×

আইন-বিচার

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: আপিল শুনানি যে পর্যায়ে

Icon

কাগজ ডেস্ক

প্রকাশ: ২১ আগস্ট ২০২৫, ০৮:৫১ এএম

একুশে আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলা: আপিল শুনানি যে পর্যায়ে

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাটি চালানো হয়। ছবি: সংগৃহীত

২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তৎকালীন বিরোধীদলীয় দল আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই ঘটনায় দায়ের করা মামলাটি দীর্ঘ বিচারিক প্রক্রিয়া শেষে বর্তমানে আপিল বিভাগে শুনানি পর্যায়ে রয়েছে। রাষ্ট্র ও আসামিপক্ষের আইনজীবীরা আশা করছেন, চলতি মাসেই মামলার শুনানি শেষ হতে পারে।

ঘটনার বিবরণী থেকে জানা গেছে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলাটি চালানো হয়। অল্পের জন্য ওই হামলা থেকে প্রাণে বেঁচে যান আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। তবে হামলায় আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক, সাবেক রাষ্ট্রপতি (প্রয়াত) জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন নিহত হন। আহত হন দলের তিন শতাধিক নেতাকর্মী। ঘটনার পরদিন মতিঝিল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক আহমেদ বাদী হয়ে একটি মামলা করেন।

তদন্ত শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৮ সালের ১১ জুন দেওয়া অভিযোগপত্রে বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন ও হুজি নেতা মুফতি আব্দুল হান্নানসহ ২২ জনকে আসামি করা হয়। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের পর অধিকতর তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত।

দুই বছর তদন্তের পর ২০১১ সালের ৩ জুলাই ৩০ জনকে আসামি করে সম্পূরক অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এর ফলে এ মামলায় মোট আসামির সংখ্যা দাঁড়ায় ৫২ জনে। মোট ৫২ আসামির মধ্যে আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ ও মুফতি হান্নান এবং তার সহযোগী শাহেদুল ইসলাম বিপুলের মৃত্যুদণ্ড অন্য মামলায় কার্যকর হয়। তিন জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ায় এ মামলার আসামির সংখ্যা হয় ৪৯ জনে। এ ৪৯ জনের মধ্যে রায় দেওয়ার সময় ৩১ জন কারাগারে ছিলেন। পলাতক ছিলেন বাকি ১৮ জন।

আরো পড়ুন : এক্সপ্রেসওয়েতে প্রাইভেটকার উল্টে নিহত ৩

তারা হলেন—তারেক রহমান, হারিছ চৌধুরী, কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, এটিএম আমিন, সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দার, খান সাঈদ হাসান, ওবায়দুর রহমান, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আবদুল হাই, রাতুল বাবু, মোহাম্মদ হানিফ, আবদুল মালেক, শওকত ওসমান, মাওলানা তাজউদ্দিন, ইকবাল হোসেন, মাওলানা আবু বকর, খলিলুর রহমান ও জাহাঙ্গীর আলম।

এরপর ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর বিচারিক আদালত সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও বিএনপি নেতা আবদুস সালাম পিন্টুসহ ১৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দেন। একইসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান) তারেক রহমানসহ ১৯ জনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয় অপর ১১ আসামিকে।

পরে ওই বছরের ২৭ নভেম্বর মামলার বিচারিক আদালতের রায় প্রয়োজনীয় নথিসহ হাইকোর্টের ডেথ রেফারেন্স শাখায় পৌঁছে। পাশাপাশি কারাবন্দি আসামিরা আপিল করেন। ২০২২ সালের ডিসেম্বরে এ মামলার আপিল শুনানি বিচারপতি সহিদুল করিমের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে শুরু হয়। এর মধ্যে ওই বেঞ্চ পুনর্গঠন হয়। এ কারণে নতুন বেঞ্চে আবার শুনানি শুরু হয়।

বিচারিক আদালতের রায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, লুৎফুজ্জামান বাবর, আব্দুস সালাম পিন্টু, তার ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন, হুজির সাবেক আমির ও ইসলামিক ডেমোক্রেটিক পার্টির আহ্বায়ক মাওলানা শেখ আবদুস সালাম (কারাগারে মারা যান), কাশ্মীরি জঙ্গি আব্দুল মাজেদ ভাট, আবদুল মালেক ওরফে গোলাম মোস্তফা, মাওলানা শওকত ওসমান, মহিবুল্লাহ ওরফে মফিজুর রহমান, মাওলানা আবু সাঈদ ওরফে ডা. জাফর, আবুল কালাম আজাদ ওরফে বুলবুল, মো. জাহাঙ্গীর আলম, হাফেজ মাওলানা আবু তাহের, হোসাইন আহমেদ তামিম, মঈন উদ্দিন শেখ ওরফে মুফতি মঈন, মো. রফিকুল ইসলাম, মো. উজ্জ্বল, এনএসআই’র সাবেক মহাপরিচালক মেজর জেনারেল (অব.) রেজ্জাকুল হায়দার চৌধুরী, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবদুর রহিম (কারাগারে মারা যান), হানিফ পরিবহনের মালিক বিএনপি নেতা মোহাম্মদ হানিফ।

পরিকল্পনা ও অপরাধমূলক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে হত্যা করার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত করে তাদের মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার নির্দেশ দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে এক লাখ টাকা করে জরিমানা করেন আদালত।

যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিরা হলেন, তারেক রহমান, খালেদা জিয়ার সাবেক রাজনৈতিক উপদেষ্টা হারিছ চৌধুরী, বিএনপি নেতা কাজী শাহ মোফাজ্জল হোসেন কায়কোবাদ, হুজি সদস্য হাফেজ মাওলানা ইয়াহিয়া, শাহাদাৎ উল্লাহ ওরফে জুয়েল, মাওলানা আবদুর রউফ (কারাগারে মারা যান), মাওলানা সাব্বির আহমেদ, আরিফ হাসান ওরফে সুমন, আবু বকর ওরফে হাফেজ সেলিম মাওলাদার, মো. আরিফুল ইসলাম, মহিবুল মুত্তাকিন ওরফে মুত্তাকিন, আনিসুল মুরছালিন ওরফে মুরছালিন, মো. খলিল ওরফে খলিলুর রহমান, জাহাঙ্গীর আলম বদর, মো. ইকবাল ওরফে ইকবাল হোসেন, লিটন ওরফে মাওলানা লিটন, মুফতি শফিকুর রহমান, মুফতি আব্দুল হাই, রাতুল আহমেদ ওরফে রাতুল বাবু।

তাদের দোষী সাব্যস্ত করে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়ার পাশাপাশি প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক বছর সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

এছাড়া পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজি) মো. আশরাফুল হুদা ও শহুদুল হক, বিএনপি চেয়ারপারসন ও তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার ভাগনে লেফটেন্যান্ট কমান্ডার (অব.) সাইফুল ইসলাম ডিউক, লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) সাইফুল ইসলাম জোয়ার্দ্দার, ডিজিএফআই’র মেজর জেনারেল (অব.) এটিএম আমিন, ডিএমপির সাবেক উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) খান সাঈদ হাসান, আরেক সাবেক উপ-কমিশনার (পূর্ব) ওবায়দুর রহমান খান, সাবেক অতিরিক্ত মহাপরিদর্শক খোদা বক্স চৌধুরী, সিআইডির সাবেক বিশেষ সুপার মো. রুহুল আমিন, সাবেক এএসপি আবদুর রশিদ, সাবেক এএসপি মুন্সি আতিকুর রহমানকে দুই বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। আরেকটি ধারায় খোদা বক্স চৌধুরী, রুহুল আমিন, আবদুর রশিদ ও মুন্সি আতিকুর রহমানকে তিন বছর করে কারাদণ্ড ও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও ছয় মাস করে কারাদণ্ড দেন আদালত।

পরে ওই রায়ের বিরুদ্ধে ডেথ রেফারেন্স ও জেল আপিল শুনানির জন্য হাইকোর্টে আসে। এরপর আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে মামলাটির শুনানি শেষ পর্যায়ে গেলেও ২০২৪ সালের ৫ আগস্টে সরকার পরিবর্তনের পর একই বছরের ৩১ অক্টোবর মামলাটির পুনরায় শুনানি শুরু হয়।

শুনানি শেষে গত ২১ নভেম্বর মামলাটির রায় ঘোষণার জন্য অপেক্ষমাণ (সিএভি) রাখেন হাইকোর্ট। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. জসিম সরকার। অন্যদিকে আসামি পক্ষে ছিলেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও শিশির মনির।

এরপর ২০২৪ সালের ১ ডিসেম্বর হাইকোর্ট ওই রায় বাতিল করে তারেক রহমান ও লুৎফুজ্জামান বাবরসহ সব আসামিকে খালাস দেন। এরপর রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন জানায়। বর্তমানে মামলাটি আপিল বিভাগে শুনানি পর্যায়ে রয়েছে।

২০ আগস্ট পর্যন্ত চতুর্থ দিনের মতো শুনানি শেষ হয়েছে। শুনানিতে আপিল বিভাগ একই দিনে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টায় তিন আসামির জবানবন্দি গ্রহণের বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে। পাশাপাশি হত্যামামলার সাক্ষ্য বিস্ফোরক আইনের মামলায় হুবহু ব্যবহারের বিষয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।

রাষ্ট্রপক্ষে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ মাসুদ জানান, মামলাটি মূলত আসামিদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির ওপর ভিত্তি করে দাঁড়িয়ে আছে এবং এগুলো আইন অনুযায়ী রেকর্ড করা হয়েছে।

প্রধান বিচারপতি ড. সৈয়দ রেফাত আহমেদের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ পুনরায় শুনানির জন্য বৃহস্পতিবার (২১ আগস্ট) দিন ধার্য করেছেন। আইনজীবীদের প্রত্যাশা, চলতি মাসের মধ্যেই শুনানি শেষ হবে এবং হাইকোর্টের খালাসের রায় বহাল থাকতে পারে।

সাবস্ক্রাইব ও অনুসরণ করুন

মার্কিন হুমকি উপেক্ষা, ভারতকে তেল সরবরাহে অটল রাশিয়া

মার্কিন হুমকি উপেক্ষা, ভারতকে তেল সরবরাহে অটল রাশিয়া

গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলল ইন্দোনেশিয়াসহ ৭ দেশ

গাজায় বিমান থেকে ত্রাণ ফেলল ইন্দোনেশিয়াসহ ৭ দেশ

ডিসেম্বরে ‘সোলজার’ নিয়ে আসতে চান শাকিব খান

ডিসেম্বরে ‘সোলজার’ নিয়ে আসতে চান শাকিব খান

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ১৭৫ বাংলাদেশি

লিবিয়া থেকে দেশে ফিরেছেন ১৭৫ বাংলাদেশি

সব খবর

সম্পাদক : শ্যামল দত্ত

প্রকাশক : সাবের হোসেন চৌধুরী

অনুসরণ করুন

BK Family App