তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার দাবি জানালো সাইকেলিস্টরা

কাগজ ডেস্ক
প্রকাশ: ১০ অক্টোবর ২০২৫, ০৪:৩২ পিএম

ধূমপানমুক্ত সমাজ গড়ার দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে সাইকেল র্যালিতে তরুণদের অংশগ্রহণ।
সিগারেট কোম্পানিগুলো যুবসমাজকে ধূমপানের দিকে টানতে রেস্টুরেন্টে ধূমপানের বিশেষ স্থান তৈরি, বিক্রয়কেন্দ্রে বিজ্ঞাপন প্রদর্শন, প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচারণা এবং নিষিদ্ধ ই-সিগারেট বাজারজাতসহ নানা বেআইনি কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। বহুজাতিক এসব তামাক কোম্পানি রাষ্ট্রীয় আইন ভঙ্গ করে কিশোর-তরুণদের নেশায় আসক্ত করার কৌশল গ্রহণ করছে। এই পরিস্থিতি রোধে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন আরও কঠোর করার দাবি জানিয়েছেন দেশের বিভিন্ন সাইকেলিস্ট গ্রুপের সদস্যরা।
শুক্রবার (১০ অক্টোবর) সকালে রাজধানীর মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে মাদকদ্রব্য ও নেশা নিরোধ সংস্থা (মানস)-এর উদ্যোগে আয়োজিত ‘ইয়ুথ ফর হেলথ্: টাইম টু স্ট্রেনথদেন টোব্যাকো কন্ট্রোল ল’ শীর্ষক সাইকেল র্যালীতে এ দাবি জানানো হয়।
বক্তারা বলেন, দেশের মোট চিকিৎসা ব্যয়ের প্রায় ৭১ শতাংশ নাগরিকদের ব্যক্তিগতভাবে বহন করতে হয়, যার অন্যতম প্রধান কারণ তামাকজনিত অসুস্থতা। বাংলাদেশে প্রায় ৭০ শতাংশ অসংক্রামক রোগের মূল উৎস তামাক ব্যবহার। দেশের বড় অংশ তরুণ জনগোষ্ঠী; তাদের স্বাস্থ্যকর জীবনধারার সুযোগ নিশ্চিত না করা গেলে ভবিষ্যতে রাষ্ট্র ও অর্থনীতি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই সচেতনতার পাশাপাশি শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও এর কঠোর বাস্তবায়ন জরুরি।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে বিদ্যমান ‘ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন, ২০০৫’ সংশোধন ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে, তবে তামাক কোম্পানিগুলো নানা উপায়ে এর বিরোধিতা করছে বলে অভিযোগ করেন বক্তারা।
র্যালিতে অংশ নেন বিডি সাইকেলিস্ট, মোহাম্মদপুর সাইকেলিস্ট, হেমন্ত রাইডারস সাইকেলিস্ট গ্রুপের সদস্যরা, ভাইটাল স্ট্র্যাটেজি এর টোব্যাকো কন্ট্রোল প্রোগ্রাম ম্যানেজার, ডব্লিউবিবি ট্রাস্ট, ডাস, নাটাব এবং গ্রাম বাংলার প্রতিনিধিরা।
মানসের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন- আইনজীবী ও নীতি বিশ্লেষক এড. সৈয়দ মাহবুবুল আলম, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আমিনুল ইসলাম সুজন, ডব্লিউবিবি ট্রাস্টের হেড অব প্রোগ্রাম সৈয়দা অনন্যা রহমান, মোহাম্মদপুর সাইকেলিস্ট সদস্য ফয়সাল ইসলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাইকেলিস্ট গ্রুপের সদস্য প্রসেন্জিত বিশ্বাস। সঞ্চালনা করেন- মানসের প্রকল্প সমন্বয়কারী উম্মে জান্নাত এবং সিনিয়র প্রজেক্ট ও কমিউনিকেশন অফিসার মো. আবু রায়হান।
সৈয়দ মাহবুবুল আলম বলেন, “অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে সরকারের আন্তঃমন্ত্রণালয় উদ্যোগ প্রশংসনীয়। তবে তামাক যে এসব রোগের প্রধান কারণ, সেটি ভুলে গেলে চলবে না। তামাক কোম্পানিগুলোকে মানুষের ভোগান্তি ও মৃত্যুর জন্য জবাবদিহিতার আওতায় আনতেই হবে।”
আমিনুল ইসলাম সুজন বলেন, “তরুণদের মধ্যে তামাকের ক্ষতি সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে হবে এবং গণমাধ্যমসহ সকল স্তরে প্রচার বৃদ্ধি করতে হবে। একইসঙ্গে আইন সংশোধনের পদক্ষেপ দ্রুত বাস্তবায়ন করতে হবে।
অধ্যাপক ড. অরূপরতন চৌধুরী বলেন, কিশোর-তরুণদের মাদকাসক্তি দিনের পর দিন বাড়ছে, যার সূচনা হয় ধূমপান দিয়ে। আমরা সমাজ ও রাষ্ট্রের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সচেতনতা তৈরির চেষ্টা করছি, কিন্তু বারবার বাধার সম্মুখীন হচ্ছি। এখন আর তামাক কোম্পানিগুলোকে কোনো ছাড় দেয়া যাবে না।
উল্লেখ্য, প্রতিবছর দেশে তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে প্রায় ১ লাখ ৬১ হাজার মানুষ মৃত্যুবরণ করেন। তামাকের নেশায় অকালেই ঝরে যাচ্ছে অসংখ্য তরুণ সম্ভাবনা। মৃত্যুর এই মিছিল থামাতে এবং সুস্থ প্রজন্ম গড়তে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার কোনো বিকল্প নেই।