানা ধরনের সীমা প্রত্যাহার, বিক্রেতা ও ক্রেতার চুক্তির ভিত্তিতে নিত্যপণ্য আমদানির সুযোগ, নিত্যপণ্য আমদানিতে কোনো শুল্ক-কর না বসানো এবং ভোগ্যপণ্যে ঋণের মেয়াদ ৯০ দিন থেকে বাড়িয়ে ১৮০ দিন করার প্রস্তাব দেন। ব্যবসায়ীদের সব দাবি মানতে না পারলেও ইতিবাচকভাবে বিবেচনার আশ্বাস দেন গভর্নর। এ সময় তিনি বলেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে মূল্যস্ফীতি ৫-৬ শতাংশে নামিয়ে আনতে চায় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরপর আবার সুদের হার ১ অঙ্কে (১০ শতাংশের নিচে) নামিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হবে।
