কেন দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন মাওলানা আজহারী?

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ০৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯:৩১ এএম

মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী। ছবি: সংগৃহীত
জনপ্রিয় ইসলামী বক্তা মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারী প্রায় সাড়ে ৪ বছর পর দেশে ফিরেছেন। গত ২ অক্টোবর তিনি মালয়েশিয়া থেকে ঢাকায় ফিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট দিয়ে দেশে ফেরার খবরটি জানান। তিনি লিখেছেন, ‘আলহামদুলিল্লাহ, সহি-সালামাতে প্রিয় মাতৃভূমিতে এসে পৌঁছলাম। পরম করুণাময় এই প্রত্যাবর্তনকে বরকতময় করুন। সকলের দোয়ার নিবেদন।’
তবে এই দীর্ঘ সময় তিনি কেন দেশের বাইরে ছিলেন এবং কী কারণে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হঠাৎ দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছিলেন, সেই প্রশ্ন এখনো অনেকের মনে। তার দেশত্যাগের পেছনে প্রকৃত কারণ সম্পর্কে কোনো নির্দিষ্ট তথ্য পাওয়া না গেলেও বিভিন্ন সূত্র থেকে জানা যায়, কিছু রাজনৈতিক ও সামাজিক কারণের জন্যই তাকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল।
ধর্মান্তর বিতর্ক এবং আন্তর্জাতিক চাপ
২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে মাওলানা আজহারীর একটি মাহফিলে ১২ জন ভারতীয় নাগরিকের ইসলাম গ্রহণের ঘটনা ব্যাপক আলোচনার জন্ম দেয়। মাহফিলটি অনুষ্ঠিত হয়েছিল জয়পুরহাটে, যেখানে ওই ভারতীয় নাগরিকরা ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। পরবর্তীতে লক্ষ্মীপুরের আরেকটি মাহফিলেও এমন ঘটনা ঘটে, যেখানে আরো ১২ জন ভারতীয় হিন্দু পরিবার ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করে। এ নিয়ে ব্যাপক বিতর্ক শুরু হলে স্থানীয় প্রশাসন ওই পরিবারগুলোকে আটক করে এবং তাদের ভারতে ফেরত পাঠায়।
অনেকেই মনে করেন, এই ধর্মান্তর ইস্যু এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক চাপের কারণেই মাওলানা আজহারীকে দেশ ছাড়তে হয়েছিল। বিশেষ করে ভারত সরকারের চাপের মুখে তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার তাকে দেশত্যাগে বাধ্য করে বলে বিভিন্ন সূত্রে দাবি করা হয়।
রাজনৈতিক চাপ এবং ভণ্ডপীরদের বিরোধিতা
মাওলানা আজহারী তার বক্তৃতায় সবসময় স্পষ্টভাষী ছিলেন এবং তার মাহফিলগুলোতে অসংখ্য বিধর্মী ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতেন। তার ভক্তদের মতে, তিনি শুধু সাধারণ মানুষের নয়, দেশের বিভিন্ন ভণ্ডপীর ও মুরিদপন্থিদের বিরাগভাজন ছিলেন। তারা মনে করেন, ভণ্ডপীরদের ষড়যন্ত্রের কারণেই মাওলানা আজহারীকে ওয়াজের ময়দান থেকে সরিয়ে দেয়ার প্রচেষ্টা চালানো হয়েছিল।
অন্যদিকে, তৎকালীন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী তাকে জামায়াত-সংশ্লিষ্ট বলেও ট্যাগ করেন, যা আরো বিতর্কের জন্ম দেয়। এসব রাজনৈতিক ও সামাজিক চাপের সম্মুখীন হয়ে মাওলানা আজহারী দেশ ছাড়তে বাধ্য হন বলে অনেকে ধারণা করেন।
মালয়েশিয়ায় অবস্থান এবং গবেষণার কাজে ব্যস্ততা
২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে মাওলানা আজহারী ফেসবুকে একটি পোস্ট দিয়ে জানান, পারিপার্শ্বিক কারণে তিনি ওই বছরের তাফসির প্রোগ্রাম বন্ধ করছেন এবং রিসার্চের কাজে মালয়েশিয়া ফিরে যাচ্ছেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘মার্চ পর্যন্ত আমার বাকি প্রোগ্রামগুলো স্থগিত করা হলো। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সুযোগ করে দিলে আবারো দেখা হবে ও কথা হবে ইনশাআল্লাহ।’
এরপর থেকে মাওলানা আজহারী মালয়েশিয়ায় অবস্থান করে তার গবেষণার কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলেন। তার ভক্তরা মনে করেন, দেশ-বিদেশের মানুষ তার আলোচনা থেকে উপকৃত হয়েছে এবং ভবিষ্যতেও তাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে দেখা যাবে।
আরো পড়ুন: ডিসি নিয়োগে ভয়াবহ কেলেঙ্কারি
মাওলানা মিজানুর রহমান আজহারীর দেশে ফিরে আসা তার ভক্তদের মধ্যে আনন্দের জন্ম দিয়েছে। তবে তার দেশত্যাগের পেছনে রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিক চাপের বিষয়টি এখনো আলোচনা ও বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে। দীর্ঘ সাড়ে ৪ বছর পর তিনি দেশে ফিরে আবারো ইসলামী দাওয়াতের কাজে মনোনিবেশ করবেন বলে আশা করছেন তার অনুসারীরা।