রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী
বিচার স্বচ্ছ হয়েছে, শেখ হাসিনা খালাস পেলে খুশি হতাম
কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১৭ নভেম্বর ২০২৫, ১১:৩৬ এএম
শেখ হাসিনার রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন। ছবি : সংগৃহীত
মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় পলাতক ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে রাষ্ট্র নিযুক্ত আইনজীবী মো. আমির হোসেন বলেছেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার ভালোভাবে হয়েছে, স্বচ্ছ হয়েছে। ট্রাইব্যুনালের রায়ে শেখ হাসিনা খালাস পেলে আমি সবচেয়ে খুশি হতাম।
সোমবার (১৭ নভেম্বর) আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল প্রাঙ্গণে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমি আমার মক্কেলের খালাস চাই। এই চাওয়াটা তো স্বাভাবিক। এটা প্রত্যেকেই চাইবে।
শেখ হাসিনার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছেন কিনা—এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করি নাই। চেষ্টা করার কোনো বিধানও নাই। উনারাও আমার সঙ্গে কোনো যোগাযোগের চেষ্টা এবং কোনো রকম সহায়তাও করে নাই। প্রচ্ছন্নভাবেও যদি সহায়তা করতো সেটা আমার জন্য ভালো হতো, কিন্তু কেউ কিছু করে নাই। আইনগতভাবেও কোনো বিধান নেই।’
আরো পড়ুন : ট্রাইব্যুনাল-সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তা
তিনি আরো বলেন, ‘আমি সবসময় আশা করি আমার মক্কেল খালাস পাবে। এটা আমার ব্যক্তিগত প্রত্যাশা। এত মাস ধরে একজনের মামলায় কাজ করেছি—তিনি খালাস পেলে আমার চাইতে খুশি আর কে হবে?’
ট্রাইব্যুনালের বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি বিচার ভালোভাবেই হয়েছে, স্বচ্ছভাবেই হয়েছে।’
রাজসাক্ষী আবদুল্লাহ আল মামুন সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বলেন, ‘উনি আমার মক্কেল না। উনার বিষয়ে আমার মন্তব্য করা ঠিক হবে না।’
প্রসিকিউশনের বক্তব্যের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘উনারা তাদের কথা বলবেন, আমি আমার কথা বলবো—এটাই স্বাভাবিক। বিচার করবে ট্রাইব্যুনাল।’
এদিকে, শেখ হাসিনার রায়কে কেন্দ্র করে ট্রাইব্যুনাল ও সুপ্রিম কোর্ট এলাকায় কয়েক স্তরের নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। পুলিশ, র্যাব, এপিবিএন, বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর পাশাপাশি গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তৎপর রয়েছেন। রোববার সন্ধ্যার পর থেকে দোয়েল চত্ত্বর হয়ে শিক্ষাভবনগামী সড়কে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়, সীমিত করা হয় জনসাধারণের চলাচল।
গত ১৩ নভেম্বর এ মামলার রায় ঘোষণার জন্য আজকের দিন ধার্য করেন ট্রাইব্যুনাল-১ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল। অন্য দুই সদস্য হলেন বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ ও বিচারপতি মোহিতুল হক এনাম চৌধুরী।
শেখ হাসিনার মামলায় মোট ২৮ কার্যদিবসে ৫৪ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা গ্রহণ সম্পন্ন হয়। ৯ দিনব্যাপী চলে যুক্তিতর্ক এবং পাল্টা যুক্তি। ২৩ অক্টোবর রাষ্ট্রের প্রধান আইনকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামানের সমাপনী বক্তব্যের পর প্রসিকিউশন ও রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবীর যুক্তিখণ্ডন শেষে রায়ের জন্য সময় রাখা হয়।
প্রসিকিউশন এ মামলায় শেখ হাসিনা ও কামালের সর্বোচ্চ সাজা চেয়েছে। তবে রাজসাক্ষী হওয়ায় অন্যতম আসামি চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত ট্রাইব্যুনালের উপর ছেড়ে দেওয়া হয়। যদিও তার খালাস চেয়েছেন আইনজীবী যায়েদ বিন আমজাদ। অন্যদিকে রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী আমির হোসেনের দৃঢ় বিশ্বাস—হাসিনা ও কামাল খালাস পাবেন।
মানবতাবিরোধী অপরাধের পাঁচটি অভিযোগ—উসকানি, মারণাস্ত্র ব্যবহার, আবু সাঈদ হত্যা, চানখারপুলে হত্যা ও আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর অভিযোগে তিন আসামির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। ৮ হাজার ৭৪৭ পৃষ্ঠার আনুষ্ঠানিক অভিযোগে ২ হাজার ১৮ পাতা তথ্যসূত্র, ৪ হাজার ৫ পাতা দালিলিক প্রমাণ এবং ২ হাজার ৭২৪ পাতা শহীদদের তালিকা সংযুক্ত রয়েছে। সাক্ষী করা হয় ৮৪ জনকে। গত ১২ মে তদন্ত সংস্থা চিফ প্রসিকিউটরের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়।
