কোটি টাকার গরু, ১৫ লাখের ছাগল নিয়ে সংসদে ক্ষোভ

কাগজ প্রতিবেদক
প্রকাশ: ২৫ জুন ২০২৪, ০৯:৩৮ পিএম

ছবি : সংগৃহীত
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেছেন, চাকরিতে নিয়োগের সময় সরকারি কর্মকর্তা-কর্মীদের হলফনামা দিতে হবে, কিন্তু তারা হলফনামা দেন না। এসময় তিনি প্রতি ৫ বছর অন্তর বা পদন্নোতির সময় হলফনাাম দেবার দাবি জানান। এ নিয়ম চালু করলে তাদের কি পরিমাণ আয় বা সম্পদ বাড়ছে তা জানা যাবে এবং দুর্নীতি কমবে।
মঙ্গলবার (২৫ জুন) জাতীয় সংসদে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সভাপতিত্বে প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
হানিফ বলেন, বর্তমান সরকারের জন্য দুর্নীতি সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দুর্নীতি আমাদের সব অর্জনকে ম্লাণ করে দিচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে বার বার বলেছেন এবং জিরো টলারেন্স ঘোষণা করেছেন। এখনো কিন্তু আমরা দুর্নীতি দমন করতে পারেনি। দুর্নীতির অবাধ প্রবাহ থাকলে কখনো বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হয় না, যেটা লক্ষ্য করা যাচ্ছে এখন।
তিনি বলেন, এবার কোরবানির ঈদে গরু ১ কোটি টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ গরুটা কারা কিনলো, কেন কিনলো। যাদের অবৈধ আয় আছে তারাই এটা নিশ্চয়ই কিনেছে। আবার ১৫ লাখ টাকায় অবৈধ আয়ধারীরা ছাগলও কিনেছে। এসব অনেকাংশে দুর্নীতির অর্থ।
তিনি বলেন, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে প্রধানমন্ত্রী সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করে বলেছিলেন আমরা দুর্নীতি বরদাস্ত করবো না। সরকারি কর্মচারীদের দফায় দফায় বেতন বাড়ানো, সুযোগ সুবিধা বাড়ানো হয়েছে, তারপরও কেন তারা দুর্নীতি করবে। অথচ দুর্নীতির কথা উঠলেই প্রথমেই আঙ্গুল তোলা হয় রাজনীতিবিদদের দিকে। অথচ একমাত্র মন্ত্রী ছাড়া কোনো সদস্যের নির্বাহী ক্ষমতা নেই, তাহলে তারা কিভাবে দুর্নীতি করবে?
আবার অনেক সময় বড় বড় কর্মকর্তারা বড় ধরনের দুর্নীতিতে জড়িত থাকলেও তাদের সামান্য পরিমাণ শাস্তি হয়। অথচ নন ক্যাডার কর্মচারীদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ উঠলে তাদের সরকারি চাকরিতে আর বহাল থাকতে পারে না। একজন জনপ্রতিনিধির বিরুদ্ধে মামলা হলে তাদের গ্রেপ্তারে কোনো পারমিশন লাগে না। কিন্তু সরকারি কর্মীদের একই অভিযোগে মামলা হয় তাহলে গ্রেপ্তার করতে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি লাগে। এই সরকারি কর্মকর্তা আইন ২০১৮ এটাই দুর্নীতি করতে উৎসাহিত করছে। আইনটি পুনঃবিবেচনার দাবি জানান হানিফ।
কালো টাকা সাদা করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এ বিধান দেশে অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। আজকে আমরা দেখলাম কালো টাকা সাদা করার প্রস্তাবনা থাকায় বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল সমালোচনা করেছে। তাদের লজ্জা হওয়া উচিৎ। বিএনপির চেয়ারপাসর্ন বেগম খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ৩৩ লাখ টাকা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন। তাদের অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমান সাহেব ৩১ লাখ টাকা দিয়ে কালো টাকা সাদা করেছিলেন। যে দলের নেত্রী প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় কালো টাকা সাদা করেছিলেন সে দলের পক্ষ থেকে এর বিরুদ্ধে সমালোচনা করা কোনো মতেই জাতির কাছে গ্রহণযোগ্য নয়।
আরো পড়ুন : শিক্ষিত জনগোষ্ঠী সচেতন থাকলে দেশ এগিয়ে যাবে : নাছিম
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বাজেটে আমরা আমি বৈধভাবে আয় করলে ট্যাক্স দিতে হবে ৩০ শতাংশ, কিন্তু প্রস্তাবিত বাজেটে অপ্রদর্শিত অর্থ মাত্র ১৫ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। যেটা আমার কাছে কোনোভাবেই যৌক্তিক মনে হয় না। যদি এ সুযোগ দিতেই হয় তাহলে ৩০ শতাংশ ট্যাক্স দিয়ে কালো টাকা সাদা করার দাবি জানান তিনি।
দফায় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এবিষয়ে সাধারণ গ্রাহকের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম এখন যথেষ্ট পরিমাণ সহনশীল পর্যায়ে আছে। সে সমস্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলো আছে সেগুলোর পুনঃচুক্তি করা হোক। তাহলে বিদ্যুতের দাম অনেকাংশে কমতে বাধ্য।
প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আরো আলোচনায় অংশ নেন এমপি মাহফুজুর রহমান, শফিকুল ইসলাম, আনার কলি পুতুল, মতিয়ার রহমান, সানোয়ারা বেগম, সৈয়দ এ কে একরামুজ্জমান, আব্দুল মোত্তালেব, শরিফুল ইসলাম, শামীম শাওনেওয়াজ প্রমুখ।