গাজায় অনাহারে ৩৫ দিনের শিশুর মৃত্যু, নিহত আরো ১১৬

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ২০ জুলাই ২০২৫, ০৮:২৪ এএম

অপুষ্টি বা অপর্যাপ্ত খাবারের জন্য গাজায় প্রতিদিনই নতুন প্রাণহানি ঘটছে। ছবি : সংগৃহীত
ইসরায়েলি অবরোধ ও মানবিক সহায়তা বন্ধের কারণে ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকায় অনাহারে মারা গেল মাত্র ৩৫ দিনের এক শিশু। শনিবার (১৯ জুলাই) গাজা সিটির আল-শিফা হাসপাতালে শিশুটির মৃত্যু হয় বলে নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালের পরিচালক ডা. মুহাম্মদ আবু সালমিয়া।
কাতার ভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাসপাতালে ওই শিশুর মৃত্যু ছাড়াও একই দিনে অপুষ্টি ও ক্ষুধার কারণে অন্তত আরো দুজন মারা গেছেন। হাসপাতালের কর্মরত ডা. সালমিয়া বলেন, অপুষ্টি বা অপর্যাপ্ত খাবারের জন্য প্রতিদিনই নতুন প্রাণহানি ঘটছে। আমাদের হাসপাতালের জরুরি বিভাগগুলো অনাহারে অসুস্থ হাজারো মানুষের ভিড়ে উপচে পড়ছে। অন্তত ১৭ হাজার শিশু মারাত্মক অপুষ্টিতে ভুগছে।
অবরুদ্ধ গাজায় একদিকে খাবারের অভাব, অন্যদিকে ইসরায়েলি বাহিনীর লাগাতার হামলা ও সহায়তা কেন্দ্রে গুলি চালানোর ঘটনায় একের পর এক প্রাণহানি ঘটছে। শনিবার ভোর থেকে বিভিন্ন স্থানে ইসরায়েলি হামলায় অন্তত ১১৬ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৩৮ জন যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) সহায়তা কেন্দ্রের সামনে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সহায়তা কেন্দ্রের সামনে ক্ষুধার্ত মানুষ খাবারের আশায় ভিড় করেছিলেন। তখনই ইসরায়েলি সেনারা ট্যাংক ও সাঁজোয়া গাড়ি নিয়ে এসে গুলি চালায়।
আরো পড়ুন : যুদ্ধবিরতিতে সম্মত সিরিয়া-ইসরায়েল
প্রত্যক্ষদর্শী মোহাম্মদ আল-খালিদি বলেন, আমরা পালাতে চেয়েছিলাম, কিন্তু হঠাৎ গুলি চালাতে শুরু করে। সব পরিকল্পিত। নিহতদের একজনের স্বজন মোহাম্মদ আল-বারবারি বলেন, এই সহায়তা কেন্দ্রগুলো এখন মৃত্যুকূপ। মানুষ আসে খাবারের জন্য, ফিরে যায় লাশ হয়ে।
আন্তর্জাতিক রেড ক্রস ও রেড ক্রিসেন্ট ফেডারেশনের মহাসচিব জগন চাপাগাইন সতর্ক করে বলেছেন, গাজায় ভয়াবহ দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। মানুষকে যেন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে এক মুঠো খাবারের জন্য ছুটতে না হয়।
খাদ্যপণ্য ও নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সঙ্কটে গাজার ২৩ লাখ মানুষের পক্ষে দৈনন্দিন পুষ্টি চাহিদা মেটানো দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। নরওয়েজিয়ান রিফিউজি কাউন্সিলের প্রধান ইয়ান এগেল্যান্ড বলেন, গত ১৪২ দিনে আমরা একটি ত্রাণ ট্রাকও গাজায় ঢোকাতে পারিনি। ইউরোপের নেতারা যা বলছেন, বাস্তবতা তার সম্পূর্ণ বিপরীত।
এদিকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, আমরা মিসরের সীমান্তে গাজার জন্য পর্যাপ্ত খাদ্য মজুত রেখেছি। কিন্তু ইসরায়েলি নিষেধাজ্ঞা সেই ত্রাণ ঢুকতে দিচ্ছে না। সীমান্ত খুলুন, আমাদের কাজ করতে দিন।
গাজার সিভিল ডিফেন্স জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলা ও সহায়তা বন্ধের কারণে মানবিক পরিস্থিতি প্রতিদিনই আরো ভয়াবহ হচ্ছে। আন্তর্জাতিক মহল এ অবস্থায় দ্রুত অবরোধ প্রত্যাহার ও নিরাপদ ত্রাণ প্রবেশের আহ্বান জানাচ্ছে। তবে এখন পর্যন্ত অবরোধ তুলে নেওয়ার কোনো ইঙ্গিত মেলেনি ইসরায়েলি প্রশাসনের কাছ থেকে।