শেখ হাসিনাসহ পলাতকদের হাজিরে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২২ অক্টোবর ২০২৫, ১২:৫১ পিএম

সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের দীর্ঘ শাসনামলে সংঘটিত গুম-খুন এবং জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের তিনটি মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য জাতীয় পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। একই সঙ্গে গুমের দুই মামলায় পরবর্তী শুনানির তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে আগামী ২০ নভেম্বর।
বুধবার (২২ অক্টোবর) সকাল সাড়ে ৮টার পর ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেন। অন্য সদস্যরা হলেন, বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ ও অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
বুধবার সকালে তিনটি মামলার ওপর শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। প্রসিকিউশনের পক্ষে চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম যুক্তি উপস্থাপন করেন।
পরে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি জানান, তিন মামলায় মোট ১৫ আসামিকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী গ্রেপ্তার করে ট্রাইব্যুনালে হাজির করেছে। এর মধ্যে র্যাবের টিএফআই সেলে গুম-নির্যাতনের অভিযোগে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ১৭ আসামির মধ্যে ১০ জনকে আদালতে আনা হয়। ট্রাইব্যুনাল তাদের গ্রেপ্তার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
আরো পড়ুন : ৫ সেনাকর্মকর্তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ
একই সঙ্গে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ পলাতক আসামিদের হাজিরের জন্য দুইটি জাতীয় দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। বিজ্ঞাপনটি আগামী সাত দিনের মধ্যে (২৯ অক্টোবরের মধ্যে) প্রকাশ করতে হবে।
জয়েন্ট ইন্টারোগেশন সেল (জেআইসি)–এ গুমের অভিযোগে দায়ের করা আরেক মামলায় ১৩ আসামির মধ্যে তিনজনকে হাজির করা হয়। তাঁদের বিরুদ্ধেও একই আদেশ দেন ট্রাইব্যুনাল এবং পলাতকদের বিষয়ে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেন। এ মামলার পরবর্তী শুনানিও ২০ নভেম্বর নির্ধারণ করা হয়।
এছাড়া জুলাই–আগস্ট আন্দোলন ঘিরে রাজধানীর রামপুরায় ২৮ জনকে হত্যার ঘটনায় দায়ের করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় হাজির হওয়া দুজনকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল-১। তবে পলাতক দুই আসামি অনুপস্থিত থাকায় তাদের বিরুদ্ধেও বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের নির্দেশ দেওয়া হয়। এই মামলার পরবর্তী শুনানির তারিখ ৫ নভেম্বর।
এর আগে, ৮ অক্টোবর তিন মামলায় মোট ৩৪ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দাখিল করে প্রসিকিউশন। অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে এবং আজকের দিন শুনানির জন্য ধার্য করেন। তিন মামলার মধ্যে একটিতে ১৭ জন, একটিতে ১৩ জন ও অন্যটিতে ৪ জন আসামি রয়েছেন। দুটি মামলাতেই শেখ হাসিনার নাম রয়েছে।
অভিযোগে অন্তর্ভুক্ত ২৫ জনই সেনা কর্মকর্তা, যাদের মধ্যে ১৫ জনকে ১১ অক্টোবর সেনাসদর হেফাজতে নেয়। গ্রেপ্তার হওয়া সেনা কর্মকর্তারা হলেন,
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল তোফায়েল মোস্তফা সারোয়ার, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. কামরুল হাসান, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. মাহাবুব আলম, ব্রিগেডিয়ার কেএম আজাদ, কর্নেল আবদুল্লাহ আল মোমেন, কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান (অবসরকালীন ছুটিতে), লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো. মশিউর রহমান, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সাইফুল ইসলাম সুমন, লেফটেন্যান্ট কর্নেল সারওয়ার বিন কাশেম, লেফটেন্যান্ট কর্নেল রেদোয়ানুল ইসলাম, মেজর রাফাত বিন আলম, মেজর জেনারেল শেখ মো. সরওয়ার হোসেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহবুবুর রহমান সিদ্দিকী ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আহমেদ তানভির মাজাহার সিদ্দিকী।
সেনা কর্মকর্তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির ঘিরে রাজধানীর কাকরাইল, মৎস্য ভবন, পল্টনসহ বিভিন্ন এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়। ভোর থেকেই ট্রাইব্যুনাল ও হাইকোর্ট মাজারগেট এলাকায় পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা মোতায়েন থাকেন। পুরো এলাকা জুড়ে ছিল সতর্ক অবস্থান ও বাড়তি নিরাপত্তা।